1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনাকালেও থামেনি নারীর প্রতি সহিংসতা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ মে ২০২০

বাংলাদেশে করোনায় লকডাউনের মধ্যেও ঘরে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন৷ এমনকি মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়েও স্বামীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন স্ত্রী৷ এদিকে বাল্যবিবাহও থেমে নেই৷

ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তাদের এক জরিপে বুধবার এপ্রিল মাসের এই তথ্য তুলে ধরেছে৷ তবে তারা গত বছরের এপ্রিল মাসের সঙ্গে কোনো তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেনি৷ তারা বলছে, দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ বাল্যবিবাহ হয়েছে ৩৩টি৷

২৪ টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে ২৭ জেলার ৫৮ উপজেলার ৬০২টি গ্রাম ও ৪ টি সিটি কর্পোরেশনের ১৭ হাজার ২০৩ জন নারী ও শিশুদের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়৷

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮ নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার দুই হাজার আট, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩০৮ জন নারী৷ এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার জন নারী, হত্যা করা হয়েছে এক জনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ জন নারীকে৷

উত্তরদাতা চার হাজার ২৪৯ শিশুর মধ্যে ৪২৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ বাল্যবিয়ে হয়েছে ৩৩ টি এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪২ টি৷ চারটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১৬ জনকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহৃত হয়েছে দুই জন, যৌন হয়রানির শিকার ১০ জন এবং ত্রাণ নেওয়ার সময় ১০ টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ৷

জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ টি শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি৷ শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে ৷ আর নারীরা বেশির ভাগই স্বামীর হাতে৷

আমাদের সাথে কথা বলার কারণেও নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে: অর্পিতা দাস

This browser does not support the audio element.

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস জানান, ‘‘আমরা এক হাজার ৬৭২ জন নারীকে পেয়েছি যারা আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হননি৷ এটা প্রমাণ করে যে লকডাউনের মধ্যে নির্যাতন বাড়ছে৷ আর এই নির্যাতনে স্বামীরাই প্রধানত জড়িত৷ কারণ তাদের কোনো কাজ নেই৷ অধিকাংশের আয় নাই৷ খাবার নেই৷ তারা বাইরে যেতে পারছেনা, আড্ডা দিতে পারছে না৷ এই সবকিছুর জন্য তারা আবার নারীকেই দায়ী করছে৷ নারীকে দায়ী করার এই মানসিকতার পিছনে নির্যাতনের প্রচলিত মানসিকতাই কাজ করছে৷ এর বাইরে শ্বশুর শাশুড়ি এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ভূমিকা আছে৷’’

তিনি জানান, ‘‘আমাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলা এবং অভিযোগ করার কারণেও নারীরা নির্যাতনের শিকারহয়েছে৷ তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি আমরা৷’’

লকডাউনের মধ্যে বাল্যবিবাহের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত করোনার কারণে মানুষের দারিদ্র্য বেড়েছে৷ তাই অভিভাবকেরা বিয়ে দিয়ে দারিদ্র্য থেকে বাঁচার হয়তো একটা পথ খুঁজছেন৷ আর এই সময়ে বাল্য বিবাহ বিরোধী প্রচার এবং তৎপরতা কমে যাওয়ায় এটাকে কেউ কেউ সুযোগ হিসেবে নিয়েছে৷’’

এই সময়ে নারীর অভিযাগ জানানোর সুযোগ কমে গেছে: শাহীন আনাম

This browser does not support the audio element.

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘‘বিশ্বে এই করোনার সময় লকডাউনে নারী নির্যাতন ২০ ভাগ বেড়েছে৷ বাংলাদেশও তার বাইরে নয়৷ আর এখানে স্বাভাবিক অবস্থায়ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেশি৷ করোনার সময় এখন পুরুষরা ঘরে থাকছেন৷ পরিবারের সব সদস্যরা ঘরে থাকছেন৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে৷ তবে আমরা এখনো কোনো তুলনামূলক স্ট্যাডি করিনি৷ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আমরা সব জেলায় কাজও করতে পারিনি৷ ফলে পুরো চিত্রটাও তুলে আনা সম্ভব হয়নি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে নারীর অভিযাগ জানানোর সুযোগ কমে গেছে৷ সে ঘরের বাইরে যেতে পারেনা৷ আবার স্বামীসহ সবাই ঘরে থাকায় টেলিফোনেও অভিযোগ করতে পারেন না৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘এই সময়ে তাই নারী, শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপশি সচেতনতামূলক কর্মসূচির প্রয়োজন৷’’

অনলাইন এ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত না হলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায় লকডাউনের মধ্যে এপ্রিলে সারাদেশে ৪০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ আর গত বছর এই সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৭ জন নারী৷ যেখানে বাইরে মানুষ বের হচ্ছেনা তখন এই ধর্ষণের সংখ্যা নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ারই প্রমাণ৷’’

সংবাদ সম্মেলনেও কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়৷ এরমধ্যে রয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হটলাইন ১০৯ ও পুলিশি সহায়তার জন্য ৯৯৯ কে আরো বেশি কার্যকর করা৷ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীরা যাতে আশ্রয় পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা৷ করোনা পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল চলমান রাখার জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্ট অর্ডিন্যান্স’ দ্রুত পাস করা৷

২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ