যারা মনে করেন করোনার বিপক্ষে লড়াইটা সহজে সফল করতে পারে আধুনিক কোনো অ্যাপ, তাদের ভুল ভেঙে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের লুসিয়া, সিঙ্গাপুরের এডউইন এবং জার্মানির ফ্রান্সিসকার গল্প৷
বিজ্ঞাপন
লুসিয়া আবাসকাল স্যানফ্রান্সিসকোর একজন কন্টাক্ট ট্রেসার৷ তার কাজই হলো মানুষের সঙ্গে কথা বলে কেউ করোনায় সংক্রমিত কিনা তা জানা, সংক্রমিত হলে তাকে চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় নেয়া৷ সংক্রমণের ঝুঁকিতে যারা, তাদের কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করাও লুসিয়ার দায়িত্বের অংশ৷
ঘরে বসেই কাজ করেন লুসিয়া৷ তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলেন মোবাইলে৷ প্রতি জনের সঙ্গে ১৫ মিনিট করে কথা বলে সব তথ্য জেনে ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেভ করে রাখেন৷ কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেয়া হয় উপযুক্ত ব্যবস্থা৷ কোনো কোভিড অ্যাপ নয়, এক সময় এবোলার সংক্রমণ ঠেকানোয় সফল ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমেই দারুণ কাজ করে যাচ্ছেন লুসিয়া৷
একা কাজ করছেন না লুসিয়া৷ মহামারির বিরুদ্ধে একা আর কতটুকু করা যায়! মেক্সিকান বংশোদ্ভূত এই নারী স্যানফ্রান্সিসকোর ৪০ জনের একটা বিশেষ দলের সদস্য৷ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গড়া এই দল করোনা পরীক্ষা এবং করোনায় সংক্রিমতদের চিকিৎসার পাশাপাশি যাদের কোয়ারান্টিনে থাকার মতো জায়গা নেই তাদের হোটেল বা অন্য কোনো স্থানে রেখে খাবারও দিয়ে থাকে৷
অ্যাপ ব্যবহার না করার কারণ জানাতে গিয়ে লুসিয়া বলেন, ‘‘কেউ স্টারবাকসে গিয়েছে কিনা তা বলতে পারে অ্যাপ, কিন্তু পরীক্ষা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে কিনা, কিংবা তাদের পরিবার চালাতে কষ্ট হয় কিনা, তা বলতে পারে না৷ এ কাজে এমন জটিলতা আছে যা কোনো অ্যাপ এখনো ঠিক করে উঠতে পারে না৷’’
করোনা নজরে রাখার কয়েকটি অ্যাপ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার, কিউআর কোড ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
অস্ট্রেলিয়া
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ এর মাধ্যমে একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীর দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে আসার তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা৷ ব্লুটুথ ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে এই তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে৷ একজন ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত কারো সঙ্গে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকলে, সেই তথ্য বার্তা দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
চীন
নাগরিকদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহ করছে দেশটি৷ ‘আলিপে’ ও ‘উইচ্যাট’ অ্য়াপ ব্য়বহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে একটি কিউআর কোড পেয়ে থাকেন৷ বাসে, ট্রেনে, অফিসে, এমনকি নিজের বাড়িতে ঢুকতে এই কোড স্ক্যান করতে হয়৷ এভাবে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে সরকার৷ কোডের রং সবুজ হলে চলাফেরায় বাধা নেই, হলুদ হলে সাতদিন আর লাল হলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হয় নাগরিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/D. Qing
ইটালি
কেউ করোনা আক্রান্তের স্পর্শে এসেছেন কিনা, সেই তথ্য় জানতে অ্যাপ চালু করতে চায় ইটালি৷ সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ শত শত প্রস্তাব জমা পড়েছে৷ শিগগিরই তা চালু হবে৷ তবে এই অ্যাপ ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L. Bruno
দক্ষিণ কোরিয়া
‘কোভিড-১৯ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে করোনা রোগী ও যারা কোয়ারান্টিনে আছেন তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এছাড়া যারা হোম-কোয়ারান্টিন মানছে না ভবিষ্যতে তাদের হাতে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড পরানোর চিন্তা করছে দেশটি৷ কেউ এটি না পরলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং তার খরচ ঐ ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
ভারত
করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি জানতে ‘আরোগ্যসেতু’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন বলে সরকার জানিয়েছে৷ এগারোটি ভাষায় অ্যাপটি চালু হয়েছে৷ এই অ্যাপে করোনা নিয়ে সচেতনতা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের উপায়ও বলা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
জার্মানি
আপনি করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে অ্যাপল ও গুগল যৌথভাবে একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করছে৷ মে মাসে এটি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷ যদিও জার্মানি একই কাজের জন্য নিজ উদ্য়োগে ‘পিইপিপি-পিটি’ নামে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচনার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
6 ছবি1 | 6
এডউইন ফিলিপ এবং ফ্রান্সিসকা ভাইসও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো অ্যাপ ব্যবহার করছেন না৷ এডউইন ফিলিপ কাজ করছেন সিঙ্গাপুরে আর ফ্রান্সিসকা ভাইস জার্মানিতে৷
সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের কন্টাক্ট ট্রেসার এডউইনেরও মূল হাতিয়ার ‘হিউম্যন কন্টাক্ট ট্রেসিং’, অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সব তথ্য জেনে চিকিৎসা শুরু করার পদ্ধতি৷ এই প্রক্রিয়ায় সার্স ভাইরাসকে হারিয়েছিল সিঙ্গাপুর৷ চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার আরো কিছু দেশ অ্যাপকে দূরে রেখে শুধু এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই বাঁচাচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ৷
যুক্তরাষ্ট্রের লুসিয়া আর সিঙ্গাপুরের এডউইনের মতো জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের ফ্রান্সিসকাও কোরোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের ঝুঁকির বাইরে রাখছেন ট্রেসার হিসেবে কাজ করে৷ ২৫০০ সদস্যের এক দলের হয়ে কাজ করতে তাকে অবশ্য নিয়মিত অফিসে যেতে হয়৷
লুসিয়া কাজ করেন ঘরে বসে, এডউইনের কর্মস্থল হাসপাতাল আর ফ্রান্সিসকার কর্মস্থল বড় একটা অফিস৷ তবে কর্মস্থল ভিন্ন হলেও একটা জায়গায় তিনজনেরই খুব মিল৷ তিনজনের কেউই কোনো অ্যাপ ব্যবহার করছেন না৷