জার্মানিতে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেছে৷ এর মধ্যে কন্টাক্ট ব্যান জারি হয়েছে, শিথিলও হয়েছে৷ কিন্তু মহামারি কি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে?
বিজ্ঞাপন
চলাচল এবং স্বজনের সঙ্গে মেলামেশায় এখন জার্মানি অনেকটাই শিথিল৷ স্কুল খুলে গেছে, মাঝারি আকারের জমায়েতেও মিলছে অনুমতি৷ বাস-ট্রাম-ট্রেন এবং সুপারমার্কেটে মাস্ক পরা ছাড়া আর তেমন কোনো মহামারির লক্ষণও চোখে পড়ছে না৷ এমনকি গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণেও বের হচ্ছেন অনেক পর্যটনপ্রেমী৷
কিন্তু পুরোটা সময় করোনার সংক্রমণকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া জার্মান নীতিনির্ধারকেরা কী বলছেন? এখনই কী একেবারে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সময় এসেছে? রবার্ট কখ ইনস্টিটুট আশঙ্কা করছে, হাঁফ ছাড়া তো দূরের কথা, সবচেয়ে খারাপ সময়টা এখনও আসেইনি৷
কিন্তু কেন? সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেছে৷ সংক্রমণ যখন তুঙ্গে ছিল তখনও ৪০ শতাংশের মতো আইসিইউ খালি রাখতে পেরেছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো৷ তাহলে এখন যখন সংক্রমণ কমে গিয়েছে, ভয় কিসের?
ইনস্টিটুটের প্রেসিডেন্ট লোথার ভিলার বলছেন, ‘‘সম্প্রতি সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে, যা নিয়ে রবার্ট কখ ইনস্টিটুটের সবাই খুব উদ্বিগ্ন৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল রাখতে পেরেছিলাম আমরা৷ কিন্তু এখন আবার কয়েকদিন ধরে বেশ উল্লেখযোগ্য হারে সংক্রমণ বাড়তে দেখছি৷''
করোনা সংকট মোকাবিলায় অ্যাপ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে নজরে রাখতে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অ্যাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/A. Widak
জার্মানি
জার্মানির জনসংখ্যার মোট ২০ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছে জার্মানির করোনা বিষয়ক অ্যাপ ‘করোনা ওয়ার্ন’৷ এক কোটি ৬২ লাখবার ডাউনলোড হওয়া এই অ্যাপে রয়েছে নানা প্রযুক্তগত সমস্যা, জানাচ্ছে জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ অ্যাপ তার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতায় তখনই পৌঁছতে পারবে যখন দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ তা ব্যবহার করবে, জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়৷
ছবি: picture-alliance/H. Dittrich
ফ্রান্স
ফ্রান্সের ‘স্টপ কোভিড’ অ্যাপের মূল কাজ হচ্ছে করোনা সংক্রমিত মানুষ কোথায় রয়েছেন এবং কার সংস্পর্শে এসেছেন, তার খোঁজ রাখা৷ এই অ্যাপটি মে মাসে বাজারে আসে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর৷ জুন মাস পর্যন্ত ২০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Samson
যুক্তরাজ্য
করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত যুক্তরাজ্যে একই ধারার অ্যাপ চালু করবার আলোচনা চলছিল মার্চ মাস থেকেই৷ ‘এনএইচএস কোভিড ১৯’ অ্যাপটি এখনও বাজারে আসেনি, কিন্তু জনগণের পক্ষে এই অ্যাপ চালু করা নিয়ে চাপ রয়েছে কর্তৃপক্ষের ওপর৷ তার কারণ, মাথাপিছু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Department for Health and Social Care/NHSX
অস্ট্রেলিয়া
‘কোভিড সেইফ’ অ্যাপটির কাজও হচ্ছে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ বা সংক্রমণের পথ সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সাবধান করা৷ এই অ্যাপে একটানা ২১ দিনের তথ্য রেকর্ড করা থাকে, যা ব্যবহারকারীকে জানাবে এই সময়ের মধ্যে কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কি না৷ ২১ দিন পর সেই তথ্য আপনা থেকেই মুছে দেয় অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
সিঙ্গাপুর
একটানা ২৫ দিন ধরে সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য রাখে সিঙ্গাপুরের কোভিড বিষয়ক অ্যাপ ‘ট্রেস টুগেদার’৷ এই অ্যাপে রাখা তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকে এবং অ্যাপের ওয়েবসাইট বলছে, মহামারী শেষ হলে এই অ্যাপও মুছে দেওয়া হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Lai
ভারত
ভারতের করোনা-অ্যাপ ‘আরোগ্য সেতু’ এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড হওয়া করোনা-অ্যাপ৷ এর কারণ ভারতের বিশাল জনসংখ্যাও৷ পাশাপাশি, এই অ্যাপ ফোনে না থাকলে এক শহর থেকে আরেক শহরে এবং এক দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এই অ্যাপ এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছে, জানাচ্ছে প্রযুক্তসংস্থা সেনসর টাওয়ার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
‘এক্সপোজার নোটিফিকেশন এপিআই’, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এক এক রাজ্যের এক এক নিয়মে৷ দেশজুড়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ না থাকায় রাজ্যগুলি নিজেদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী এই অ্যাপ দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Whitehurst
চীন
করোনা সংক্রমণের উৎসকেন্দ্র চীনে রয়েছে একাধিক করোনা-অ্যাপ৷ পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে জোর দিয়েছে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখায়, সেখানে চীনের একটি অ্যাপে সংরক্ষিত থাকছে ব্যবহারকারীর চলাফেরার সম্পূর্ণ হিসাব৷ জাপান টাইমসকে এবিষয়ে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চুই শিয়াওহুই বলেন, ‘‘চীনা ও পশ্চিমা সংস্কৃতি আলাদা৷ এখানে মানুষ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে দিতে পিছপা হয়না৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
8 ছবি1 | 8
বেশ কয়েকটি অঞ্চলে গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর সেসব এলাকা লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷ দ্রুত এসব ক্লাস্টার চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে জার্মানিজুড়ে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সরকার৷
জার্মান চ্যান্সেলারি মিনিস্টার হেলগে ব্রাউন জানান, ‘‘আমরা যদি এই গ্রীষ্মে নিজেদের ভ্রমণ করা ও বিনোদনের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারি, তাহলে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে আসছে শরৎকালে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যেতে পারে৷''
ইউরোপের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ডের চেয়ে অনেক ভালোভাবে করোনা মোকাবিলা করতে পেরেছে জার্মানি৷ এমনকি সংক্রমণ ও মৃত্যু যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তখন নিজেদের রোগী ছাড়াও ইটালি ও ফ্রান্স থেকে ক্রিটিক্যাল রোগী আকাশপথে এনে জার্মানির নানা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়৷
গত ছয় মাসে জার্মানিতে দুই লাখের বেশি মানুষের সংক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, মারা গেছেন নয় হাজারের বেশি মানুষ৷
জার্মান সরকার শুরু থেকেই বেশ সতর্কভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ সংক্রমণ নতুন করে বাড়ার পর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো থেকে আসা সব যাত্রীদের বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মান সরকার৷ জরিপে দেখা গেছে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকারের এমন তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক নীতির সমর্থন রয়েছে জনগণের মধ্যেও৷