আকাশচুম্বী বিমানভাড়া এবং কঠোর সঙ্গনিরোধ নিয়মের কারণে ইউরোপ থেকে ভিয়েতনামে ভ্রমণ দুরূহ হয়ে পড়েছে৷ ফলে ভিয়েতনামিরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশে যেতে পারছেন না৷
বিজ্ঞাপন
অসুস্থ দাদিকে দেখতে সপরিবারের ভিয়েতনামে যেতে চেয়েছিলেন ন্যা নেওয়িন৷ কিন্তু ট্রাভেল এজেন্সি যখন তাকে খরচের হিসেব দিল তখন আর দেশে ফেরার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকলো না তার৷
নেওয়িন বলেন, ‘‘তারা বলেছে যে জনপ্রতি চারহাজার তিনশো ইউরো ভাড়া গুণতে হবে৷ আমি মনে করেছিলাম করোনার কারণে এখন হয়ত ভাড়া হবে দেড়-দুই হাজার ইউরোর মতো, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ৷''
ইউরোপের দেশে দেশে ভ্রমণে কড়াকড়ি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে সীমান্তে কড়াকড়ি, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারান্টাইনসহ বেশ কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে৷
ছবি: Alexander Farnsworth/picture alliance
ফিনল্যান্ড
যারা এই দেশে ভ্রমণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নিয়ম চালু করেছে ফিনিশ সরকার, যা ২৭ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে৷ সীমান্তে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ শেনজেন অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অবাধ চলাচলের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে৷ এসব দেশ থেকে জরুরি কাজ বা প্রয়োজনের কাগজ দেখিয়ে তবে ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করা যাবে৷
ছবি: Vesa Moilanen/Lehtikuva/AFP/Getty Images
সুইডেন
ইইউ-র বাইরের ইউরোপের দেশগুলো থেকে যারা আসবেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা করোনা পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ ফলাফল দেখাতে হবে, অন্যথায় ফেরত যেতে হবে৷ ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ থেকে এটা কার্যকর হয়েছে৷ যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও ডেনমার্কের নাগরিকদের সুইডেন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ সুইডিশরা অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে৷
ছবি: Alexander Farnsworth/picture alliance
ডেনমার্ক
ডেনমার্কে ভয়াবহ মাত্রায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ নেগেটিভ করোনা সার্টিফিকেট, যা ২৪ ঘণ্টার বেশি পুরোনো নয় এবং ভ্রমণের প্রয়োজন সংক্রান্ত কাগজ দেখাতে পারলেই কেবল এদেশে প্রবেশ করা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/Bildbyran/P. Arvidson
সুইজারল্যান্ড
দেশটি ইউরোপের দেশগুলোর সাথে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেনি৷ তবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের কমপক্ষে ১০ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে৷ যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Geisser
লুক্সেমবার্গ
শেনজেন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ জানুয়ারির ২৯ তারিখ থেকে বোর্ডিঙের সময় সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷
ছবি: imago/alimdi
চেক প্রজাতন্ত্র
করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দেশটি তিনটি সীমান্তই বন্ধ করে দিয়েছে৷ বসানো হয়েছে সীমান্তরক্ষী৷ তারা পর্যবেক্ষণ করছেন সীমান্ত দিয়ে কেউ যাতে অন্য দেশে প্রবেশ করতে না পারে এবং অন্য দেশ থেকে কেউ চেক প্রজাতন্ত্রে ঢুকতে না পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa
নরওয়ে
দেশটি সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে৷ কেবল যাদের খুব প্রয়োজন তারাই প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন৷ ২৯ জানুয়ারি থেকে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/J. Nix
পোল্যান্ড
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারবে না৷ পহেলা জানুয়ারি থেকে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ ইইউ দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের অবশ্যই ১০দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে৷ তবে ভ্যাকসিন নেয়ার সার্টিফিকেট থাকলে কোয়ারান্টিনের প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
তুরস্ক
তুরস্কে প্রবেশ করতে হলে ৬ বছরের বেশি বয়সিদের করোনা ‘নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ পাশাপাশি হেল্থ স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক৷ যুক্তরাজ্য থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/R. Hackenberg
ক্রোয়েশিয়া
এই দেশে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ‘ট্রাফিক লাইট সিস্টেমের’ মধ্যে দিয়ে যেতে হবে৷ অর্থাৎ, আপনার করোনার লক্ষণ আছে কিনা অথবা গত ১৪ দিনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে৷ পরীক্ষায় সবুজ সংকেত পেলে তবেই প্রবেশ করতে পারবেন ক্রোয়েশিয়ায়৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar/B. Hoyen
জার্মানি
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে চেক প্রজাতন্ত্র এবং অস্ট্রিয়ার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি৷ ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে৷ তবে জার্মান নাগরিকদের দেশে ঢুকতে কোনো বাধা নেই৷ তাদের ৪৮ ঘণ্টার কম পুরোনো করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ এছাড়া চিকিৎসক ও জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্তদের ছাড় দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Odd Andersen/AFP
11 ছবি1 | 11
ট্রাভেল এজেন্সি যে প্যাকেজ ন্যা নেওয়িনকে দিয়েছেন তাতে শুধু যাওয়ার বিমান টিকিট রয়েছে৷ সঙ্গে সেদেশে যাওয়ার পর ১৪ দিন সঙ্গনিরোধে থাকার ব্যবস্থা এবং ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের খরচও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে৷ তবে, তিনি যদি ভিয়েতনাম ভ্রমণ শেষে আবারো জার্মানিতে ফিরতে চান তাহলে ফিরতি টিকিটের জন্য জনপ্রতি আরো ছয়শো বা সাতশো ইউরো গুনতে হবে৷
এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম করোনার সংক্রমণ কমাতে দেশটিতে ভ্রমণের উপর ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে৷ যেকোন প্রবাসী ভিয়েতনামি নাগরিককে নিজের দেশে ফিরতে হলে একটি তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং সরকারের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷
প্রবাসী ভিয়েতনামিরা জানিয়েছেন যে দূতাবাসের মাধ্যমে নাম তালিকাভূক্ত করার পরও দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতে পারে৷ কেননা সরকার শুধুমাত্র খুব জরুরীভাবে যাদের দেশে ফিরে যেতে হবে বা শিক্ষার্থীদের তালিকায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷
এমন পরিস্থিতি আশু বদলে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না ন্যা নেওয়িন৷ আপাতত তাই আরো অনেকের মতো ভিয়েতনামে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন তিনি৷