করোনা সংকটের ফলে বিমানযাত্রা, ভ্রমণ, পর্যটন কার্যত থেমে গিয়েছিল৷ পরিস্থিতি আদৌ আগের মতো ‘স্বাভাবিক' হবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস প্রায় গোটা বিশ্বেকে কবজা করার পর ভ্রমণের ইচ্ছা শুধু যেন স্বপ্নই হয়ে উঠেছিল৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক দেশ নিজস্ব সীমান্ত বন্ধ করেছে৷ দেশের মধ্যেও ভ্রমণের উপর কড়াকড়ি দেখা গেছে৷ প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে লকডাউনের ফলে কার্যত গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে৷
শুধু মানুষ নয়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যাত্রীবাহী বিমান আকাশে উড়তে পারেনি৷ বিমান চলাচল ও পর্যটন ক্ষেত্র মারাত্মক ক্ষতির মুখ দেখেছে৷ এমন জরুরি পরিস্থিতিতে অনেক জনপ্রিয় শহর ও অঞ্চল বিনামূল্যে ভার্চুয়াল ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে৷ যেমন চীনের প্রাচীর বরাবর হাঁটার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ পেরুর বিখ্যাত মাচু-পিচু পর্বত নিজের মতো করে আবিষ্কার করা যাচ্ছে৷ জর্ডানের পেট্রা দেখে মুগ্ধ হওয়াও সম্ভব৷ অথবা নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ বাগানের দৃশ্য উপভোগ করা যাচ্ছে৷
প্রকৃতিপ্রেমীরা অনেক জাতীয় পার্কের রূপ দেখতে পাচ্ছেন৷ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বিখ্যাত ইয়োসেমাইট ঘুরে দেখা যাচ্ছে৷ অথবা অস্ট্রিয়ার পাহাড়-পর্বত৷
বিনামূল্যে বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ!
04:17
গোটা বিশ্বের প্রায় ২,৫০০ মিউজিয়াম নিজস্ব ভার্চুয়াল দরজা খুলে দিয়েছে৷ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ বসার ঘর থেকেই মঙ্গলগ্রহে টহল দিতে পারছেন৷ গ্রিস নিজস্ব পর্যটন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে৷ সেখানে গ্রিসের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে৷ অতিথিরা ভার্চুয়াল জগতে গ্রিসের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন৷
মানুষ অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে পারছেন৷ গান অথবা আঁকা শেখার সুযোগ পাচ্ছেন৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভার্চুয়াল ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করছেন৷ কোরিয়ায় মেকআপের কৌশল শেখার উপায় রয়েছে৷ মরক্কোয় রান্না শেখার ব্যবস্থাও রয়েছে৷ এমন কোর্সে অংশ নিতে হলে এক থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত গুনতে হতে পারে৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, করোনা সংকট শেষ হবার পরেও ভার্চুয়াল ভ্রমণের এই প্রবণতা চালু থাকবে৷
ভবিষ্যতে পর্যটন আরও বেশি করে স্থানীয় পর্যায়ে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে বলে একটা প্রত্যাশা জেগে উঠছে৷ সত্যি এমনটা হলে বিমান সংস্থাগুলি মোটেই খুশি হবে না বটে, তবে জলবায়ুর উপর অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে৷
আনে সোফি ব্রেন্ডিন/এসবি
সোফায় বসেই বিশ্বদর্শন
লকডাউনে গৃহবন্দি রয়েছেন? কিন্তু সোফায় বসে বিশ্বভ্রমণে তো কোনো বাধা নেই৷ বইয়ের পাতা উলটিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে পারেন৷ সাহিত্যজগতের এমনই কিছু দৃষ্টান্তের দিকে নজর দেওয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/Zuma
উইলিয়াম ফিনেগানের ‘বারবেরিয়ান ডেজ’
এই লেখকের আত্মজীবনী পড়লে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল থেকে হাওয়াই হয়ে অস্ট্রেলিয়া ঘোরার স্বাদ পেতে পারেন৷ ২০১৬ সালে পুলিৎসার পুরষ্কার বিজয়ী ফিনেগান একই সঙ্গে সমুদ্রের ভয়ংকর ও বিস্ময়কর রূপ তুলে ধরতে পারেন৷ সার্ফার হিসেবে তিনি সব সময়ে নিখুঁত ঢেউয়ের সন্ধান করে চলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma
ইয়োসেফ ফন আইশেনডর্ফের ‘মেমোয়ার্স অফ আ গুড ফর নাথিং’
১৮২৬ সালে লেখা এই উপন্যাসে এক বাবা তার বখাটে ছেলেকে ঘরছাড়া করে দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন৷ সেই যুগে ইটালি ভ্রমণ করে সেই তরুণ নিজেকে সৃজনশীল শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে৷ আজকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এ যেন এক ব্যাকপ্যাকারের অভিজ্ঞতার কাহিনি৷
ছবি: picture -alliance/Pacific Press/G. Fama
কার্ল মাই-এর ‘দ্য ওরিয়েন্ট সাইকেল’
অনেকেই কার্ল মাই-এর ভ্রমণকাহিনি পড়ে পৃথিবী আবিষ্কার করেছেন৷ ছয় খণ্ডের ‘ওরিয়েন্ট সাইকেল’-এ লেখকের দ্বিতীয় সত্তা কারা বেন নেমসি সাহারা মরুভূমি থেকে ইউরোপের বলকান অঞ্চল পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন৷ কে বলবে যে লেখকের এমন কোনো সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতাই হয়নি!
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Runkel
আরি শাভিট-এর ‘মাই প্রমিজড ল্যান্ড’
আরি শাভিট তাঁর নিজের দেশ ইসরায়েলের কাহিনি শোনান৷ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে৷ ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির মিশ্রণ ঘটিয়ে তিনি অসাধারণ সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন৷ সেই লেখা পড়লে ইসরায়েলে গিয়ে সে দেশের মানুষের কাহিনি শোনার ইচ্ছে মনে জাগবে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Widak
মার্গারেট মিচেল-এর ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলি ভ্রমণের সময় এই বইটি সঙ্গে থাকলে সুবিধা হয়৷ এই কাহিনির উপর ভিত্তি করে তৈরি চলচ্চিত্রটি অনেক বেশি জনপ্রিয় হলেও বইটি পড়লে সে দেশের গৃহযুদ্ধ ও দক্ষিণের রাজ্যগুলির পরাজয়ের পর পুনর্গঠন সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়৷ এই উপন্যাস একাধারে প্রেম-কাহিনি ও ঐতিহাসিক মহাকাব্য৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/J. Modrow
পাউলো কোয়েলোর ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’
এই উপন্যাস স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখে৷ স্পেনের দক্ষিণে আন্দালুসিয়ায় সান্তিয়াগো নামের এক রাখাল বালক বার বার পিরামিডের পাদদেশে রত্নভাণ্ডারের স্বপ্ন দেখে৷ তারপর সাহস করে সে অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ে৷ মরুভূমির মধ্য দিয়ে ক্যারাভানে করে যাত্রার সময়ে সে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পায়৷
১৮৪৪ সালে লেখা এই উপন্যাস সপ্তদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের শাসনকাল তুলে ধরে৷ পটভূমি মূলত প্যারিস হলেও প্রধান চরিত্র ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ইংল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ এই উপন্যাস পড়লে প্যারিসের ঐতিহাসিক স্থানগুলির পাশাপাশি ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে ঘোরার বাসনা জাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/G. Mermet
রাস্টি ইয়ং-এর ‘মার্চিং পাউডার’
সত্য ঘটনার ভিত্তিতে লেখা এই কাহিনিতে এক ব্যক্তি বলিভিয়া থেকে মাদক পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে লা পাস শহরের এক অদ্ভুত কারাগারে গিয়ে পড়ে৷ রক্ষীদের ঘুস দিয়ে নিজের জগতের সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে সে বন্দিদশা চুটিয়ে উপভোগ করে৷ বইয়ের লেখক রাস্টি ইয়ং-এরও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷