করোনাকালেও বিশ্বে সুপার রিচ-দের সংখ্যা কমা দূরে থাক, বরং বেড়েছে। আরো ছয় হাজার মানুষ অতি-ধনী হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
দুটো ঘটনাই করোনাকালে বাস্তব। একদিকে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়েছে। অতিমারির ফলে প্রায় প্রতিটি দেশে লকডাউন হয়েছে। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়েছে। প্রচুর মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বহু মানুষ গরিব হয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্বে সুপার-রিচদের সংখ্যা বেড়েছে। করোনাকালে ছয় হাজার মানুষ সুপার রিচদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। নতুন ধনীদের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি অ্যামেরিকায়। তারপর চীন এবং তিন নম্বরে জার্মানি।
বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ বৃহস্পতিবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, করোনাও কিছু মানুষের অতি-ধনী হওয়াকে থামাতে পারেনি। ২০২০ সালে সারা বিশ্বে অতি-ধনীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজারে। যার মধ্যে জার্মানি থেকে আছেন দুই হাজার ৯০০ জন। জার্মান অতি-ধনীরা বিশ্বের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের এক দশমিক চার ট্রিলিয়ান ডলার নিয়ন্ত্রণ করেন। ২০২০ সালে তাদের আর্থিক বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ছয় শতাংশ।
করোনাকালে এই ধনীদের সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিশ্ব জুড়ে অতি-ধনীদের সম্পদের পরিমাণ ২৫০ ট্রিলিয়ান ডলার ছুঁয়েছে, যা ২০১৯-এর তুলনায় আট শতাংশ বেশি।
জার্মানিতে ক্যাশ, সেভিংস, শেয়ার, পেনশন প্ল্যান ও বিমায় নয় ট্রিলিয়ান ডলারের সম্পদ জমা রয়েছে। যদি রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ ধরা হয়, তাহলে সেই সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ২০ ট্রিলিয়ান ডলার।
করোনা যাদের টাকার পাহাড়
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মহাসংকটে৷ তবে এই পরিস্থিতিতেও কেউ হয়েছেন বিলিয়নিয়ার, আবার কেউ এগিয়ে চলেছেন বিলিয়নিয়ার থেকে ট্রিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে৷ তাদের নিয়েই এ ছবিঘর...
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance
যিনি হবেন প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার
অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস আগে থেকেই বিশ্বের সেরা ধনী৷ তবে করোনা সংকটের সময় তার কোম্পানির ব্যবসা এত ফুলে-ফেঁপে উঠেছে যে এই ধারা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হবেন তিনি৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে বেজোসের মোট সম্পদের দাম ১৯৩ বিলিয়ন ডলার (১৬১ বিলিয়ন ইউরো)৷
ছবি: Pawan Sharma/AFP/Getty Images
মাস্কের পোয়াবারো
বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও এলন মাস্কেরও এখন পোয়াবারো৷দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া এই অ্যামেরিকান উদ্যোক্তা সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় বিল গেটসকে পিছনে ফেলেছেন৷ এলন মাস্কের মোট সম্পদের দাম এখন ১৩২ বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Getty Images/M. Hitij
রাতারাতি বিলিয়নিয়ার ইউয়ান
করোনার সময়ে ভীষণ কাজে লাগছে জুম অ্যাপ৷অনলাইন ক্লাস, ইন্টারভিউ, টকশোসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে এই অ্যাপের সহায়তায়৷ জুম অ্যাপের মালিক এরিক ইউয়ানের মোট সম্পদের দাম এখন ১৯ বিলিয়ন ডলার৷হ্যাঁ, জেফ বেজোসের ১৯৩ বিলিয়ন এবং এলন মাস্কের ১৩২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় তা খুবই কম, কারণ চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাড়ি জমানো ইউয়ানের জুম পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ২০১৯ সালে, অর্থাৎ মাত্র এক বছর আগে৷
ছবি: Kena Betancur/Getty Images
ফোলিকে করোনার ‘উপহার’
করোনার এই সময়ে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি এড়াবেন কী করে? কেন ব্যায়াম করুন, ইনডোর সাইকেল চালান! করোনা সংকট শুরুর পর থেকে অনেকেই তা করছেন৷ আর তাই ইনডোর সাইকেল তৈরির প্রতিষ্ঠান পেলোটনের শেয়ার বিক্রি তিনগুণ বেড়ে গেছে৷ সেই সুবাদে রাতারাতি বিলিয়নিয়ার হয়ে গেছেন পেলোটনের সিইও জন ফোলি৷
ছবি: Mark Lennihan/AP Photo/picture alliance
এক জার্মানের ক্যানাডা ‘জয়’
কোবলেন্ৎসে জন্ম নেয়া টোবিয়াস ল্যুটকে জার্মানি থেকে ক্যানাডায় গিয়েছেন ২০০২ সালে৷তখন মাত্র ২১ বছর বয়সে বাড়ির গ্যারেজে শুরু করেছিলেন ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা৷ তার প্রতিষ্ঠান শপিফাই করোনা সংকটে হাজার হাজার মানুষকে অনলাইন দোকান খুলতে সহায়তা করেছে৷ ফলে ক্যানাডার ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল এন্টারপ্রাইজ’ হয়ে গেছে শপিফাই এবং ফোলির মোট সম্পদের দাম দাঁড়িয়েছে নয় বিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Wikipedia/Union Eleven
ভ্যাকসিন কপাল খুলেছে যার
জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর সাহিনের সম্পদের দাম রাতারাতিই বেড়ে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে৷ কেন এমন হলো? কারণ, বায়োনটেকের উদ্ভাবন করা ভ্যাকসিন৷
ছবি: BIONTECH/AFP
হ্যালোফ্রেশ খোলা আছে তাই
করোনার কারণে জার্মানির সব রেস্তোরাঁ যখন বন্ধ, তখন টাটকা খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করে হ্যালোফ্রেশ৷বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এরিক রিশটারেরও কপাল খুলে যায় তাতে৷ এই কয়েকমাসেই তিনি নাকি বিলিয়নিয়ার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে৷
ছবি: Bernd Kammerer/picture-alliance
সবচেয়ে ধনী নারী
জেফ বেজোসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও অ্যামাজনের শেয়ার ছাড়েননি ম্যাকেঞ্জি স্কট৷ সে কারণেই বেজোসের সাবেক স্ত্রী এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী৷ তার সম্পদের দাম ৭২ বিলিয়ন ডলার৷ করোনা একদিকে অ্যামাজনের মালিক, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জেফ বেজোসকে আরো ধনী করেছে, অন্যদিকে তার সাবেক স্ত্রী-কেও দিয়েছি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী হওয়ার সুযোগ৷
ছবি: Dennis Tan Tine/Star Max//AP/picture alliance
8 ছবি1 | 8
এই রিপোর্টের লেখক অ্যানা জাক্রেয়স্কি বলেছেন, ''জার্মানরা সাধারণত রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে। তবে এও সত্যি, জার্মান বিনিয়োগকারীরা অ্যাভারেজ রেটের থেকে বেশি সঞ্চয় করেছেন।''
যদিও বেশিরভাগ মানুষ ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ঘরবন্দি হয়ে থেকেছেন, তাও জার্মানিতে মিলিওনেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ হাজারের মতো। সারা বিশ্বে বেড়েছে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার জন।
অসাম্য তৈরি করেছে করোনা
করোনার ফলে ধনী ও গরিবের মধ্যে অসাম্য আরো বেড়েছে। বিশ্বের ৬০ হাজার অতি-ধনী মানুষ মোট বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। একই সময়ে বিশ্বে গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন(আইএলও)-র রিপোর্ট বলছে, করোনার ফলে বেকারের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ছে। ২০১৯ সালের অবস্থায় ফিরতে বহু বছর সময় লেগে যাবে। রিপোর্ট বলছে, কুড়ি বছরের মধ্যে প্রথমবার শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে।