জার্মানিতে পরপর দুটি আর্থিক কোয়ার্টারে জিডিপি কমেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা, ডেস্টাসিস৷ এর মানে হচ্ছে, জার্মানি এখন মন্দার মধ্যে আছে৷
বিজ্ঞাপন
ডেস্টাসিস বলছে, এ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপি কমেছে ২.২ শতাংশ৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর এটাই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা৷ বিশ্লেষকরা অবশ্য় জিডিপি দুই শতাংশ কমতে পারে বলে আশা করছিলেন৷
এছাড়া গতবছরের চতুর্থ কোয়ার্টার, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে জিডিপি ০.১ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ডেস্টাসিস৷ এর আগে ঐ সময়ে শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল৷ শুক্রবার এই তথ্য সংশোধন করা হয়৷
করোনার কারণে এ বছরের দ্ৱিতীয় কোয়ার্টারে জিডিপি আরও বেশি কমতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে৷ কারণ করোনা, মোকাবিলা করতে মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের প্রথম পর্যন্ত জার্মানিতে সবকিছুতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল৷ ফলে আর্থিক কর্মকাণ্ড ও উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল৷ এই অবস্থায় কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ দ্বিতীয় কোয়ার্টারে জিডিপি ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমারও আশঙ্কা করছেন৷
জার্মানির অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি৷ ব্রেক্সিট ও মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রপ্তানি আদেশ ৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল, যা ১৯৯১ সালের পর সর্বোচ্চ৷
জার্মানিতে খুলেছে সেলুন
করোনাকালে কয়েক সপ্তাহের বিধিনিষেধ কাটিয়ে সোমবার থেকে জার্মানিতে খুলেছে সেলুন৷ তবে কাজ করতে হবে শারীরিক দূরত্বের সব বিধি মেনে৷
ছবি: DW/S. Kinkartz
শারীরিক দূরত্ব মানায় কড়াকড়ি
জার্মানির সেলুন ও বিউটি পার্লারের মালিক ও কর্মীরা এই দিনটির অপেক্ষাতেই ছিলেন৷ তবে সরকার সেলুন খোলার অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার যথাযথ নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ringhofer
মাস্ক না থাকলে কাটা হবে না চুল
চুল কাটার সময় নাপিত এবং ক্লায়েন্ট উভয়ের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷ চুল কাটতে অপেক্ষমানদেরও যতটুকু সম্ভব সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Belga/T. Roge
আগে চুল ধুয়ে তারপর কাট
সংক্রমণ এড়াতে জার্মানির বেশির ভাগ পার্লার নতুন একটি নিয়ম চালু করেছে৷ চুল কাটতে চাইলে আগে অবশ্যই চুল ধুয়ে নিতে হবে৷ যদিও চুলে যে তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা হয় সেটা ভাইরাস মারতে খুব একটি কার্যকর হবে না বলে মত অনেকের৷
ছবি: Colourbox/Marin Conic
খুশি সাধারণ মানুষ
বিশ্বজুড়ে লকডাউন অবস্থায় বাড়ন্ত চুল নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন, জার্মানিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ চুল কাটতে কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের দ্বারস্ত হয়েছেন, কেউ অনলাইনে নানা ভিডিও দেখে নিজে নিজেই চেষ্টা করেছেন৷ উপায় না পেয়ে পুরো মাথা ন্যাড়া করে ফেলতেও বাধ্য হয়েছেন অনেকে৷ সেলুন খোলায় তাই সব ধরনের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Frey
নারী কর্মী
জার্মানিতে সেলুন বা পার্লারে চুল কাটার কাজ নারীরাই বেশি করেন৷ ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, ওই বছর নতুন আরো সাত হাজার ১০০ জন নারী এ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন৷ যেখানে পুরুষের সংখ্যা দুই হাজার ৫০০৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Regovic
কম বেতন
সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পেশার একটি নাপিত৷ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা ছাড়া এ কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব না৷ কিন্তু নাপিতদের বেতন খুব কম৷ একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির সব ধরনের হেয়ারড্রেসারদের মধ্যে ১৬ শতাংশের গড় বেতন মাসে ৪৫০ ইউরোর কম৷ অথচ এই খাতে বার্ষিক টার্নওভার ৭০০ কোটি ইউরোর বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
6 ছবি1 | 6
অবশ্য জার্মানির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার বলছেন, বিধিনিষেধ শিথিল করায় অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসতে শুরু করেছে৷
২০২০ সালে জার্মানির জিডিপি ৬.৬ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা৷ সেটা হলে ১৯৭০ সাল থেকে হিসাব রাখা শুরুর পর এটিই হবে জার্মানির সবচেয়ে খারাপ মন্দা৷
কোয়ারান্টিনের নিয়ম শিথিল করছে জার্মানি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, শেঙেনভুক্ত দেশ ও ব্রিটেন থেকে জার্মানিতে আসা ভ্রমণকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিনের নিয়ম শিথিল করা হবে বলে শুক্রবার জানিয়েছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বেশি সেসব এলাকা থেকে আসা ভ্রমণকারীদেরই শুধু কোয়ারান্টিনের পরামর্শ দেয়া হবে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। তবে কীভাবে তা নির্ধারণ করা হবে, সে ব্যাপারে এখনও কাজ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইইউর বাইরে থেকে আসা ব্য়ক্তিদের জন্য দুই সপ্তাহের বাধ্যতামুলক কোয়ারান্টিনের নিয়ম চালু থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ,রয়টার্স)
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷