করোনা সংক্রমণ ও আমফান ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের অনেক পেশাদার সংস্কৃতিজীবীর জীবন তছনছ করে দিয়েছে৷ বিপর্যস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন শিল্পীরাই৷ আয়োজন করেছেন এক বিশেষ কনসার্টের৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পীদের ক্যালেন্ডারের সাথে অন্য কোনো ক্যালেন্ডার মেলে না৷ না গ্রেগরিয়ান, না বাংলা, না হিজরি, না অর্থবর্ষের হিসাব৷ শিল্পীদের ক্যালেন্ডার পশ্চিম বাংলায় এতদিন চলে এসেছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে৷ দুর্গাপুজোর সময় থেকে একটানা ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত রমরমিয়ে গান-বাজনা-নাচ-নাটকে ছেয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গের ছোট-বড় মঞ্চ৷ শুধু প্রথম সারীর শিল্পীরাই নন, উৎসবের এই ‘সিজন’ থেকে যতটুকু উপার্জন হয়, তা দিয়ে ঘর চালান অনামী শিল্পী থেকে শুরু করে নামী-অনামী-বেনামী অসংখ্য যন্ত্রশিল্পী, আলোশিল্পী, শব্দশিল্পী এবং অন্যান্য সহকারীরাও৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ‘সিজন’ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে বছরের বাকি সময়টুকুর খরচও চলে যায়৷ কিন্তু ২০২০ সালে এই চিত্র একেবারে ভিন্ন৷
করোনা সংক্রমণ তো ছিলই, আবার এসে জুড়ে বসলো আমফান ঘূর্ণিঝড়৷ তছনছ হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য পেশার পাশাপাশি পেশাদার সংস্কৃতি চর্চার সাথে যুক্ত প্রতিটি মানুষের জীবিকা৷ একটানা সাত মাস ধরে আজ তাদের কারো কোনো কাজ নেই৷ বিশেষ করে সেই সব শিল্পীরা বিপর্যস্ত, যাদের হয়ত সেভাবে একডাকে কেউ চেনে না, কিন্তু নিজস্ব পরিসরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত৷ এমন শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই পেটের তাড়নায় রাস্তায় সবজি-ফল বিক্রি করতে বসছেন৷ মাস দুয়েক আগেও মঞ্চ-কাঁপানো গিটারবাদক আজ মুদির দোকান সামলাচ্ছেন৷ এছাড়া এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের আর্থিক অবস্থা এখন খুব খারাপ৷ তাদের জন্য সাময়িক অর্থায়নের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীতশিল্পী সংঘ ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রোফেশানাল পারফর্মিং সিঙ্গারস পশ্চিমবঙ্গ’ (অ্যাপস) আয়োজন করেছে একটি অভিনব কনসার্টের৷
করোনাকালে সেলিব্রেটি লাইভ
সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, সব মিলিয়ে করোনা মহামারি স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে৷ কিন্তু তাতে কি জীবন থেমে আছে? স্কুলের পড়াশোনা থেকে শুরু করে বন্ধুদের আড্ডা, সব উঠে এসেছে অনলাইনে৷ এই ট্রেন্ড থেকে তারকারাই বা বাদ যাবেন কেন?
টুগেদার অ্যাট হোম
এত তারকাকে একসঙ্গে এক প্ল্যাটফর্মে এর আগে দেখা যায়নি৷ গ্লোবাল সিটিজেন এবং লেডি গাগার উদ্য়োগে আয়োজন করা হয় ’ওয়ান ওয়ার্ল্ড: টুগেদার অ্যাট হোম’ নামের অনলাইন কনসার্ট৷ প্রাপ্ত অর্থ দান করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা মোকাবিলা তহবিলে৷ বিশ্বের বিখ্যাত তারকারা এতে অংশ নেন৷ একযোগে ফেসবুক, ইউটিউব, অ্যামাজন, টুইটারসহ নানা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করা হয়৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও প্রচার করা হয়৷
ছবি: Getty Images for Global Citizen
নাদালের অন্যরকম চ্যালেঞ্জ
১৯ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দিয়েছিল ইনস্টাগ্রাম৷ নাদালের সঙ্গে লাইভে যোগ দেন আরো দুই তারকা রজার ফেদেরার এবং অ্যান্ডি মারে৷ প্রথমবারের মতো ইনস্টাগ্রামে লাইভে আসতে গিয়ে বেশ ঝামেলাতেই পড়তে হয়েছিল নাদালকে৷ এ নিয়ে বেশ হাসিঠাট্টাও করেন ফেদেরার ও মারে৷ তবে লাইভে তাদের আলোচনা বেশ উপভোগ করেছেন ভক্তরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
তামিমের চমক
ইনস্টাগ্রামে তামিমের সঙ্গে যুক্ত হন মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ৷ পরবর্তীতে এ লাইভ করা হয় ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে৷ মাশরাফী, তাসকিন, সৌম্য, লিটনের মতো বর্তমান তারকাদের পাশাপাশি সাবেক ক্রিকেটার পাইলট, সুজন, আকরাম খান, দুর্জয় ও হাবিবুল বাশারও ছিলেন৷ ভারতের রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, সাউথ আফ্রিকার ফাফ দু প্লেসি, এবং নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনও উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন পর্বে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফ
খেলা বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে৷ তাই বলে ভক্তদের হতাশ করছেন না তারকারা৷ বরং মাঠের বাইরে নিজেদের জীবন নিয়ে নানা কথা দর্শকদের আরো বেশি আকৃষ্টই করেছে বলা যায়৷ ভারতের ক্রিকেটার যুবরাজ ও মোহাম্মদ কাইফ নিজেদের ইনস্টাগ্রাম থেকে লাইভ করেছেন, পাশাপাশি যুক্ত করেছেন অন্য তারকাদেরও৷ এসব লাইভে নিজেদের বিভিন্ন মধুর স্মৃতি যেমন উঠে এসেছে, খেলার নানা দিক নিয়েও হয়েছে আলোচনা৷
অনলাইনে অন্তাক্ষরী
পণ্ডিত যশরাজের মেয়ে দূর্গা যশরাজের উদ্যোগে ফিউচার অব লাইফ ফেস্টিভ্যাল-এর অংশ হিসেবে লাইভে আসেন আরো তিন তারকা- পল্লবী যোশি, রেনুকা সাহানে এবং রাজেশ্বরী৷ একসময়ের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল শো ‘আনতাকশরি’ অনলাইনে আয়োজন করা হয়৷ তবে গানের শেষ অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে গান গাওয়াই কেবল এর উদ্দেশ্য ছিল না, নানা ধরনের আলোচনা এবং দর্শকদের সঙ্গেও কথা বলেন তারকারা৷
ছবি: Imago Images/Hindustan Times/P. Guha
ডাবল ট্রাবল
বেসলাইন ভেনচারস নামের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ভারতের দুই নারী ক্রিকেট তারকা স্মৃতি মানদানা ও জেমাইমা রদ্রিগেজকে নিয়ে আয়োজন করে ইউটিউব লাইভ শো৷ মাঠের এই জুটি অনলাইনেও ফেলেছেন ব্যাপক সাড়া৷ শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মার মতো তারকা ক্রিকেটাররা হাজির হয়েছেন ‘ডাবল ট্রাবল’ নামের এই শোতে৷ পাশাপাশি দর্শক ও ভক্তরাও নানা প্রশ্ন ও মন্তব্য করে যুক্ত হতে পেরেছেন প্রিয় তারকাদের সঙ্গে৷
6 ছবি1 | 6
কোথায়, কবে, কীভাবে এই কনসার্ট?
পশ্চিমবঙ্গে ‘অ্যাপস’ একটি পরিচিত নাম৷ বর্তমানে এই সংগঠনের সভাপতি লোকশিল্পী পূর্ণদাস বাউল৷ এছাড়া সংগঠনের পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থুপের মতো কণ্ঠশিল্পীরা৷ সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সমিতিতে রয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও শম্পা কুণ্ডুর মতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা৷
এই আয়োজনের প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেন ‘অ্যাপস’-এর কার্যনির্বাহী সমিতির সদস্য শ্রীকান্ত আচার্য৷ বিপর্যস্ত শিল্পীদের বিষয়ে সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, কিন্তু সরকারের সামনে আরও বড় কিছু সমস্যা রয়েছে৷ সরকার চেষ্টা করবে জানি, কিন্তু তার নিজস্ব কিছু প্রায়োরিটি রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই৷ আমরা দাবি জানাতেই পারি, কিন্তু সরকারের সীমাবদ্ধতার কথাও আমরা জানি৷’’ অন্য সময় যে সমস্ত বড় অনুষ্ঠান হতো কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যত্র, তারবেশির ভাগ অর্থায়ন আসতো কর্পোরেট সংস্থাগুলির থেকে৷ করোনা ও আমফানপরবর্তী বাস্তবতায় রাজ্যের অর্থনীতি বেশ ভালো রকমের চোট পেয়েছে বলে মনে করেন শ্রীকান্ত৷ ফলে, এই সমস্ত সংস্থাগুলির কাছ থেকে কিছু বড় পদক্ষেপ আশা করাটাও সমীচীন হবে না বলে মনে করেন তিনি৷ এই ফাঁকটুকু যতটা সম্ভব জোড়া দিতেই শিল্পীদের কাজে নামা ও এই কনসার্ট আয়োজন৷
‘এক আকাশের নীচে’ শীর্ষক এই ডিজিটাল কনসার্টটি সম্প্রচারিত হবে ‘মিউজিয়ানা’ সংস্থার মাধ্যমে৷ ২২ আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান দেখতে ইচ্ছুক শ্রোতা-দর্শকদের প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হবে ১০ মার্কিন ডলার বা ৩৫০ বাংলাদেশি টাকা৷ অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত অর্থের পুরোটাই যাবে সংকটে পড়া শিল্পীদের কাছে৷ শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য আরও জানান, এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে একডাকে সাড়া দিয়েছেন বাংলার বহু নামী শিল্পী৷ এর মধ্যে ২২ আগস্টের অনুষ্ঠানে ছিলেন পূর্ণদাস বাউল, শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা মিত্র, জয়তী চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন, রূপঙ্কর, শ্রাবণী সেন, মনোময় ভট্টাচার্য, সিধু (ক্যাকটাস), রূপম ইসলাম, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্রসহ অনেকে৷
শ্রীকান্ত আচার্য
সংকট যতটা কঠিন
কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখা যায় কলকাতা শহরের এক বিশিষ্ট গিটারবাদক ও সুরকারের ছবি৷ পেটের দায়ে নিজের বাসার নীচে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান খুলেছেন তিনি৷ খবরের শিরোনামে উঠে আসে আরেক তরুণ সঙ্গীতশিল্পীর কথা, যিনি এখন পথেঘাটে সবজি ফেরি করছেন৷ ডয়চে ভেলের সাথে কথোপকথনে সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্যও নাম উল্লেখ না করে এক গিটারশিল্পীর কথা বললেন, যাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের মূল্যবান গিটার বেচে দিতে হয়েছে৷ তবে অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গীতজগতেও রয়েছে একই ধারার হাহাকার৷
বহুদিনের প্রিয় বাদ্যযন্ত্র মঞ্চে বা স্টুডিয়োতে বাজানোর বদলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, বা অনলাইনে শেখাচ্ছেন অনেকে৷ অনেকে যন্ত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন আলো, মাইক্রোফোন ইত্যাদি বিক্রি করে দিয়ে নতুন কোনো পেশায় ঢুকছেন, সঙ্গীতকে বিদায় জানিয়ে৷ তুলনায় নতুন প্রজন্মের, শহুরে কলাকুশলীদের অবস্থা কিছুটা ভালো৷ ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যস্ত থাকায় সময়ের সাথে নিজেকে বদলানো তাদের পক্ষে সহজ হচ্ছে৷ একটু বয়স্ক শিল্পী ও কলাকুশলীরা তা পারছেন না৷ সংগীত, নৃত্য, অভিনয় এই তিন ক্ষেত্রে যারা পেশাদারীত্বের সাথে যুক্ত, তাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ও হাতিয়ার এই ইন্টারনেট৷
শিল্পীদের কেন টাকা নেই?
বাংলাদেশে শিল্পীরা সঙ্গীত জীবনের শেষ দিকে এসে পড়ছেন আর্থিক সঙ্কটে৷ তাদেরকে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হয় শুভাকাঙ্খী অথবা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে৷ কেন এই পরিস্থিতি, কী বলছেন সঙ্গীত শিল্পীরা? পড়ুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Arafatul Islam
সাবিনা ইয়াসমিন
সঙ্গীতা বলেন, সাউন্ডটেক বলেন, এদের অ্যালবাম বিক্রির উপর কোনো ভাগ আমরা কোনোদিনও পাইনি৷ এককালীন একটা লামসাম দিয়ে দিতো৷ শিল্পীদের কোটি টাকা সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে৷ কারা খাচ্ছে আমি জানি না৷ আমাদের আয়ের কিছুই নাই এখন৷ ইউটিউবে আমার হাজার হাজার গান আছে, কোনেকিছুই জানি না কারা আপলোড করছে৷ রয়্যালটির টাকা মেরেকেটে না খেলে কি আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হয়?
ছবি: bdnews24.com
আসিফ আকবর
আমাদের দেশে কোন কপিরাইট সোসাইটি নাই, শিল্পীদের কোনো ঐক্য নাই৷ ৪৮ বছরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি নাই যে কারণেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিয়েলিটি শো হয়, বিভিন্ন এফ এম চ্যানেলে আমাদের গান বাজে সেখান থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারের ভাগটা কী, সেটা নিয়ে আমাদের কোন নীতিমালা নাই৷ যতদিন পর্যন্ত শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন কোন সমাধান হবে না৷
ছবি: bdnews24
নকিব খান
প্রত্যেকটা শিল্পী শেষ বয়সে এসে কষ্ট পায় এবং চিকিৎসার জন্য যখন অর্থ দরকার হয় তখন দুস্থ শিল্পী হয়ে যায়৷ সব শিল্পীরা মিলে তাকে সাহায্য করতে হয়, এটা খুবই দুঃখজনক, করুণ একটা ব্যাপার, আমাদের শিল্পীদের খুবই কষ্টের একটি জায়গা৷ আমাদের সৃষ্ট গানের কিছুই আমরা পাই না৷ কোম্পানিগুলোতে যারা আছে তারা হয়তো কিছু আয় করছে৷ আমাদের পাশের দেশে ভারতে শিল্পীরা রয়্যালটি পায়, সেজন্য তাদের এতো অভাব থাকে না৷
ছবি: Sazzad Hossain
কুদ্দুস বয়াতী
আমাদের শিল্পীরা মরলে পরে শহীদ মিনারে নিয়া ফুলের মালা দেয়৷ থাকলে দেখে না, কেউ নাই৷ এটা এখন প্রমাণিত৷ আমাদের শিল্পীদের এখন আয় নাই৷ মোবাইল, ইউটিউবের জন্য এক একজন আসে (গান রেকর্ড) করে দুই-তিন হাজার টাকা দেয়৷ ক্যামেরা করে তারা রেখে দেয়, তারপর ইউটিউবে চালায়৷ আমাদের লোকশিল্পীরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে৷ যন্ত্রশিল্পীরা স্টুডিওতে বাজিয়ে একটা গানের জন্য মাত্র দুই হাজার টাকা পায়৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
প্রীতম আহমেদ
অনুদান নয় বরং অনিয়ম বন্ধ করার কার্যকর নির্দেশ প্রয়োজন৷ অন্তত একটি মামলার আদালতের রায় প্রয়োজন৷ অবৈধ ভাবে অনুমতিহীন গান বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা প্রয়োজন৷ তাহলেই অপরাধীরা শিল্পীদের টাকা লুট করা বন্ধ করবে৷ দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে শিল্পীদের ৭০% রয়েলিটি নিশ্চিত করতে হবে৷ তবেই একজন শিল্পী সুস্থ ও সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবে৷
ছবি: Pritom Ahmed
খুরশীদ আলম
সিএনজি ওয়ালাদের সংগঠন আছে বলেই যখন ইচ্ছা তখন সিএনজি বন্ধ করে দিচ্ছে৷ বাস মালিকদের সংগঠন আছে, তারা যখন ইচ্ছা বাস বন্ধ করে দিচ্ছে৷ আমাদের সংগঠন নাই, আমরা পারছি না৷ আমাদের এভাবেই চলতে হবে৷ প্রেসিডেন্টের বেতন বাড়ে, প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ে, সচিবের বাড়ে, মন্ত্রীর বাড়ে, এমপির বাড়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়ে, কিন্তু শিল্পীদের পেমেন্ট বাড়ানো হয় না৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একটা রেট দিয়ে গেছেন সেটাই এখানো চলছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ব্যরিস্টার তানজীব উল আলম
একজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিও’র সঙ্গে চুক্তি করেন তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে’র জন্য তার সম্মানি চাইতে পারতেন৷ যেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটি স্টুডিও’র সঙ্গে শিল্পী নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷