1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় জীবন-মরণ সংকটে যারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ আগস্ট ২০২১

করোনায় বাংলাদেশে যৌনকর্মীরা সবচেয়ে সংকটে আছেন। তারা চাইলেও এখন আর কাজ পাচ্ছেন না। তাদের কাছে তাই করোনার গত ১৬ মাসই ‘লকডাউন'।

ছবি: DW

বাংলাদেশে নিবন্ধিত যৌনপল্লী ১০টি। এই করোনায় তারা সেখানে অবস্থান করলেও যাদের নিবন্ধন নেই, যারা ভাসমান, তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। খাদ্য সংকটে পড়েছেন সবাই। এর সঙ্গে আছে চিকিৎসা ও ওষুধ সংকট। কাজ নেই। কবে তারা কাজ শুরু করতে পারবেন তারও নিশ্চয়তা নেই

১০টি  নিবন্ধিত যৌনপল্লিতে এখন প্রায় আট হাজার মানুষের বসবাস। তার মধ্যে ৩০ ভাগের মতো শিশু-কিশোর। অন্যান্য সংকটের মধ্যে শিশুখাদ্যের সংকট প্রকট বলে জানান মোংলার বানিশান্তা যৌনপল্লীর রাজিয়া বেগম।

তিনি জানান, ওই পল্লীতে ৯০০ জনের মতো রয়েছেন। তার মধ্যে ২৫০ জন শিশু-কিশোর। রাজিয়া বেগম বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউন শুরুর পর আমাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। তা দিয়ে আমরা কোনোভাবে বেঁচে গেছি। কিন্তু এ বছর মাত্র দুইদিন আগে আমাদের ৫ কেজি করে চাল ও তেল দিয়েছে। আমাদের কোনো আয় নেই। এখন তো আর কোনো ক্লায়েন্ট আসে না। বাইরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।”

তিনি জানান, প্রথম দিকে তারা ধার-দেনা করেছেন। কিন্তু এখন অনেক ঋণ হয়ে গেছে। ধারও এখন পাওয়া যায় না। কারণ, সবার অবস্থাই খারাপ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন তাদের তেমন গুরুত্ব দেয়না বলে তাদের অভিযোগ। পল্লীতে যাওয়ার রাস্তাটিও নষ্ট হয়ে গেছে বহুদিন। মেরামত করার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।

রাজিয়া বেগম

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে ১০টি যৌনল্লীর অবস্থান মোংলা, বাগেরহাট, যশোর, পটুয়াখালী, দৌলতদিয়া, ফরিদপুর,জামালপুর ও টাঙ্গাইলে।

রাজিয়া বেগম একই সঙ্গে ‘দুর্জয় নারী' নামে যৌনকর্মীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কয়েকদিন আগে তারা বিভিন্ন পল্লীর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল মিটিং করেছেন। তিনি জানান, ‘‘সবার অবস্থাই খারাপ। কেউই তেমন কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।’’

টাঙ্গাইলের পল্লীতে আছেন পাঁচশ’ মানুষ। তার মধ্যে একশ’  শিশু। সেখানকার আঁখি বেগম জানান, ঈদের আগে তাদের মোট সাড়ে পাঁচ টন চাল দেয়া হয়েছে, আর কিছু না। তিনি বলেন, ‘‘খালি চাল কি খাওয়া যায়? আমাদের অনেক কষ্ট। বিশেষ করে শিশুরা অনেক কষ্টে আছে। আমাদের এখন না খেয়েও থাকতে হয়।”

দৌলতদিয়ায় আছেন এক হাজার ৩০০। তবে সেখানকার অবস্থা অন্যান্য পল্লীর চেয়ে ভালো বলে জানান ঝুমুর বেগম। ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজির উদ্যোগে নিয়মিত ত্রাণ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তনি। কোরবানির সময় গরু কোরবানির ব্যবস্থা করেছেন তিনি। ঈদের সময় সেমাই চিনির ব্যবস্থা করেছেন। তবে তাদের আয় নেই- এটাই বড় সমস্যা।

ঝুমুর বেগম বলেন, ‘‘এখানে চিকিৎসা-সংকট আছে। শিশুরাও আছে নানা সংকটে। আমাদের আয় না থাকায় ত্রাণের ওপর চলতে হচ্ছে। এর বাইরে কোনো উপায় নেই। আগে একজনের দিনে আয় ছিল কমপক্ষে এক হাজার টাকা। এখন আয় নেই, তারপরও ঘর ভাড়া দিতে হয়। আবার অনেকে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের টাকা পাঠাতেন, তা-ও এখন আর পারছেন না।’’

১৯৯৭ সাল থেকে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করছে মানব প্রগতি সংঘ। প্রতষ্ঠানটির প্রধান  মাহমুদা শেলি বলেন, ‘‘পল্লীগুলোর ভেতরে কিছু ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। তারা বাইরে গিয়ে কোনো সহায়তা নিতে পারেন না।  তবে এরমধ্যে টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি পল্লীর অবস্থা বেশ খারাপ। আর আমরাও করোনার জন্য তাদের জন্য কিছু করতে পারছি না।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই করোনায় তাদের কোনো কাজ নেই। তারা তো বাইরের আর কোনো কাজ করতে পারেন না। সমাজও তাদের গ্রহণ করে না। ফলে তাদের সংকট অনেক বেশি।’’

ঝুমুর বেগম

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশের  প্রায় সব শ্রেণির মানুষই করোনায় কম-বেশি সংকটে আছেন। দেশে নতুন করে দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে গেছেন। হোটেল ও পরিবহণ শ্রমিক, ক্ষুদ্র দোকানদারসহ যারা দিন আনেন দিন খান, তারা আছেন সবচেয়ে বেশি সংকটে। বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘‘করোনায় ৩০ লাখ হোটেল শ্রমিক আয় হারিয়েছেন। তারা অন্য পেশায়ও যেতে পারছেন না। তাদের জন্য কোনো সহায়তাও নেই।”

সিপিডির অর্থনীবিদ ড. খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, ‘‘সরকার এই করোনায় নানাভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করছে। তারপরও অনেকে বাদ পড়ছেন। তাই বিভিন্ন সেক্টর ধরে ধরে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা দরকার। বিশেষ করে যৌনকর্মীদের পেশাজীবী হিসেবে বিবেবচনা করে তাদের জন্য নিয়মিত সহযোগিতার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই পেশাটি বিশেষ ধরনের হওয়ায় করোনা শেষ হয়ে গেলে তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা এখনই নেয়া প্রয়োজন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ