গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত তিন লাখ ৮৬ হাজার। অন্যদিকে হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় মোট ৯১ লাখ মানুষ গেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ভারতে করোনাকে রোখা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টাতে তিন হাজার ৪৯৮ জন মারা গেছেন। মহারাষ্ট্র, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, দিল্লি, উত্তর প্রদেশের অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিটি রাজ্যেই হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার চলছে। অক্সিজেনের জন্যও।
তবে এর মধ্যেও নির্বিকার কুম্ভমেলায় যাওয়া মানুষজন। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, সবমিলিয়ে ৯১ লাখ মানুষ হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় গিয়ে গঙ্গায় স্নান করেছেন। তার মধ্যে এপ্রিল মাসে গেছেন ৬০ লাখ মানুষ। বুধবার হরিদ্বারে কুম্ভ শেষ হয়েছে। সেদিনও ২৫ হাজার মানুষ শেষ শাহি স্নান করেছেন। হর কি পৌরির ঘাটে ১৩টি আখড়ার দুই হাজার সাধুর স্নানের জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছিল। কুম্ভ শেষ হওয়ার পর হরিদ্বারে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
করোনার এই তাণ্ডবের মধ্যে কেন কুম্ভমেলার অনুমতি দেয়া হলো, কী করে এত মানুষকে আসতে দেয়া হলো, আর মানুষই বা এই পরিস্থিতির মধ্যে সব বিপদ ভুলে কী করে হরিদ্বারে ছুটলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। রাজ্য সরকার আগে জানিয়েছিল, তারা সব ধরনের সাবধানতা নিয়েছে। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এত মানুষের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয় বলে নেটমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে। ১২ এপ্রিল ৩৫ লাখ মানুষ গঙ্গায় স্নান করেছেন।
কুম্ভমেলায় করোনার থাবা, ভারতের হাসপাতালে সব বেড ভর্তি
করেনাকালেও কুম্ভমেলায় লাখো মানুষের ভিড়। করোনা বাড়ছে সেখানেও। গোটা ভারতেই অবস্থা ভয়ঙ্কর। হাসপাতালে বেড খালি নেই।
ছবি: Money Sharma/AFP/Getty Images
কুম্ভের ভিড়
হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছেন। একমাস ধরে চলে কুম্ভমেলা। এর মধ্যে দুইবার শাহি স্নান হয়েছে। একটি হিসেব বলছে, একটি স্নানে একসঙ্গে ২৮ লাখ মানুষ ছিলেন সেখানে। করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে কুম্ভমেলায়। তাও মানুষের আসার শেষ নেই।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
৩০ জন সাধুর করোনা
একদিনেই ৩০ জন সাধু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে পুণ্যলাভের আশায় যে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছেন, তাদের মধ্যেও করোনা ছড়াচ্ছে দ্রুত।
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
আখড়ার সিদ্ধান্ত
দুইটি আখড়া জানিয়ে দিয়েছে, তারা শনিবারই কুম্ভমেলা ছেড়ে চলে যাবে। নিরঞ্জনী আখড়া ও তপোধন শ্রী আনন্দ আখড়া। মোট ১৩টি প্রধান আখড়া কুম্ভে আসে। তার মধ্যে নিরঞ্জনী আখড়া যথেষ্ট প্রভাবশালী। প্রচুর নাগা সন্ন্যাসী এই আখড়ার সঙ্গে যুক্ত। তারা জানিয়েছে, আখড়ার সাধুরা শনিবার স্নান করে হরিদ্বার ছাড়বেন। কুম্ভের অবস্থা ভালো নয়। তাদের অনেক সাধুর মধ্যে করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Money Sharma/AFP
সাধুর মৃত্যুর পর
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মধ্যপ্রদেশের নিরওয়ানি আখড়ার প্রধান মহামণ্ডলেশ্বর কপিল দেব দাসের মৃত্যু হয়েছে। তারপরই আখড়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আর কুম্ভে এত মানুষ এসেছেন ও স্নান করছেন যে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
করোনাকালে কেন এভাবে কুম্ভমেলা
এই অবস্থায় বারবার প্রশ্ন উঠছে, করোনাকালে কেন এইভাবে কুম্ভমেলা হচ্ছে? কেন কুম্ভে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না? করোনার সময়ে দিল্লিতে সব ধরনের জমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও তাই। সেখানে হরিদ্বারে লাখো মানুষ জমায়েত হয়েছেন। রাজ্য সরকার বলছে, তারা মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেবে না।
ছবি: Karma Sonam/AP Photo/picture alliance
হাসপাতাল ভর্তি
এত দ্রুত করোনা ছড়ানোয় হাসপাতালের সব বেড ভর্তি। দিনভর চেষ্টা করেও করেনা আক্রান্তরা হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছেন না। দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কলকাতা সহ সব জায়গার ছবিই এক। উপরের ছবিটি নয়ডার হাসপাতালের।
ছবি: Getty Images/AFP/X. Galiana
ওষুধ নেই
করোনা রোগীকে অনেক সময়ই রেমডেসিভির দেন চিকিৎসকরা। সেই রেমডেসিভির পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার আরো একশটি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর অনুমতি দিয়েছে। অক্সিজেন পাওয়া নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ছবি: AFP/U. Perrey
উপচে পড়া রোগী
দিল্লিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতালগুলি। এইমসের মতো হাসপাতালের প্রধান জানিয়েছেন, তাদের প্রচুর নার্স করোনায় আক্রান্ত। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, দিল্লি সরকারের হাসপাতালে একটা সিঙ্গল বেডে দুইজন করোনা রোগীকে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
ছবি: Manish Kumar/DW
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকার সাহায্য
শুক্রবার সকালে অ্যামেরিকা থেকে করোনা-মোকাবিলার জন্য সাহায্য এসে পৌঁছাল। চারশ অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১০ লাখ করোনা পরীক্ষার কিট এবং হাসপাতালের জন্য জরুরি কিছু জিনিস পাঠিয়েছে অ্যামেরিকা। নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাস টুইট করে বলেছে, প্রথম শিপমেন্ট বিশেষ বিমানে এসেছে। আরো আসছে। ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার ৭০ বছরের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের ইতিহাস আছে।
সোলি সোরাবজির মৃত্যু
প্রবীণ আইনজীবী ও পদ্ম বিভূষণে সম্মানিত সোলি সোরাবজি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছি্ল ৯১ বছর। তিনি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলও ছিলেন।