1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভ্যাকসিন পেতে ‘সব পথ খোলা’ রেখেছে বাংলাদেশ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৯ আগস্ট ২০২০

পরীক্ষার শেষ ধাপে থাকা ভ্যাকসিনের সবগুলো উদ্যোগের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ৷ এমনকি ‘ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলও' চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক৷

Sputnik V Coronavirus Impfstoff Russland
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap

বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনার পর সম্প্রতি চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ সবশেষ শুক্রবার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস৷ সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান

শুধু এই দুটি নয় চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষায় থাকা এবং সম্ভাবনাময় সবগুলো ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্যই পথ খোলা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা৷ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন পেতে সরকার সব পথই খোলা রেখেছে৷ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যারাই দিতে চাচ্ছে তাদের স্বাগত জানাচ্ছে৷ এগুলোর কোনটি যদি সফল হয় তাহলে তো খুবই ভালো৷ বিশেষ করে বিনা পয়সায় বা কম মূল্যে যদি পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে৷’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সাতটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন এখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে৷ এর বাইরে সম্প্রতি রাশিয়া তাদের ভ্যাকসিন কার্যকর দাবি করে তার অনুমোদন দিয়েছে৷ যদিও দেশটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার কোন তথ্য প্রকাশ করেনি৷ সরকার ভ্যাকসিন আবিস্কারের পথে এগিয়ে থাকা সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে বলে দাবি করেন ডা. মুশতাক৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিকভাবেও সরকার চেষ্টা করছে৷ যেমন ধরেন রাশিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যে নেই৷ কিন্তু তাদের ভ্যাকসিন পেতেও সরকার যোগাযোগ রাখছে৷ আসলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল যারা করবে তারাই সুবিধা পাবে৷ সবগুলো অপশনই খোলা আছে৷ আসলে আমরা তো জানি না, কার্যকর ট্রায়াল কোনটা হবে৷ ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল ভালো এই কারণে যে, ওই টিকা কার্যকর হলে তখন আমাদের আর ট্রায়াল করতে হবে না৷ নতুবা বাইরের কোন টিকা আমরা নিলে সেটা ট্রায়াল করেই দিতে হয়৷ 

তিনি জানান, এক দেশের জন্য ভ্যাকসিন নিরাপদ হলে অন্য দেশে তা নাও হতে পারে৷ ফিলিপাইন্সে পরীক্ষা ছাড়াই শিশুদের উপর একটি টিকা প্রয়োগের পর অনেকে মারা গিয়েছিল৷  ডা. মুশতাক বলেন, ‘‘ওই টিকা কিন্তু আমাদের দেশেও প্রয়োগ করার কথা ছিলো৷ কিন্তু ফিলিপাইনের ঘটনার পর দ্রুত সেটা বাতিল করা হয়৷’’

সালমান এফ রহমান

This browser does not support the audio element.

বেক্সিমকোর সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি

সর্বশেষ শুক্রবার সেরাম ইনস্টিটিউটি অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটি৷ বর্তমানে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে৷ এই টিকার ১০০ কোটির বেশি ডোজ উৎপাদন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য এসআইআই ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং গেটস ফাউন্ডেশন ও গ্যাভির সঙ্গে আংশীদারিত্বে পৌঁছেছে৷

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চুক্তির মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হয়ে গেল, বাংলাদেশেও এই ভ্যাকসিনগুলো আমরা আনতে পারব৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আগে থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য ‘বুকিং’ দিয়ে রাখছে৷ এখন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই ভ্যাকসিনগুলো বাংলাদেশে আনতে পারবে, সেটাই এই চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হল৷ এখন যেটা আমাদেরকে ওদের সাথে নেগোশিয়েট করতে হবে যে কত কোয়ানটিটি আনব, কী প্রাইসে আনব, প্রাইভেট সেক্টরের জন্য কী প্রাইস হবে, সরকারের জন্য কী প্রাইস হবে৷ ওরা তো বলেছে, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে লঞ্চ করবে৷ যে টিকাগুলো দিয়ে লঞ্চ হবে সেই টিকারও একটা অংশ আমরা পাবো৷ এটা এই চুক্তির মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে৷''

শুক্রবার বেক্সিমকোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যখন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাবে, তখন যেসব দেশ সবার আগে নির্দিষ্ট পরিমান ভ্যাকসিন পাবে, সেই তালিকায় বাংলাদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করবে এসআইআই৷ এসআইআই-এর উৎপাদন সক্ষমতা ও অন্যান্য  দেশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী অঙ্গীকারের ওপর নির্ভর করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিনিয়োগের পরিমাণ এবং বাংলাদেশের জন্য এসআইআই-এর অগ্রাধিকারমূলক ভ্যাকসিন সরবরাহের পরিমাণ৷

ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম

This browser does not support the audio element.

‘ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলও ঠিক করে ফেলেছি’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ার সবগুলো পথই খোলা রেখেছে৷ আমরা তো এখনো নিশ্চিত নই, যে কোন ভ্যাকসিনটি আসলে কার্যকর হবে৷ ফলে সরকারিভাবে ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ভ্যাকসিন আসলে কিভাবে ডিস্ট্রিবিউশন হবে তারও একটা চ্যানেল আমরা ঠিক করে ফেলেছি৷ আমরা কিন্তু বসে নেই৷ ভ্যাকসিন পাওয়ার সব ধরনের চেষ্টাই আমাদের অব্যহত রয়েছে৷''

চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে সরকার৷ তবে চীনা ভ্যাকসিনের এই ট্রায়াল কবে নাগাদ হতে পারে, সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানানো হয়নি৷ জানা গেছে, চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশে তাদের টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)৷

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে বলে মনে হচ্ছে৷ চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়েলের অনুমতি তো দিয়েছে৷ এটা ভালো এই কারণে যে কয়েক হাজার লোক পাবে৷ পাশাপাশি এই ভ্যাকসিনটা কতটুকু কার্যকরী বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি-না এগুলো বুঝতে পারবো৷ চীনের লোকজনের পাশাপাশি আমাদের লোকজনও থাকবে৷ ফলে তাদের একটা অভিজ্ঞতাও হবে৷ সরকার চাইলে আরেকটা কাজ করতে পারে৷ অনেক দেশই তো ভ্যাকসিন তৈরী করছে৷ আরো কোন দেশ যদি ট্রায়াল দিতে চায় তাদেরও অনুমতি দিতে পারে৷ তবে আমরা যখন ফাইনালি নেবো তখন যাচাই করে নেবো যেটা সবচেয়ে ভালো সেটাই যেন আমরা পাই৷ এটা যেন জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত বিশ্বে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ১৭০টির বেশি উদ্যোগ চলমান রয়েছে৷ এর মধ্যে ১৩৯ টি এখন ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি৷ তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ২৫টি ভ্যাকসিন৷ দ্বিতীয় ধাপে ১৫ টি আর পরীক্ষার সবশেষ ধাপে আছে সাতটি৷ সেগুলোর মধ্যে চীনেরই রয়েছে তিনটি ভ্যাকসিন৷ এছাড়াও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজার৷ আর সবকিছু নির্ভর করছে হিউম্যান ট্রায়ালের রেজাল্টের ওপর৷ তাই সবাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে৷

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে কিছু ভ্যাকসিন ফ্রি পাবে৷ তবে সরকার কেবল ফ্রি ভ্যাকসিন পেতেই বসে থাকবে না৷ সরকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকবে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ