1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর দেবে ফেসবুক-গুগল-ইউটিউব?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ এপ্রিল ২০১৮

আগামী বাজেটে ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউব করের আওতায় আসবে৷ সংবাদমাধ্যমের প্রস্তাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কীভাবে করবে আওতায় আনা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি৷

Facebook Messenger
ছবি: Imago/ZUMA Press

বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক বা গুগল কী পরিমাণ অর্থ আয় করে তার কোনো সঠিক জরিপ নেই৷ তবে সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কিছু সাক্ষাৎকারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে৷ আর তা থেকে বোঝা যায় যে বিজ্ঞাপনের বাজার ক্রমেই অনলাইন বিজ্ঞাপনের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার' চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন বছরে গড়ে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে৷ এই ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মূল জায়গা গুগল এবং ফেসবুক৷ বাংলাদেশ ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা দুই হাজার৷ তারা প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ব্যয় করেন৷ এছাড়া আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা জিডিটাল মার্কেটিং-এ ব্যয় করেন৷ আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়৷ এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পরিশোধ করা হয়৷

বাংলাদেশে ইউটিউব চ্যানেলও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ গান, নাটকসহ নানা বিনোদনের ভিডিও দিয়ে তরুণদের একটি অংশ ইউটিউব-এর সঙ্গে ‘প্রোফিট শেয়ারিং' করছেন৷ আবার ব্যক্তিগতভাবেও কেউ কেউ ফেসবুক পোস্টে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করছেন৷ যেসব ফেসবুক পেজের লাইক বা ফলোয়ার সংখ্যা লাখের বেশি তারা এই সুযোগ নিচ্ছেন৷ আবার কোনো অনলাইন প্রতিষ্ঠান সরাসরি তাদের আর্টিকেল, পণ্যের বিজ্ঞাপন অথবা কোনো বক্তব্য সরাসরি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফেসবুককে অর্থ দিয়ে ‘বুস্ট' করছেন৷ কিন্তু এই ব্যবসা বা লাভের কোনো অংশ সরকার পাচ্ছে না৷ সুতরাং কোনো করও পরিশোধ করা হচ্ছে না৷

ফাহিম নিজামী

This browser does not support the audio element.

বুধবার এনবিআর-এর সঙ্গে সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (নোয়াব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, ভিডিও দেখার সাইট ইউটিউব এবং সর্ববৃহৎ অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগলকে করের আওতায় আনার ঘোষণা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান৷ তিনি আগামী বাজেটেই এর প্রতিফলন থাকবে বলে জানান৷ তবে এই ঘোষণা এনবিআর চেয়ারম্যান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেননি৷ নোয়াব এবং অ্যাটকো কর্মকর্তাদের দাবির মুখে এই ঘোষণা দেন তিনি৷ নোয়াবের সভাপতি ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘‘বিশ্বে সংবাদপত্র পুরনো শিল্প৷ টেলিভিশন, অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলের কারণে পাঠক হারাচ্ছে সংবাদপত্র৷ ফলে এ শিল্পের বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমছে৷''

তিনি সংবাদপত্রের আয় কমে যাওয়ার জন্য উপদ্রব হিসেবে ফেসবুক বা ইউটিউব-এ বিজ্ঞাপন প্রচারকে দায়ী করে বলেন, ‘‘ফেসবুক বা ইউটিউব-এ প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ এ নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি৷ বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ফেসবুক অথবা ইউটিউব-এ প্রচারিত বিজ্ঞাপনের লাভের অংশ কীভাবে সরকার পেতে পারে৷ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ ফেসবুক, ইউটিউব থেকে সুযোগ আদায় করেছে৷ ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল থেকে রাজস্ব আয়ে কমিটি করলে তাতে সহযোগিতা লাগলে আমরা করবো৷''

গুগল ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গুগল বা ফেসবুকের কাছ থেকে সরাসরি কর আদায় করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশেও নিবন্ধিত হতে হবে৷ আর নিবন্ধিত হলেই তাদের ভ্যাট বা ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা যাবে৷ কিন্তু ঐ প্রতিষ্ঠানেগুলো বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয়৷ তাছাড়া এখনো তারা নিবন্ধনে আগ্রহী নয়৷''

ফাহিম মাসরুর

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউব-এর আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে৷ এই তিনটি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সিংহভাগ বিজ্ঞাপন দেয় ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান৷ ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর কিন্তু ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়ার কথা৷ তারা যে পরিমাণ টাকার বিজ্ঞাপন দেয়, তার বিপরীতে ভ্যাট- ট্যাক্স দিতে আইন অনুযায়ী বাধ্য৷ তারা সেটা দিচ্ছে কিনা এখন তা দেখার বিষয়৷ সেখানে নজরদারি বাড়ালে নিশ্চয়ই লাভ হবে৷''

ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যারা ‘বুস্ট' করেন তাদের ট্যাক্স সরকার কীভাবে পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যারা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তারা বছরে সর্বোচ্চ কত খরচ করতে পারবেন তার সীমা বেঁধে দেয়া আছে৷ তার বেশি তিনি খরচ করতে পারবেন না৷ তাই ইচ্ছেমতো কেউ চাইলেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ফেসবুক বা গুগলে বিজ্ঞাপন বা কোনো কিছু ‘বুস্ট' করতে পারেন না৷ তবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি বৈধ চ্যানেলের বাইরে লেনদেন করেন, তাহলে তা মানি লন্ডারিং৷ সেটা বেআইনি৷ আইন চাইলেই ধরতে পারে৷''

বাংলাদেশ একাধিকবার ফেসবুক-এর অ্যাডমিন প্যানেল বসানোর জন্য চেষ্টা করেও সফল হয়নি৷ কারণ বিটিআরসির প্রস্তাবের বিপরীতে একাধিক শর্ত জুড়ে দেয় ফেসবুক৷ সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠক হয়৷ সেই বৈঠকে বাংলাদেশে অ্যাডমিন প্যানেল খোলার পরিবর্তে অফিস খোলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় ফেসবুক৷ এছাড়া ২০১২ সালে গুগল ঢাকায় অফিস খোলার ঘোষণা দিলেও এখনো তা হয়নি৷ তারা বাংলাদেশের কান্ট্রি কনসালটেন্টকেও নিয়োগ দেয় সিঙ্গাপুরে৷ ইতিমধ্যে তারও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে৷

আরিফ নিজামী বলেন, ‘‘অনলাইন লেনদেন প্রতিষ্ঠান পেপল-ও নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশে আসতে রাজি হচ্ছে না৷ ফেসবুক, গুগলও পিছিয়ে গেছে৷ আমার মনে হয় যে যাই বলুক বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটিং-এর বাজার এখন বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি নয়৷ যদি অনেক বেশি হতো তাহলে গুগল, ফেসবুক আসবে না কেন? তারা তো ব্যবসা করে৷ ব্যবসা বড় হলে তারা নিশ্চয়ই আসত৷''

এ বিষয়ে এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও শুক্রবার তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ তবে বৃহস্পতিবার তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘কোন পদ্ধতিতে বা কীভাবে ফেসবুক-ইউটিউব-গুগলকে করের আওতায় আনা হবে, তা এখনও আমরা বের করিনি৷ তবে আমাদের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি, সেহেতু বাংলাদেশে এদের নিবন্ধন নিতে হবে৷ তবে কীভাবে নিবন্ধন হবে, সেটা দেখতে হবে৷ এ জন্য তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করবে৷'' এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে বলা হয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ এখন তাদের করের আওতায় আনা হবে৷ আসন্ন বাজেটে এর প্রতিফলন থাকবে৷''

চাকরির ওয়েবসাইট বিডিজবস ও ই-কমার্স সাইট ‘আজকের ডিল'-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গুগল, ফেসবুক বাংলাদেশ থেকে যে আয় করে, তা তারা অবৈধভাবে বা হুন্ডির মাধ্যমে নেয়৷ তাদেরকে বৈধভাবে ব্যবসা করতে বাধ্য করতে হবে৷ তারা যদি ভারতে নিবন্ধিত হয়ে অফিস খুলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কেন পারবে না? উবারকে যেভাবে বাংলাদেশে নিবন্ধন নিয়ে অফিস খুলে ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে, সেভাবেই কাডটা করতে হবে৷ তারা যদি বাংলাদেশে নিবন্ধন না নেয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক বা গুগল-এর বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘গুগল অথবা ইউটিউব-এর বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধন নেই, নেই অফিস, এমনকি ব্যাংক কাউন্টও৷ তার মানে, তাদের আর ধরা যাচ্ছে না৷ ট্যাক্স তো দূরের কথা, এই মাধ্যমে জঙ্গিবাদসহ নানা ধরনের অপপ্রচার হচ্ছে৷ ফেসবুককেও এ জন্যই বাংলাদেশ ধরতে পারছে না৷ কারণ তারা তো এ দেশের প্রতি কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ