জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেন, করোনার কারণে ‘‘ঘৃণা ও বিদেশিদের ভয় পাওয়া, কাউকে বলির পাঁঠা বানানো এবং আতঙ্ক ও গুজব ছড়ানোর সুনামি'' বয়ে চলছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বব্য়াপী ‘হেটস্পিচ' বন্ধ করতে সর্বাত্মক চেষ্টারও আহ্বান জানান তিনি। এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন,‘‘অনলাইনে ও রাস্তায় বিদেশিবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে, ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে, এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত মুসলিমবিরোধী হামলার ঘটনা ঘটেছে।''
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, অভিবাসী ও শরণার্থীদের ‘‘ভাইরাসের সূত্র হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়েছে'' এবং তারপর তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
‘‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্করা। তাদের মেরে ফেলা যেতে পারে এমন নিন্দনীয় মিমও দেখা গেছে,'' বলে জানান তিনি।
‘‘আর সাংবাদিক, হুইসেলব্লোয়ার, স্ৱাস্থ্য়কর্মী, ত্রাণ ও মানবাধিকার কর্মীরা তাদের কাজ করছেন বলে তাদেরও টার্গেট বানানো হচ্ছে,‘‘ বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
তিনি সব মানুষের প্রতি সংহতি দেখাতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষসহ অন্য়ান্য় ক্ষতিকর কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলতে গণমাধ্য়ম, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্য়মের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব।
আরো বেশিসংখ্য়ক অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সুশীল সমাজের সদস্য়দেরও অনুরোধ করেন তিনি। আর ‘‘পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার মডেল‘‘ হতে ধর্মীয় নেতাদের প্রতি আহ্ৱান জানান গুতেরেস।
‘‘আমি আপনাদের যে যেখানে আছেন সবাইকে ঘৃণার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, একজন আরেকজনকে সম্মান দেখাতে এবং দয়া ছড়ানোর সব সুযোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি,'' বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ‘‘আমরা কে, কোথায় থাকি, কী বিশ্ৱাস করি কিংবা অন্য় কোনো বৈশিষ্ট্য়ের‘‘ পরোয়া করে না।
জেডএইচ/এসিবি (এপি)
সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে দূর করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণের কথা বলে না৷ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কেউ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তাহলেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সব রকমের রাজনৈতিক উস্কানি বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের পেছনে কখনো না লাগি৷ সবাই সবার ধর্মকে সম্মান করি৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শেখ শাফায়াতুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেখা শাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সবাই যেন সবার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ নিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ এছাড়া সবাই মিলে একটি দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে সাম্প্রদায়িকতাও দেশ থেকে দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
খরাজ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা, পশ্চিমবঙ্গ
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ মেকআপ আর্টিস্টই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ কই, আমাদের তো সমস্যা হয় না! আমরা মন থেকে কোনও বিভেদে বিশ্বাস রাখি না৷ তাই নিজেদের মধ্যেও বিভেদ জন্মায় না৷ মনের অন্ধকার দূর করাটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার৷
সত্যিকারের জ্ঞান মনের সংকীর্ণতা দূর করে৷ তাই শুধু ডিগ্রি দিয়ে লাভ নেই৷ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে৷ সেটাই হবে আদর্শ জ্ঞাননির্ভর সমাজ৷ সেই সমাজ এমন মানুষ তৈরি করবে, যার মধ্যে উগ্রতা থাকবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
পতিতপাবন রায়, পিয়ারলেস, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগতস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সমষ্টিগতস্তরে মানতে হবে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন৷ দেওয়ানি বিধির অধীনে সবাইকে রাখতে হবে৷ রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন দরকার৷ তবেই রাস্তা আটকে নামাজ পড়া বা মণ্ডপ তৈরি নিয়ে দাঙ্গা হবে না বা রক্তও ঝরবে না৷