দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এমন অবস্থায় আর পড়েনি জাপান৷ গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এশিয়ার দেশটির অর্থনীতি সাত দশমিক আট ভাগ সংকুচিত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সারা বিশ্বে যেখানে দুই কোটি ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত সেখানে জাপানের ৫৫ হাজারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা৷ সারা বিশ্বে সাত লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মৃত্যুর বিপরীতে জাপানে মৃতের সংখ্যাও খুব কম- মাত্র এক হাজার ৮৮৷ তবে করোনাকালে বড় শঙ্কার মুখে পড়েছে সে দেশের অর্থনীতি৷
করোনা সংকট শুরুর আগেই অবশ্য খারাপের দিকে যাচ্ছিল জাপানের অর্থনীতি৷ তবে করোনার প্রভাবে মন্দা দেখা দেয়ার আশঙ্কা বাড়ছিল৷ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সে আশঙ্কা আরো বাড়িয়েছে৷
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশের অর্থনীতি রেকর্ড সাত দশমিক আট ভাগ সংকুচিত হওয়ার প্রভাব শেয়ার বাজারেও পড়ছে৷ সোমবার নিকেলের সূচক শূন্য দশমিক ৮৩ ভাগ নেমে যায়৷ সূচক শূন্য দশমিক ৮৪ ভাগ নেমে যায় টপিক্সের৷
এদিকে মোট দেশজ উৎপাদনও দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে খুব বেশি হারে কমেছে জাপানে৷ ওই তিন মাসে দেশজ উৎপাদন কমেছে ২৭ দশমিক আট শতাংশ৷
এছাড়া ভোক্তা ব্যয়ও ব্যাপক হারে কমেছে৷ এর প্রভাবও পড়ছে অর্থনীতিতে৷ জাপানের অর্থনীতি ভোক্তা ব্যয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল৷
এসিবি/ কেএম (এএফপি, রয়টার্স)
করোনায় জাপানের ‘গেইশাদের’ দুর্দশা
জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিল্পীগোষ্ঠী ‘গেইশা’৷ জাপানি কিমোনো গায়ে এবং ওশিরই মেকআপ দিয়ে নেচে-গেয়ে তারা দর্শকদের মন ভোলান৷ কিন্তু এরই মধ্যে দুর্লভ হয়ে ওঠা এ শিল্পকর্ম করোনা মহামারিতে পড়েছে বড় হুমকিতে৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
হুমকিতে গেইশাদের পেশা
টোকিওর আকাসাকা জেলায় গেইশাদের নেতা ইকুকো৷ ১৯৬৪ সালে অলিম্পিক আয়োজনের সময় তিনি রাজধানী টোকিওতে আসেন৷ তখন থেকে অনেক শিক্ষানবীশ গেইশাকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি পালটে গেছে বলে মনে করেন ইকুকো৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব
কয়েক মাস ধরে জরুরি অবস্থা, লকডাউন, ইত্যাদির কারণে হোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ, পর্যটনও প্রায় থেমে রয়েছে৷ ফলে বিনোদনের প্রতি মানুষের আগ্রহও এখন কম৷ এখন মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্বও৷ ইকুকো বলছিলেন, এত কিছু মেনে তাদের পক্ষে কাজ করাটা আসলেই দুরুহ৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
কমছে দর্শক, কমছে গেইশাও
ঐতিহ্যবাহী গেইশা পারফর্ম্যান্সে ছোট কক্ষে অনেকের গাদাগাদি করে বসার নিয়ম৷ কিন্তু এখন তা সম্ভব না বলে আগ্রহী দর্শকের সংখ্যা কমেছে৷ অন্যদিকে অর্থ উপার্জন না হওয়ায় অনেকে গেইশা হতেও আগ্রহ হারাচ্ছেন৷ ইকুকো যখন নাম লেখান, তখন আকাসাকাতেই গেইশা ছিলেন ৪০০ জন, এখন রয়েছেন কেবল ২০ জন৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
নতুন নিয়ম
গেইশারা এমনিতে দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে কথাবার্তা ও আলোচনার মাধ্যমে পারফর্ম করে থাকেন৷ কিন্তু এখন ক্রেতাদের স্পর্শ করা, এমনকি তাদের গ্লাসে পানীয় ঢেলে দেয়াও নিষেধ৷ যে-কোনো পারফর্ম্যান্স করতে হবে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে৷ মাস্ক পরাটাও গেইশাদের পরচুলা ও মেকআপের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
অনুভূতিহীনতা
মজার মজার কথার জন্যও গেইশারা বিখ্যাত৷ তারা একই সঙ্গে নানা বিনোদনে মাতিয়ে রাখেন, পাশাপাশি বুদ্ধিদীপ্ত আলাপে মুগ্ধ করেন দর্শকদের৷ কিন্তু মানুষের কাছে যেতে না পারলে তাদের অনুভূতি বোঝা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন ইকুকো৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
অন্যরাও বিপদে
জাপানের সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে কেবল গেইশারাই বিপদে রয়েছেন, এমনটা নয়৷ প্রাচীন নৃত্য জিউতামাই শিল্পীরাও একই ধরনের অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ পাশাপাশি এই শিল্পগুলোর সঙ্গে মেকআপ ও পোশাক ডিজাইন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকায় সেসব পেশাজীবীরাও পড়েছেন সংকটে৷ মেকআপ আর্টিস্ট মিৎসুনাগা কান্দা বলছিলেন, গত কয়েক মাসে তার সমস্ত ইভেন্ট বাতিল হয়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
সরকারি-বেসরকারি সাহায্য
গেইশাদের আয় গত কয়েক মাসে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে৷ তবে করোনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান সরকার৷ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গেইশারাও ১০ লাখ ইয়েন (প্রায় আট লাখ টাকা) ভর্তুকি হিসেবে পাবেন৷ পাশাপাশি গেইশাদের সমিতি সহায়তা করছে বাড়িভাড়া দিতেও৷
ছবি: Reuters/Kim Kyung-Hoon
সামনে কেবলই হতাশা?
গেইশাদের প্রশিক্ষণ যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি কিমোনো কেনা এবং মেকআপ করানোর খরচও অনেক৷ ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় নতুন করে অনেকেই আর গেইশা হতে আগ্রহ পাচ্ছেন না৷ পাশাপাশি করোনার প্রকোপ চলতে থাকলে বর্তমান গেইশাদের অনেকেও পেশা বদলে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে আশঙ্কা ইকুকোর৷