কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নেওয়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ তবে এর মধ্যেও কিছু স্টার্টাআপ কোম্পানি জমজমাট ব্যবসা করছে৷
বিজ্ঞাপন
স্কেলেটর ও হ্যান্ডরেলিং জীবাণু মুক্ত করা
বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ স্কেলেটর ব্যবহার করেন৷ নানা মানুষের ছোঁয়ায় স্কেলেটরের বেল্ট ও হ্যান্ডরেলিংগুলো জীবাণুর আড্ডাখানায় পরিণত হয়৷ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ানো করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে যা আরো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অনেকে রেলিং না ধরে এগুলো ব্যবহার করছেন৷ যা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ৷ কারণ চলন্ত অবস্থায় এভাবে উঠতে গিয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা৷
করোনা ভাইরাস: ইউরোপের কোথায় কেমন ‘লকডাউন’?
কোভিড-১৯ যেন ছড়াতে না পারে, সেজন্য ইউরোপের সর্বত্র জনজীবনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই কড়াকড়িগুলো কেমন? চলুন দেখে নিই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ben Ari
ইটালি
ইটালিতে গত ৯ মার্চ সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ এর ছয় কোটি জনগোষ্ঠীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়৷ অন্যথায় চারশ’ থেকে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে৷ সুপারমার্কেট, ব্যাংক, ফার্মেসি ও পোস্ট অফিস ছাড়া বাকি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আপাাতত এই ঘোষণা ৩ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকলেও তা ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে৷
ছবি: Imago Images/Zuma Wire
স্পেন
গত ১৪ মার্চ সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ দেশের চার কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়৷ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা কার্যকর থাকবে৷ হাজার হাজার পুলিশ ও সেনাবাহিনি মোতায়েন করা হয়েছে৷ স্পেনও তার ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে৷
ছবি: AFP/J. Jordan
ফ্রান্স
ফ্রান্সে ১৭ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত৷ কিন্তু বাড়ানো হতে পারে৷ ঘর থেকে বেরোতে হলে একটি ফর্ম পূরণ করে কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়৷ দিনে একবার শরীরচর্চা করতে এক ঘন্টার জন্য একা বের হওয়া যাবে৷ এছাড়া ঘরের এক কিলোমিটারের মধ্যে হেঁটে আসা যাবে৷ না মানলে ১৩৫ ইউরো থেকে ৩৭০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা৷
ছবি: Getty Images/G. Souvant
জার্মানি
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানি তার ৮ কোটি জনগণের জন্য অত কড়াকড়ি আরোপ করেনি৷ তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে নিয়ম করে দিয়েছে, যেমন, ঘরের বাইরে ভিন্ন পরিবারের দু’জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা না মানলে কোনো কোনো রাজ্য ২৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে৷
ছবি: DW/M. Müller
যুক্তরাজ্য
২৩ মার্চ লকডাউনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য৷ চলবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ বা যাদের অফিসে যেতেই হবে তারা বাইরে যেতে পারেন৷ তবে কোনর কাগজ দেখাতে হবে না৷ বড় আকারের জমায়েত বন্ধ রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/R. Pinney
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়াও কিছুটা শিথিল৷ ৯০ লাখ মানুষের দেশটিতে গত ১৬ তারিখ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, যা বলবৎ থাকবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত৷ মানুষ জরুরি কাজে কিংবা শরীরচর্চা করতে ঘরের বাইরে যেতে পারবেন৷ তবে পাঁচ জনের বেশি একসঙ্গে থাকতে পারবেন না৷ অন্য দেশগুলোর মতো তারাও সব রেস্টুরেন্ট, বার এসব বন্ধ রেখেছে৷ কেউ নিষেধাজ্ঞা না মানলে ৩৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে৷
ছবি: AFP/H. Neubauer
বেলজিয়াম
গত ১৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল অব্দি লকডাউন ঘোষণা করে বেলজিয়াম৷ তবে তা আট সপ্তাহ বা এর বেশিও হতে পারে৷ এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশটিও ডাক্তার দেখানো, জরুরি কাজ, কিংবা হালকা শরীরচর্চা ছাড়া জনগণকে ঘরেই থাকতে বলেছে৷ রাস্তায় পুলিশ টহল দিচ্ছে৷ তারা নিয়ম না মানলে যে কাউকে জরিমানা করতে পারে৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
পর্তুগাল
১৯৭৬ সালে গণতন্ত্র ফেরত পাবার পর এই প্রথম জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ ২ এপ্রিল পর্যন্ত থাকবে তা৷ জরুরি অবস্থার আওতায় সরকার সেনা মোতায়েনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামসহ বেশিরভাগ বিষয়ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ লোকজনকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে৷ ব্যাংক, ফার্মেসি ও খাদ্যদ্রব্যের দোকান খোলা রয়েছে, তবে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Franca
8 ছবি1 | 8
এই অবস্থাকে পুঁজি করে ক্যাথারিন ওবলাডেন এবং তানজা নিকেল আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে এগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার উপায় বাজারে নিয়ে এসেছেন৷ তারা স্কেলেটরের নিচে বসানোর জন্য ছোট একটি ইউভিলাইট বক্স তৈরি করেছেন৷ সেই লাইট থেকে বের হওয়া আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি স্কেলেটরের ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস ও ভাইরাস মেরে ফেলবে৷
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের লাইট কতটা কার্যকর তা এখনো নিশ্চিত নন বলে স্বীকার করেন ওবলাডেন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা এখনো তাদের আবিষ্কৃত যন্ত্রটি গবেষণাগারে পরীক্ষা করাতে পারেননি৷
২০১০ সালে যখন সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল তখন নিকেল এবং ওবলাডেন দুজনই শিক্ষার্থী ছিলেন৷ তখনই প্রথম তাদের মাথায় জনসমাগমপূর্ণ স্থান জীবাণুমুক্ত করার পরিকল্পনা আসে এবং দুইজনে একসঙ্গে কাজ শুরু করেন৷ ২০১৬ সালে তাদের এই পরিকল্পনা একটি স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা জেতে এবং তারা কোলনের একটি ইউভিআইএস কোম্পানির সহায়তায় যন্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেন৷
তাদের এ যন্ত্রের চাহিদ দ্রুত বাড়ছে জানিয়ে ওবলাডেন বলেন, ‘‘এশিয়ায় দেশগুলোতে চাহিদা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে৷ খুব শিগগিরই সিঙ্গাপুরে আমারদের প্রথম চালান যাবে৷
‘‘আমাদের গুদাম খালি হয়ে গেছে৷ স্থায়ী পাঁচ কর্মী দিনরাত পরিশ্রম করেও চাহিদা মেটাতে পারছেন না৷ তাই আমরা অস্থায়ীভাবে বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দিয়েছি৷''
শপিং ট্রলির জন্য বিশেষ সুরক্ষা পরত
নিকেল এবং ওবলাডেনের কোম্পানির আরো একটি আবিষ্কারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ বছরের শুরু তারা পণ্যটির উৎপাদন শুরু করেন৷ শপিং ট্রলি জীবাণুমুক্ত রাখতে সেটির উপর বাড়তি সুরক্ষা পরত দেয়া৷ বর্তমান পরিস্থিতে যেটি ‘হটকেকে' পরিণত হয়েছে৷ কোলনের কয়েকটি সুপারমার্কেট এটি ব্যবহার করা শুরু করেছে বলেও জানান ওবলাডেন৷
করোনা থেকে বাঁচতে যা কিছু সাবধানে ধরবেন
কোন কোন জিনিসে করোনা ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে? কোন জিনিসগুলোতে বুঝেশুনে হাত দিতে হবে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
দরজার হাতল
গবেষণা বলছে, দরজার হাতলে পাঁচ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। সুতরাং, সাবধান! সব সময় পরিষ্কার রাখুন দরজার হাতল। অথবা হাত দিলে সেই হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নিন।
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst/F. Gabbert
চামচ
আপনার এলাকায় এখনো রেস্তোরাঁ বা অফিসের ক্যাফেটেরিয়া খোলা আছে? করোনার আতঙ্কের এই সময়েও সেখানে খেতে হয়? তাহলে চামচ বা কাঁটাচামচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। অনেকেই বলছেন, করোনায় সংক্রমিত কেউ ব্যবহার করলে চামচে অনেকক্ষণ জীবাণু থেকে যেতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
টেডি বিয়ার
এমনিতে টেডি বিয়ার নিরাপদ। এমন খেলনার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকির কথা কোনো গবেষণায় উঠে আসেনি। তবে খেলনা তৈরিতে প্লাস্টিক, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
প্যাকেট, চিঠি ইত্যাদি
যুক্তরাষ্ট্রের রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরির এক গবেষণা বলছে, কার্ডবোর্ড বা কাগজে তৈরি কোনো দ্রব্যে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে করোনা ভাইরাস।
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Weller
পোষা প্রাণীতেও ঝুঁকি?
না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে পোষা প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কথা এখনো গবেষকরা নিশ্চিত করে বলেননি।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Tarantino
ফলমূল, শাকসবজি
না, ভালো করে ধুয়ে নিলে ফলমূল, শাক সবজির মাধ্যমেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই। সুতরাং প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করে নিশ্চিন্তে খান।
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
ফ্রোজেন ফুড
করোনা ভাইরাস তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নীচে নেমে গেলেও তরতাজা থাকে। সুতরাং ফ্রিজে রাখা প্যাকেটজাত খাবার খুব ভালো করে গরম না করে একদম খাবেন না।
ছবি: picture-alliance /imageBROKER/J. Tack
7 ছবি1 | 7
তাদের এই জীবাণুনাশক পরত কাঁচ, ধাতব বস্তু ও প্লাস্টিকের উপর কার্যকর৷ তবে নিজে নিজে নয় বরং অবশ্যই পেশাদার লোক দিয়ে এই জীবাণুনাশক পরত লাগাতে হবে৷
‘‘এটার চাহিদা সত্যি ভীষণ বেড়ে গেছে৷ বিশেষ করে জার্মানিতে৷ চাহিদা মেটাতে আমাদের কোটিং ক্রদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে৷ এই সংকট আমাদের ব্যবসার জন্য আশির্বাদ৷ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি কেউ গুরুত্ব দিত না৷''
শিক্ষামূলক অ্যাপ ও গেমস
করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে আরো একটি ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছে৷ সেটা হলো অ্যাপস ও গেমসের মাধ্যমে শিশুদের ঘরে বসে শিক্ষা দান৷ করোনা আতঙ্কে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সবার আগে বন্ধ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকদিন ধরে শিশুরা বাড়িতেই আছে৷ করোনা আতঙ্ক বোঝায় বয়সও তাদের হয়নি ৷ তাই বাড়িতে তাদের বিনোদনের জন্য বাবা-মাকে এখন অনলাইনে নানা অ্যাপস ও গেমসের সাহায্য নিতে হচ্ছে৷ তাতেই এ ধরনের সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে৷ ‘স্কিলফরস্কুল' বা ‘শেয়ারজোন' মত অ্যাপের দর্শক রকেটগতিতে বাড়ছে৷
শেয়ারজোনের নিলস সায়েকার্ট বলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন গড়ে আমাদের নতুন গ্রাহক বাড়তো ৩০০ থেকে ৫০০ জন৷ কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে পাঁচ/ছয় গুণ হারে নতুন গ্রাহক বাড়ছে৷''
যতদিন স্কুল বন্ধ থাকবে তাদের গ্রাহক এই হারে বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি৷