করোনা সংকটের কালে বরিশাল নগরীর দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)৷ তারা নগরীতে বিনামূল্যে খাদ্য ও ওষুধ বিতরণের জন্য ‘মানবতার বাজার' নামে একটি বাজার স্থাপন করেছে৷ সেখান থেকে মানুষ একদিনের খাদ্যপণ্য নিতে পারেন৷ বাজারে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধও রেখেছে তারা৷ এছাড়া, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সব ধরনের রোগীদের হাসপাতালে নিতে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বাসদের এ উদ্যোগে নগরীর নিম্নআয়ের মানুষ খুব খুশি৷ সামাজের নানা স্তর থেকে মানুষ মানবতার বাজরের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অর্থ সহায়তা করছেন বলে জানান স্থানীয় বাসদ নেতারা৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের ‘এক টাকার বাজার’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ফরদাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উদ্যোগে এ বাজার চালু করা হয়েছে৷ করোনা ভাইরাস দুর্যোগে এলাকার দরিদ্র মানুষরা ওই বাজারে এক টাকায় শাক-সবজি কেনার সুযোগ পাচ্ছেন৷
সিলেটে ‘মানবতার ঘর’
সিলেট নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডে হতদরিদ্রদের সহায়তায় নগরীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি'র উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ‘মানবতার ঘর'৷ যে ঘরের নানা তাকে রাখা আছে চাল, ডাল, তেলসহ নানা খাদ্যপণ্যের প্যাকেট, পাশে ঝুলছে কিছু জামা কাপড়৷ যার যা প্রয়োজন তিনি এ ঘর থেকে নিয়ে যেতে পারছেন৷ আবার কেউ সাহায্য করতে চাইলে এই ঘরে নিজের সাধ্যমতো জিনিস রেখে যেতে পারেন৷ স্বেচ্ছাসেবীদের একজন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান, নগরীর বিত্তবানরা তাদের উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন৷ তিনি আরো মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান যেন পুরো নগরীতে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া যায়৷
পথের পশুদের পাশে মানবিক মানুষ
করোনা সংকটে বাংলাদেশে ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটি চলছে৷ সচেতনতা ও প্রশাসনে নানা উদ্যোগে কার্যত চলছে লকডাউন ৷ এ অবস্থায় অনাহারে থাকা পথের কুকুরের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী৷
ছবি: bdnews24.com
লকডাউনে অসহায় পথের পশু
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ লকডাউন হয়ে আছে৷ মানুষ না থাকায় বন্ধ খাবারের দোকানগুলো৷ ফলে উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা পথের পশু-পাখি চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
মানবিক উদ্যোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয় ও তার বন্ধুরা ব্যক্তি উদ্যোগে ক্যাম্পাসে থাকা প্রায় ৪০০ কুকুরের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন৷
ছবি: bdnews24.com
প্রতিদিন খাবার
ইসতিয়াক ও তার বন্ধুরা গত ২১ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় এই খাবারের ব্যবস্থা করেন৷ তারা ক্যাম্পাসের সাত/আট জায়গায় কুকুরগুলোকে খাবার দিতেন৷
ছবি: bdnews24.com
বাদ পড়েনি বিড়াল ও কাক
ক্যাম্পাসের বিড়াল এবং কাকগুলোকেও তারা নিয়মিত খাবার দিয়েছেন৷
ছবি: bdnews24.com
সহযোগিতায় ডাকসু
২৯ মার্চের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ইসতিয়াক ও তার বন্ধুদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়৷ আরো বেশ কিছু মানুষের সহযোগিতায় ইসতিয়াকের দল কুকুরদের খাবার দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: bdnews24.com
এগিয়ে আসছেন আরো অনেকে
পথের পশু ও পাখিদের খাবার দিতে ঢাকা বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে আরো কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন৷ কোথাও কোথাও চাঁদা তুলেও কুকুর, বিড়াল বা কাকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন৷
ছবি: bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
মাশরাফীর জীবাণুনাশক চেম্বার
ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পরপরই অসহায় মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি নিজ জেলা নড়াইল ও ঢাকার মিরপুরের দরিদ্র মানুষদের ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি আরো বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন৷
নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী তাঁর ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন'-এর মাধ্যমে একটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করেছেন৷ যারা নড়াইল ও লোহাগড়ার তৃণমূল এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনামূ্ল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
এছাড়া, নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের প্রবেশ পথে তিনি জীবাণুনাশক একটি চেম্বার স্থাপন করেছেন৷ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা এই চেম্বারে প্রবেশ করে জীবাণুমক্ত হয়ে তারপর হাসপাতালে যান৷
এসএনএল/এসিবি
অন্যরকম বাংলাদেশের গল্প!
কে বলে মানুষ শুধু নিজের কথাই ভাবে! বাংলাদেশে এখনও এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের জীবনের বড় সময়টাই কাটিয়ে দিচ্ছেন সমষ্টির জন্যে৷ এমনই কিছু উদ্যোগের গল্প থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Gram Pathagar Andolon
পক্ষাগাতগ্রস্থদের ভরসা
১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে আসেন ব্রিটিশ সাইকোথেরাপিস্ট ভ্যালেরি টেইলর৷ ১৯৭৯ সালে স্থানীয় একটি দল নিয়ে গড়ে তোলেন সেন্টার ফর দ্য রিহেবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড৷ পক্ষাগাতগ্রস্তদের চিকিৎসায় সিআরপি এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার নাম৷ যার পরিচিতি ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডি৷ চিকিৎসা, থেরাপি, পুনর্বাসন, পক্ষাগাতগ্রস্থদের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি ছাড়াও সিআরপির রয়েছে ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ, স্কুল৷
ছবি: Centre for the Rehabilitation of the Paralysed
এক টাকায় আহার
সবার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর কুমার দাশ৷ ২০১৬ সালে তারা চালু করে এক টাকার আহার৷ প্রকল্পটির আওতায় দরিদ্র শিশু ও বৃদ্ধরা এক টাকায় পেট ভরে খেতে পান৷ প্রায় দুই হাজার পথশিশুকে তারা প্রতিদিন খাবার দেন৷ এই খাবারের খরচ দিতে পারেন যে কেউ৷ এজন্য যেতে হবে তাদের ওয়েবসাইটে৷
ছবি: bdnews24.com/A.M. Ove
পোস্টার থেকে স্কুলব্যাগ
১৩টি শাখায় দুই হাজার পথশিশুকে পড়াশোনার সুযোগও করে দিয়েছে বিদ্যানন্দ৷ আছে নারীদের জন্য বাসন্তি প্রকল্প৷ ৪০ একর জায়গার উপরে তাদের আছে ছয়টি এতিমখানা৷ সেখানে ৪০০ শিশু থাকছে৷ সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পোস্টার দিয়ে শিশুদের জন্য তারা ব্যাগ তৈরি করেছে৷ এসব উদ্যোগের পাশাপাশি এবারের বইমেলায় তারা আলোচনায় এসেছে পুরনো মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও ওষুধের বিনিময়ে নতুন বই দিয়ে।
ছবি: Abdul Gani
প্রবীণদের আশ্রয়
শেষ বয়সে এসে অনেক প্রবীণই হয়ে যান একা৷ অনেকের দায়িত্ব নিতে চান না সন্তানেরা৷ তাদের জন্য ভরসা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার৷ ২০১৫ সালে যা গড়ে তোলেন মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদার৷ মিরপুরে নিজের ভাড়া করা দুটি বাড়িতে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন বৃদ্ধকে সেবা দিয়েছেন তারা৷ ৭৫ জনের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন৷
ছবি: Child & Old Age Care
ইশকুল যখন মজার
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করে মজার ইশকুল৷ ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়৷ পরে তাদের স্কুল কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়৷ ২০১৮ সালে শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি খাবার কর্মসূচীও চালু করে তারা৷ বর্তমানে তাদের চারটি খোলা আকাশের নীচে, চারটি স্থায়ীসহ মোট আটটি স্কুল রয়েছে৷ আছে ১৫০০-র বেশি শিক্ষার্থী৷
ছবি: Mojar Ishkul
প্রতি গ্রামে পাঠাগার
‘প্রতি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার,’ এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন৷ ২০০৬ সালে সাত তরুণ শুরু করেন এই উদ্যোগ৷ টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে তারা গড়ে তোলেন অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগার৷ এরপর একে একে ৫৮টি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে৷ এখানেই শেষ নয়৷ পাঠাগারের উদ্যোক্তা আর সদস্যদের নিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক বিভিন্ন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Gram Pathagar Andolon
পাঠাগার থেকে বিদ্যালয়
পাঠাগারের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য স্কুল কলেজ গড়ে তুলছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা৷ সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে ভূঞাপুর যমুনার কোল ঘেঁষা একটি গ্রামে গড়ে তুলেছেন হাজী ইসমাইল খাঁ কলেজ ও বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ রংপুরের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্যামল-মঙ্গল-রমেশ স্মৃতি বিদ্যা নিকেতন৷
ছবি: Gram Pathagar Andolon
অসহায়দের বন্ধু শওকত
যেসব মানুষের ধারে-কাছে কেউ ঘেঁষেন না, যারা ক্ষত হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে রাস্তায় ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুণেন, তাদের ত্রানকর্তা পুলিশ কনস্টেবল মুহাম্মদ শওকত হোসেন৷ বছরের পর বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন৷ পরম আদরে মানুষগুলোকে তিনি রাস্তা থেকে তুলে আনেন৷ তাদের সেবা-যত্ন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ প্রতি মাসের বেতন, কিংবা উৎসব ভাতা নিজের জন্য নয়, খরচ করেন তিনি এই মানুষদের পেছনেই৷
ছবি: Privat
মানুষ প্রাণীদের জন্যেও
আহত প্রাণীদের সহায়তা, প্রাণী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার বা ‘প’ ফাউন্ডেশন৷ সংগঠনটির ফেসবুকে পেইজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু হয়৷ পরবর্তীতে তারা প্রাণীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলে৷ অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসাসহ মানুষের মধ্যে পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক ঘটাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন তাদের কার্যক্রম রয়েছে৷ (প্রতীকী ছবি)