1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার এক বছর

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশ করোনা মহামারির এক বছর পূর্ণ করেছে৷ শুরুতে চিকিৎসায় যে অব্যস্থাপনা ছিল তা কাটিয়ে উঠে অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে৷ কিন্তু নতুন করে নানা সামাজিক সংকট তৈরি হচ্ছে৷ আর সংকুচিত হয়েছে বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা৷

ছবি: DW/S. Hossain

গত বছরের এই দিনে (৮ মার্চ) বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়৷ শুরুতে করোনা নিয়ে নানা ভয়, সিদ্ধান্তহীনতা এবং চিকিৎসার অবব্যবস্থাপনায় এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, করোনার অভিজ্ঞতা সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশেও প্রথম৷ যেহেতু ভাইরাসটি ছিলো নতুন, তাই তার অনেক কিছুই অজানা ছিল৷ ফলে শুরুতে অনেক কিছুই ঠিক ছিল না৷ কিন্তু এখন ঠিক হচ্ছে৷ আর ভ্যাকসিন এসে যাওয়ায় মানুষের আতঙ্ক কমেছে৷ অনেক কিছু সহজ হয়েছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে  গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন আট হাজার ৪৬২ জন৷ এই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত  হয়েছেন পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন৷  সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ তিন হাজার তিন জন৷ সংক্রমণের সর্বোচ্চ হার ছিলো গত জুলাই মাসে৷ এপর্যন্ত মাস হিসেবে মোট সংক্রমণের ২২.৪৬ ভাগ হয়েছে ওই মাসে৷ আর গত ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন ২.৮২ ভাগ সংক্রমণ হলেও এখন তা আবার বাড়ছে৷ মার্চ মাসের প্রথম সাত দিনেই তা হয়েছে ৪.০৩ ভাগ৷

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে৷ এপর্যন্ত প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন৷ আর নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৬০ লাখ৷

গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘‘শুরুতে লকডাউন, বিশেষ এলাকায় লকডাউন, সাধারণ ছুটি আর বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের ছুটি দেয়া আবার করোনার মধ্যেই ঢাকায় ফেরত আনা- এসব পরিকল্পনায় অনেক ত্রুটি ছিলো৷ কিন্তু এখন তা কাটিয়ে ওঠা গেছে৷  তবে স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা এর দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা ভয়াবহ৷ সেটা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি৷’’ বিশেষ করে মাস্ক, পিপিপিই এবং করোনা পরীক্ষার নানা কেলেঙ্কারি হয়েছে বাংলাদেশে৷

স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা ভয়াবহ: ডা. লেনিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি যে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আমদানি ও রপ্তানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে  বলে মনে করেন বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ৷ তবে পোশাকখাতসহ বিভিন্ন খাতে যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের একটি অংশ আর কাজ ফিরে পাবেননা বলে মনে করেন তিনি৷ তার মতে, ‘‘অনেকে বয়স্ক হওয়ার কারণে কাজ ফিরে পাচ্ছেন না৷ আবার অনেকে নতুন দক্ষতা না থাকায় কাজ পাচ্ছেন না৷’’

সামাজিক সুরক্ষা এবং করোনাকালে খাদ্য সহায়তা সরকারের ভালো একটি উদ্যোগ৷ কিন্তু সেখানেও অনেক দুর্নীতি হয়েছে৷ ত্রাণ সামগ্রী চুরি হয়েছে৷ আর সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে তা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাজে আসেনি৷ তারা ব্যাংকের কাছ থেকেই ঋণ পাননি৷

পোশাকখাত তাদের ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত তাদের অর্ডার বাতিল হয়েছে ১০ ভাগের মত৷ তবে বৈশ্বিক কারণেই এখন পোশাকের চাহিদা কমেছে৷

তবে করোনার এক বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা৷ কিন্তু এই দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অবাধ তথ্যপ্রবাহ৷ করোনাকালে সংবাদমাধ্যম ত্রাণ, চিকিৎসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার খবর প্রকাশ করতে গিয়ে চাপের মুখে ছিল৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়৷ সমালোচনা সহ্য করার ক্ষেত্রে সরকার ও ক্ষমতবানদের অসিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটেছে৷ আর তার করতে গিয়ে জিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বেড়েছে৷  

আর্টিকেল ১৯ এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এই আইনে মামলার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশ৷ ২০২০ সালে ১৯৮টি মামলায় আসামি করা হয়  ৪৫৭ জনকে৷ এরমধ্যে ৪১টি মামলায় ৭৫ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়৷ ৩২ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ মামলায় সাংবাদিক ছাড়াও চিকিৎসক, শিক্ষক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, কাটুনিস্ট  ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্টদের আসামি করা হয়৷   ২০১৯ সালে মামলা হয় ৬৩টি৷

মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম মুশতাক ‘শহীদ’ হয়েছেন: ফারুক ফয়সাল

This browser does not support the audio element.

আর্টিকেল ১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘করোনার  সময় এই এক বছরে সংবাদমাধ্যম এবং বাক স্বাধীনতা অনেক বেশি সংকুচিত হয়েছে৷ করোনা নিয়ে সমালোচনা করে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম মুশতাক ‘শহীদ’ হয়েছেন৷ আর কার্টুন আঁকার জন্য এই করেনার সময়ই কিশোরকে নির্যাতন করা হয়েছে৷ করোনার সময়ে অনেক বেশি সাংবাদিককে ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ছাত্র, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের হাসপাতালে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ নার্সদের বলা হয়েছে সাংবাদিকদের তথ্য না দিতে৷ প্রকিউরমেন্ট-এর দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা যায়নি৷’’

তিনি মনে করেন, করোনার সময়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব আছে সেখানেই এরকম ঘটেছে৷ ব্রাজিল, ফিলিপাইন, ভারতেও এরকম ঘটেছে৷  কারণ যতই দুর্যোগ আসে ততই দুর্নীতির সুযোগ বাড়ে৷ এই দুর্নীতি করে কারা? যারা ক্ষমতায় থাকে৷ ক্ষমতা না থাকলে দুর্নীতি করা যায়না৷ বাংলাদেশে এবার আমরা করোনায় সাহেদ-সাবরিনাদের মত সুপারহিট দুর্নীতিবাজদের দেখেছি৷

তিনি বলেন, ‘‘করোনা শুরুতে অব্যবস্থাপনার কারণে এই দুর্নীতি বেড়েছে৷ তবে এখন অনেকটাই সামাল দিয়েছে সরকার৷ তবে বেসরকারি খাতে ভ্যাকসিন আসা শুরু করলে আবার দুর্নীতির আশঙ্কা করছি৷’’

ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশ করোনার প্রথম ধাক্কা সামলাতে পেরেছে৷ কিন্ত আরো সামনে ধাক্কা আসতে পারে৷ সে জন্য এখনই  স্বাস্থ্য খাতে অবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করা প্রয়োজন৷’’

ফারুক ফয়সালের মতে, ‘‘করোনার মতো যেকেনো দুর্যোগে সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে তা মোকবেলা সহজ হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ