করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সরকারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কী বা কেমন? প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত এক শব্দের উত্তর ‘কিছুই না‘। এক বাক্যের উত্তর, সরকারের কোনো রকম প্রস্তুতি ছিল না বা সরকার কোনো রকমের প্রস্তুতি নেয়নি।
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস যে একটি গুরুতর প্রাণঘাতী সমস্যার নাম, বাংলাদেশ সরকারের কর্তারা তা বুঝতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যে কঠিন কখাগুলো বলছি, তার দু-একটি নমুনা উল্লেখ করা যাক:
১. করোনা ভাইরাস চীন থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ,ইরান, জাপান, ইটালিতে ছড়িয়ে পড়লো।পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সরকারের মন্ত্রীদের কাজ ও কথায় মানুষ বুঝতে পারলো যে, বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সমস্যা নেই।
২. আক্রান্ত দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা দেশে ফিরে আসতে শুরু করলেন। দেশে আসতে চাইলে অবশ্যই তারা আসতে পারবেন। দেশে বিপদ নেই এমন তথ্য তাদের জানানো হলো কেন? বাংলাদেশও নিরাপদ নয়, এ তথ্য জানানো হলে নিশ্চয়ই অনেক প্রবাসী দেশে ফিরতেন না।
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷
৩. করোনা ভাইরাস যে ছোঁয়াচে রোগ, তা জানা ছিল। আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ ফিরলে ছড়িয়ে পড়বে কোভিড ১৯, তা-ও জানা ছিল। তাহলে ঢাকা বিমানবন্দরের তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের দুটি শুরু থেকে প্রায় দেড় মাস নষ্ট থাকলো কেন? চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কেন থার্মাল স্ক্যানার থাকলো না? দেশের সবকটি স্থল বন্দর দিয়ে দেশি-বিদেশিরা অবাধে ঢুকে গেল৷ কারো প্রায় কোনো রকম স্ক্রিনিং হলো না। সরকার জানলোই না যে, কে করোনা ভাইরাস শরীরে নিয়ে ঢুকলো আর কে সুস্থ শরীরে ঢুকলো।
৪. সরকারি হিসেবে দেশে মানুষ সাড়ে ১৬ কোটি। অনুমান করা হয় ১৮ বা ২০ কোটি। দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জায়গা একটিও ঢাকা। না, কৌতুক নয়, সত্যি। করোনা কিট শনাক্তের পরীক্ষার জন্যে অপরিহার্য। দেশে তা আছে হাজার দেড়েক। ছোঁয়াচে রোগ কোভিড ১৯ থেকে বাঁচার জন্যে ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতাল কর্মীদের পিপিই ( ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম) অপরিহার্য, যা ডাক্তার-নার্সদের দেওয়া হয়নি। করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের আগে আড়াই মাস সময় পেয়েছে সরকার। এই সময়ে তারা কিট ও পিপিই সংগ্রহের কোনো চেষ্টাই করেনি। এখন বলছে, ‘‘নির্দেশ দেওয়া' হয়েছে।‘‘, ‘‘করতে হবে‘‘ ইত্যাদি।
৫. সরকার এখন যখন চেষ্টা করছে, তখন পৃথিবী প্রায় অবরুদ্ধ। ইচ্ছে করলেই কোনো কিছু এখন করে ফেলা সম্ভব না।
৬. সাধারণ মানুষের মতো সরকারও একটি শব্দ শিখেছে- ‘-কোয়ারান্টিন‘। বিদেশ-ফেরতদের কোয়ারান্টিনে থাকতে বলছে। কোয়ারান্টিন বিষয়টি কেউ সম্ভবত বুঝতে পারছে না, বোঝানোর চেষ্টাও কারো নেই। যখন ইরানের সংবাদ জানছি, প্রতি দশ মিনিটে করোনায় আক্রান্ত একজন মারা যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের সংবাদ দেখছি, কোয়ারন্টিনে থাকা একজনকে দেখতে সেই বাড়ির সামনে কয়েকশ' মানুষ ভিড় করেছে।
৭. ছোঁয়াচে রোগ কোভিড ১৯। ঢাকায় আজও দেখা গেল, মসজিদের ভেতরে তো বটেই, রাস্তা বন্ধ করে নামাজ আদায় করছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ কাবা ও মসজিদে নববীতেও নামাজ আদায় স্থগিত করা হয়েছে।সরকারি দলের কমিশনাররা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দিচ্ছেন। সেখানে বিয়ে-গায়ে হলুদ-জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
৮. সেনাবাহিনীকে দুটি কোয়ারান্টিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আরো আগেই দেওয়া যেতে পারতো।এসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিপক্ষে হলেও,এটা সমর্থন করছি, কারণ, আমাদের বেসামরিক প্রশাসনের সক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে, তাদের পক্ষে বড় কোনো ক্রাইসিস ম্যানেজ করা সম্ভব না।
৯. এখন একটু দৌড়াদৌড়ি করার চেষ্টা করছে সরকার।সকালে বলছেন, ‘‘এখনও এমন পরিস্থিতি‘‘ তৈরি হয়নি।বিকেলে শিবচর লকডাউন ঘোষণা করছেন।আগের দিন বললেন, করোনা ভাইরাস না ছড়ানো পর্যন্ত সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাববে না, পরের দিনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেন।গুজব-আতঙ্ক ছড়াবেন না বলে,কর্মকান্ড দিয়ে সরকার নিজেই গুজব-আতঙ্ক উৎপাদন করছে।
করোনা ভাইরাস প্রবেশ করেছে, সংক্রমণও হচ্ছে।কতটা ছড়াবে বা কতটা সংক্রমণ হবে, তা অজানা।জানা আশঙ্কা-আতঙ্ক নিয়ে বাংলাদেশ চলছে, সামনে না পেছনে- বলা মুশকিল।
কোয়ারান্টিনের নামে যা হচ্ছে
বলা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সবচেয়ে ভাল উপায় কোয়ারান্টিন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা৷ কিন্তু বাংলাদেশে কোয়ারান্টিন নিয়ে কী হচ্ছে দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/S. Hossain
উহান ফেরতদের ১৪ দিন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে প্রথম কোয়ারান্টিন উদ্যোগ নেয়া হয় গত ফেব্রুয়ারিতে৷ চীনের উহান থেকে ৩১২জনকে এনে রাখা হয় আশকোনা হজ ক্যাম্পে৷ কিছু অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠলেও ১৪ দিন পর প্রবাসীরা শেষে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেন৷
ছবি: A. Goni
ইটালি ফেরতদের নিয়ে নাটক
গত ১৪ মার্চ ইটালি থেকে ১৪২ জন ফেরেন বাংলাদেশে৷ তাদেরকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আশকোনা হজ ক্যাম্পে৷ কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানে থাকতে রাজি হননি তারা৷ এক পর্যায়ে পিছু হটে কর্তৃপক্ষ৷ তাদেরকে সেই দিনই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়৷
ছবি: DW/S. Hossain
প্রবাসীরা ‘নবাবজাদা’!
ইটালি ফেরতরা হজ ক্যাম্পে না থাকতে চাওয়ায় পরের দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা দেশে আসলে সবাই নবাবজাদা হয়ে যান৷ ফাইভ স্টার হোটেল না হলে অপছন্দ করেন৷ আমাদেরতো একটা দৈন্য আছে৷ এটাতো একটা বিশেষ অবস্থা৷’’ তার এই মন্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়৷
ছবি: DW/S. Hossain
কোয়ারান্টিন এড়াতে পলায়ন
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কেউ কেউ কোয়ারান্টিন এড়ানোর জন্য পালিয়েও যান৷ এজন্য বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে৷ মানিকগঞ্জে অষ্ট্রেলিয়া ফেরত একজনকে ১৫ হাজার টাকা, শরিয়তপুরে ইটালি ফেরত একজনকে ৫০ হাজার টাকা এবং টাঙ্গাইলে সিঙ্গাপুর ফেরত একজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে প্রশাসন৷
ছবি: DW/S. Hossain
কোয়ারান্টিনে না গিয়ে বিয়ে
হবিগঞ্জে ফ্রান্স থেকে ফিরে একজন কোয়ারান্টিনে না গিয়ে বিয়েও করেছেন৷ পরে পুলিশ খবর পেয়ে দম্পতিকে কোয়ারান্টিনে পাঠিয়েছে৷ বৌভাতের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে৷ জার্মানি ফেরত ঢাকার আরেক প্রবাসীরও বিয়ে আটকে দেয় প্রশাসন৷ তাকে পাঠানো হয় হোম কোয়ারান্টিনে৷
ছবি: DW/S. Hossain
প্রবাসী তরুণ নিখোঁজ
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিদেশ থেকে আসার পর ‘হোম কোয়ারান্টিনে’ রাখা এক তরুণকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না বলে ১৯ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন দুদিন ধরে তাকে খুঁজছে৷ ১৩ মার্চ তিনি আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে৷
ছবি: DW/S. Hossain
প্যারসিটামল খেয়ে তাপ কমানো
পরিসংখ্যান বলছে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ তিন শতাংশও হোম কোয়ারান্টিনে যাননি৷ কেউ কেউ দেশে আসার সময় শরীরে তাপ কমাতে উড়োজাহাজে প্যারসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খান বলেও কোয়ারান্টিনে যাওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন৷ তারা ওই ট্যাবলেট খান যাতে বিমানবন্দরে চেকের সময় তাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. I. Damanik
বিনোদন ছুটি!
প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সবার দাবির মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে সরকার৷ কিন্তু ছুটি পেয়ে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার পরিবর্তে পরিবার নিয়ে অনেকেই ঘুরতে গেছেন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে৷ যা ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন পর্যটন স্থানগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে৷