কোভিড-১৯ পরিস্থিতির তথ্য যথাযথভাবে না জানানোয় আফ্রিকার কিছু দেশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউরোপ বা অন্য অঞ্চলের উন্নত কোনো দেশের মানদণ্ডে আফ্রিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা ভুল৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলি দাবি করেছেন তার দেশে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ এ দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কেননা, এপ্রিলের শেষ দিকে করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানানো বন্ধ করে দিয়েছিল তার সরকার৷ এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন বিরোধী দল চাদেমা পার্টির নেতা ফ্রিম্যান মবোয়ে৷ হামলা হয়েছে তার ওপর৷ তিনি এখন হাসপাতালে৷
আফ্রিকার আরো কিছু দেশের সরকার করোনা সংক্রান্ত তথ্য ঠিকভাবে প্রকাশ করছে না৷ লন্ডনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওসমান দার মনে করেন, আফ্রিকার দেশগুলোতে যে কোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করাই কঠিন৷ এতে সরকারের অনিচ্ছা বা প্রশাসনের অদক্ষতার ভূমিকা তো থাকেই, অন্য কিছু বাস্তবতাও দেয়াল হয়ে সামনে দাঁড়ায়৷ তবে সঠিক তথ্যের অভাবের জন্য তাঞ্জানিয়া বা তাঞ্জানিয়ার মতো অন্য কোনো আফ্রিকান দেশের সরকারকেই দায়ী করতে রাজি নন ওসমান দার৷ তাঁর মতে, আফ্রিকায় অনেক বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে, তারা সক্রিয় হলে এ সমস্যা এত প্রকট হতো না৷
রুয়ান্ডায় করোনা রোগীর চিকিৎসায় রোবট
00:54
এছাড়া রাজনীতি, অর্থনীতি এবং অশিক্ষাকেও আফ্রিকায় করোনা সংকট নিরসনের বড় অন্তরায় মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷
লকডাউনে দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়ে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হয় আফ্রিকার অনেক দেশের সরকারকে৷ তাছাড়া করোনা সংকটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে গেলে অন্য রোগের চিকিৎসা, টিকা দেয়ার কর্মসূচিসহ সবকিছু প্রায় বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় অনেকের৷ ওসমান দার মনে করেন, খোদ ব্রিটেনেই যেখানে করোনা সংকট শুরুর পর থেকে মারা যাওয়া রোগীদের অন্তত ২০ ভাগের করোনা সংক্রমিত না হয়েও বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা, সেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে চিত্রটা আরো ভয়াবহ হতেই পারে৷
আফ্রিকার দেশগুলোতে করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের খবর জানালেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়৷ ঘানার তামালেতে প্রথম দশজন সংক্রমিতের সুস্থ হওয়ার খবর জানিয়েছিল সরকার৷ তারপরের পরিস্থিতি জানিয়েছেন সেই শহরের ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মাইক্রোবায়োলজিস্ট কারেজ কোসি, ‘‘তিন সপ্তাহ আগেও অনেক মানুষকে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেখেছি৷ এখন অনেকেই মাস্কও পরছেন না৷’’
ক্রিস্টিনা ক্রিপাল/ এসিবি
আফ্রিকায় বাহারি করোনা মাস্ক
নাকমুখ ঢাকার মাস্ক সাদামাটা হতে হবে কেন? আফ্রিকার ফ্যাশন ডিজাইনাররা রং ও নক্সার বাহার দিয়ে মাস্ক সাজাচ্ছেন৷ নিজস্বতা বজায় রেখে মানুষকে করোনা সংকটের মোকাবিলা করতে উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: Mizo Ozim
আলজেরিয়ায় মাস্কের উপর ব্যক্তিত্বের ছাপ
আলজেরিয়ার ডিজাইনার মৌনিয়া লাজালি সেলাই করে অসংখ্য মাস্ক তৈরি করে দান করেছেন৷ গায়ক জো বাতুরি তাঁর একটি ডিজাইন তুলে ধরেছেন (ছবিতে দেখা যাচ্ছে)৷ তাঁর মতে, মানুষ নিজস্ব সংস্কৃতি ও রুচিবোধ আঁকড়ে ধরতে চান৷ ফলে এই মাস্ক ফ্যাশন হিসেবে তাঁদের মনে ধরবে৷ এভাবে মানুষ নিজের সুরক্ষার বিষয়টিকে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে বলে তাঁর আশা৷
ছবি: Mizo Ozim
রুয়ান্ডায় মাস্কের ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ
রুয়ান্ডার দর্জি আলেক্সান্ডার নশিমিয়িমানা (বাম থেকে দ্বিতীয় জন) ডিডাব্লিউ-কে বলেন, দেশে মাস্কের ঘাটতি পূরণ করতে তিনি এমন রঙিন মাস্ক তৈরি করে চলেছেন৷ অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমা বুঝে সেই মাস্কের দাম যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ দেশের ওষুধের দোকানে এমন মাস্কের দাম প্রায় দুই মার্কিন ডলার হলেও তিনি মাত্র ৫০ সেন্টে সেগুলি বিক্রি করছেন৷
ছবি: Alexander Bell Nshimiyimana
লাইবেরিয়ায় রংয়ের ছোঁয়া
লাইবেরিয়ার ‘দ্য বম্বশেল ফ্যাক্টরি’র সব কর্মীই নারী৷ পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলাই কোম্পানির ব্রত৷ বিক্রি হয়নি, এমন স্কার্ট কেটে উজ্জ্বল মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে৷ প্রত্যেকটি মাস্ক বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি এমন কোনো গৃহহীন মানুষকে দান করা হয়, যার পক্ষে বাসায় কোয়ারান্টাইনে থাকা সম্ভব নয়৷
ছবি: Marcelle Yhap
কেনিয়ায় কেতাদূরস্ত মাস্ক
কেনিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনার ডেভিড আভিডো ‘লুকসলাইক আভিডো’ ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা৷ উদ্বৃত্ত পোশাক কেটে নিজের তৈরি মাস্ক পরে তিনি ছবি তুলিয়েছেন৷ মার্চ মাসে কেনিয়ায় প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর তাঁর কোম্পানি দশ হাজারেরও বেশি মাস্ক তৈরি করে রাজধানী নাইরোবি ও আশেপাশের এলাকায় বিনামূল্যে বিতরণ করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Odhiambo
ক্যামেরুনে ডিজাইনার বোনেরা
অঁজ গুফাক (বামে) ও তাঁর বোন এদমঁদ কেনাং (ডানে) ক্যামেরুনে এমন রংচঙে মাস্ক তৈরি করে চলেছেন৷ সঙ্গে চোখ ঢাকার প্লাস্টিকের অংশও রয়েছে৷ করোনা সংক্রমণের গতি কমাতে ১৩ই এপ্রিল থেকে সরকার প্রকাশ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে৷
ছবি: Edmonde Kennang
টিউনিশিয়ার হাসপাতালে মাস্ক দান
করোনা সংকট শুরু হবার পর অনেক হাসপাতাল মাস্কের ঘাটতির মুখে টিউনিশিয়ার ডিজাইনার মিরিয়াম রিজা-র সঙ্গে যোগাযোগ করে৷ দান করা কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করে তিনি বিনামূল্যে হাসপাতালে বিতরণ করছেন৷ সেই কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে রিজা সেইসব ক্রেতার জন্যও মাস্ক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন, যাঁদের যথেষ্ট অর্থবল রয়েছে৷