পাকিস্তান চেয়েছিল টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট ম্যাচ৷ তখন টি-টোয়েন্টি ছাড়া কিছুতেই সায় দেয়নি বিসিবি৷ সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের ফাঁকে একটা ওয়ানডেও খেলতে চলেছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
আগের অবস্থান থেকে একেবারে সরে বিসিবি পূর্ণ সফরে রাজি হয়ে যাওয়ায় সবাই বিস্মিত৷ নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে৷ সব প্রশ্নই যৌক্তিক৷
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- হঠাৎ কেন পাকিস্তানকে একটা ওয়ানডে ম্যাচ ‘বোনাস'ও দেয়া হলো? নিরাপত্তাঝুঁকি কি হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে?
অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে বড় গলায় প্রশ্ন তোলার ‘নৈতিক' অবস্থান আগেই হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ৷ নারী দল সফর করেছে, বয়সভিত্তিক দলও সফর শেষ করে ফিরেছে নিরাপদে; তারপর এমন প্রশ্নকে কিছুটা আরোপিত, কিছুটা রাজনৈতিক তো পিসিবি বলতেই পারে৷ আকারে-ইঙ্গিতে তা-ই বলছিল তারা৷
নিরাপত্তার ঝুঁকি যে আগের মতো নেই তা সাম্প্রতিক কয়েকটি সিরিজ সফলভাবে আয়োজন করে কিছুটা প্রমাণও করেছে পাকিস্তান৷
তবে এ কথা ঠিক যে, পাকিস্তান এখনো মোটেই জঙ্গিমুক্ত নয়৷ সন্ত্রাসী হামলা এখনো বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় অনেক বেশি হয় সেখানে৷
গত ৮ জানুয়ারিই ডন-এর এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর পিস স্টাডিজ (পিআইপিএস)-এর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ পিআইপিএস বলছে, ২০১৯ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ১৩ ভাগ কমেছে৷
২২৯ হামলায় ৩৫৭ নিহতের দেশ পাকিস্তানে ক্রিকেট!
নিরাপত্তার শঙ্কা নিয়েই অবশেষে পাকিস্তানে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল৷ পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা আগের তুলনায় কমেছে৷ তারপরও যত হামলা হয়েছে এবং যত মানুষ হতাহত হয়েছে, জানলে আতঙ্কিত হতে হয়৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
অবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর
শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)৷ এ সমফরে তিন দফায় তিনটি টি-টোয়েন্টি, একটি ওয়ানডে এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ৷ ২৪ ,২৫ ও ২৭ জানুয়ারি লাহোরে তিনটি ম্যাচ খেলে দেশে ফিরবে টি-টোয়েন্টি দল৷ তারপর রাওয়ালপিন্ডিতে ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম টেস্ট৷ তারপর ৩ এপ্রিল করাচিতে হবে একমাত্র ওয়ানডে৷ দুদিন পর সেখানেই শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট৷
ছবি: DW/A. Islam
মৃত্যু কমেছে
২০১৮ সালের তুলনায় পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগ কমেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
তারপরও ভয়াবহ চিত্র
আগের বছরের চেয়ে কমলেও ২০১৯ সালে মোট ২২৯টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে পাকিস্তানে৷ এসব হামলায় ৩৫৭ জন নিহত ও অন্তত ৭২৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পিআইপিএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
সবচেয়ে বড় আতঙ্ক যারা
পিআইপিএস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর দাপট দৃশ্যত বেশ কমেছে৷ তবে বেড়েছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) আর বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র হামলা৷ ২২৯টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫৮টি হামলা চালিয়েছে টিটিপি ও তার সহযোগী জঙ্গি সংগঠন৷ তারপরই ছিল বিএলএ৷ মোট ৫৭টি হামলা চালায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ttp
মরছে সবাই
২০১৯ সালের ২২৯টি হামলায় সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিক প্রায় সমান হারে নিহত হয়েছে৷ নিহত ৩৫৭ জনের মধ্যে ১৬৪ জন বেসামরিক নাগরিক, ১৬৩ জন নিরাপত্তা কর্মী আর বাকি ৩০ জন জঙ্গি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
বড় টার্গেট নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা
পিআইপিএস-এর প্রতিবেদন আরো জানাচ্ছে, ২০১৯ সালের মোট হামলার শতকরা ৫২ ভাগই হয়েছে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায়৷২২৯টি হামলার মধ্যে ১১৮টিই হয়েছে এসব জায়গায়৷
ছবি: Reuters/Stringer
যেখানে সবচেয়ে বেশি হামলা
সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে খাইবার পাখতুনে৷ সেই অঞ্চলে মোট ১২৫টি হামলায় ১৪৫ জন নিহত ও ২৪৯ জন আহত হয়৷দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০টি হামলা হয় উত্তর ওয়াজিরিস্তানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যেখানে
২০১৯ সালে সন্ত্রাসী হামলায় সবচেয়ে বেশি ১৭১ জন নিহত হয় বালোচিস্তানে৷
ছবি: DW/I. Ahmad
যেসব স্থানে খেলবে বাংলাদেশ
এ সফরে লাহোরে তিনটি টি-টোয়েন্টি আর রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ৷ লাহোর আর রাওয়ালপিন্ডি পাঞ্জাব প্রদেশে৷২০১৯ সালে মোট ৫টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এই প্রদেশে৷সফরের শেষ ধাপে করাচিতে একটি করে ওয়ানডে এবং টেস্ট ম্যাচ হবে৷ ২০১৯ সালে এই শহরে হয়েছে ১০টি হামলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
9 ছবি1 | 9
এটা বড় কোনো স্বস্তির খবর নয়, কারণ, পিআইপিএস পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছে, পাকিস্তানে মোট ২২৯টি হামলা হয়েছে ২০১৯ সালে, সেসব হামলা কেড়ে নিয়েছে ৩৫৭ জন মানুষের প্রাণ৷
এই বাস্তবতার মাঝেই অবশ্য কয়েকটি সিরিজ ভালোভাবে শেষ করেছে পিসিবি৷ এমনকি পাকিস্তানে যাদের দল প্রায় সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল, সেই শ্রীলঙ্কাও দু-দুবার দল পাঠিয়েছে ২২৯টি হামলার বছরেই৷
সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা দিতে পাকিস্তান সক্ষম এ কথা মানতে হবে৷
তাছাড়া দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড সফর চূড়ান্ত করার পর তো আর পিছিয়ে আসা যায় না৷ সফর হোক৷ তবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাক, এটাই সবার কামনা৷
এবার ফেরা যাক উড়ে এসে জুড়ে বসা ওয়ানডে ম্যাচটির প্রসঙ্গে৷ অনেকেই এই ম্যাচের কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছেন না৷
করাচির ওই ম্যাচটি যেন সুস্থ দেহে বড়সড় এক টিউমার৷ টেস্ট ম্যাচের ঠিক আগে আগে একটা মাত্র অনাকাঙ্খিত ওয়ানডেকে এর চেয়ে ভালো আর কী মনে হতে পারে?
কিন্তু বিসিবিকে হঠাৎ একটু ইতিবাচক অর্থে চতুর ভাবতে ইচ্ছে করছে৷ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পাকিস্তান সফরের সূচি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বলেছিলেন, মাশরাফি চাইলে তাকে এমনভাবে অবসর নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে, যে সুযোগ, যে সম্মান অতীতে কেউ পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না৷ খুব বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল কথাটা৷
তা টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট সিরিজের মাঝখানে পাকিস্তান না চাইতেই একটা ওয়ানডে ঢুকিয়েও তো বাড়াবাড়িই করেছে বিসিবি৷ এখন এই ‘অপ্রত্যাশিত' ম্যাচটিকেও কিন্তু অর্থবহ করে তোলা যায়৷এখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন মাশরাফী বিন মোর্তজা৷
বিসিবি কি তা ভেবেছে? ভেবে না থাকলেও ভাবার সুযোগ আছে৷
যে যেমন অবস্থান থেকে যত কথাই বলি না কেন, মাশরাফির তো এমন একটা সুযোগ প্রাপ্য! তাকে এ উপহার দিতেই পারে বাংলাদেশ৷
এক নজরে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা
নিঃসন্দেহে মাশরাফী ক্রিকেটের এক কিংবদন্তীর নাম৷ কিংবা বলা যেতে পারে একটি মিথ৷ কারণ, মাশরাফি মাঠে থাকলেই নাকি সতীর্থরা উজ্বীবিত বোধ করেন৷ চলুন এক নজর দেখে নিই তাঁর ক্যারিয়ারকে৷
ছবি: DW/N. Mohammad
নড়াইল এক্সপ্রেস
নড়াইলের সন্তান মাশরাফী৷ জন্ম ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর৷ পেস বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই সাড়া ফেলেন৷ তাই অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই বাংলাদেশের তৎকালীন অস্থায়ী ক্যারিবিয়ান বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কাড়েন৷ ডাক পড়ে ‘এ’ দলে৷ সেখানে খেলেন মাত্র এক ম্যাচ৷ তারপর? পরেরটা ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.K. Godhuly
টেস্ট অভিষেক
জীবনের প্রথম যে প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি ‘ম্যাশ’ খেলেছেন, সেটি হলো টেস্ট ম্যাচ৷ ৮ নভেম্বর, ২০০১-এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক৷ বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও ওই সুযোগেই ১০৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের জাত চেনান মাশরাফি৷ স্টুয়ার্ট কার্লাইল তাঁর প্রথম শিকার৷
ছবি: AP
টেস্ট ক্যারিয়ার
৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফী৷ এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাননি কখনো৷ তবে ৪ উইকেট নিয়েছেন চারবার৷ বোলিং গড় ৪১.৫২৷ ইকোনমি ৩.২৪৷ রান করেছেন ৭৯৭৷ সর্বোচ্চ ৭৯৷
ছবি: AP
ওয়ানডে অভিষেক
সেই সিরিজেই ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় মাশরাফীর৷ চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর৷ সেখানেও তৃতীয় ওভারেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের স্টাম্প উড়িয়ে দেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’৷ এরপর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের উইকেটও তুলে নেন৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ হারলেও মাশরাফি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
ওয়ানডে ক্যারিয়ার
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখনো ইতি টানেননি৷ ছয় মার্চ জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ২২০-তম ম্যাচ৷ ওয়ানডেতে মোট উইকেট ২৭০টি৷ ইকোনমি ৪.৮৮৷ ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার৷ ৪ উইকেট সাতবার৷ ব্যাট হাতে করেছেন ১৭৮৭ রান৷ সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫১৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
টি-টোয়েন্টি
৫৪টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ম্যাশ৷ উইকেট নিয়েছেন ৪২টি৷ রান করেছেন ৩৭৭৷ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন একবার৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.K. Godhuly
অধিনায়ক মাশরাফী
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী৷ ২০০৯ সালে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পান৷ ৮৮টি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে তাঁর অধিনায়কত্বে৷ এর মধ্যে ৫০টি জিতেছে এবং ৩৬টি হেরেছে৷ ২টির কোনো ফলাফল হয়নি৷ তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে জয়ের হার ৫৮ ভাগ৷ সফলতায় তার পরে আছেন সাকিব আল হাসান৷ তাঁর অধিনায়কত্বে জয়ের হার প্রায় ৪৭ ভাগ৷