অভিযোগ, করোনা প্যানডেমিক সামলাতে পারেননি তিনি। যার জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
পদত্যাগ করেছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী গুসেপে কন্টি। ২০১৮ সাল থেকে ইটালির প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলাচ্ছেন তিনি। করোনাকালে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারই জেরে শেষপর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন তিনি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ফের সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন কন্টি।
২০১৮ সালে ইটালিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন আইনের এই সাবেক অধ্যাপক। তবে তাঁর দল একার জোরে ক্ষমতায় আসেনি। জোট তৈরি করতে হয়েছিল আরো বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির দলও ছিল। করোনাকালে রেনজির সঙ্গে কন্টির বিরোধ শুরু হয়। রেনজি প্রথম থেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, গোড়া থেকেই প্যানডেমিক সামলাতে পারেনি সরকার। তবে বিরোধ তীব্র হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন করোনা রিকভারি ফান্ড ঘোষণা করার পর। কন্টি ইটালিকে দেওয়া ২০০ বিলিয়ন ইউরোর পুরোটাই একবারে খরচের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু রেনজি তার বিরোধিতা করেন এবং সরকার থেকে নিজের দলকে সরিয়ে নেন।
করোনা নজরে রাখার কয়েকটি অ্যাপ
করোনার বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল অ্যাপ, সফটওয়্যার, কিউআর কোড ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
অস্ট্রেলিয়া
করোনার বিস্তার ঠেকাতে ‘কোভিডসেফ’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ এর মাধ্যমে একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী আরেকজন ব্যবহারকারীর দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে আসার তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা৷ ব্লুটুথ ওয়্যারলেস সিগন্যালের মাধ্যমে এই তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে৷ একজন ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত কারো সঙ্গে ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে থাকলে, সেই তথ্য বার্তা দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
চীন
নাগরিকদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহ করছে দেশটি৷ ‘আলিপে’ ও ‘উইচ্যাট’ অ্য়াপ ব্য়বহারকারীরা ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, অসুস্থতার লক্ষণ ইত্যাদি তথ্য দেয়ার মাধ্যমে একটি কিউআর কোড পেয়ে থাকেন৷ বাসে, ট্রেনে, অফিসে, এমনকি নিজের বাড়িতে ঢুকতে এই কোড স্ক্যান করতে হয়৷ এভাবে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে থাকে সরকার৷ কোডের রং সবুজ হলে চলাফেরায় বাধা নেই, হলুদ হলে সাতদিন আর লাল হলে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হয় নাগরিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/D. Qing
ইটালি
কেউ করোনা আক্রান্তের স্পর্শে এসেছেন কিনা, সেই তথ্য় জানতে অ্যাপ চালু করতে চায় ইটালি৷ সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে৷ শত শত প্রস্তাব জমা পড়েছে৷ শিগগিরই তা চালু হবে৷ তবে এই অ্যাপ ব্যবহার ঐচ্ছিক হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photos/L. Bruno
দক্ষিণ কোরিয়া
‘কোভিড-১৯ স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর মাধ্যমে করোনা রোগী ও যারা কোয়ারান্টিনে আছেন তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ এছাড়া যারা হোম-কোয়ারান্টিন মানছে না ভবিষ্যতে তাদের হাতে ইলেকট্রনিক ব্যান্ড পরানোর চিন্তা করছে দেশটি৷ কেউ এটি না পরলে তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে এবং তার খরচ ঐ ব্যক্তিকেই দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone/L. Gillieron
ভারত
করোনা রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের গতিবিধি জানতে ‘আরোগ্যসেতু’ অ্যাপ চালু করেছে সরকার৷ প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন বলে সরকার জানিয়েছে৷ এগারোটি ভাষায় অ্যাপটি চালু হয়েছে৷ এই অ্যাপে করোনা নিয়ে সচেতনতা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের উপায়ও বলা আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
জার্মানি
আপনি করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে অ্যাপল ও গুগল যৌথভাবে একটি সফটওয়্য়ার তৈরি করছে৷ মে মাসে এটি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানি এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে৷ যদিও জার্মানি একই কাজের জন্য নিজ উদ্য়োগে ‘পিইপিপি-পিটি’ নামে একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সমালোচনার কারণে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
6 ছবি1 | 6
রেনজি সরকার থেকে সরে যাওয়ায় সরকারপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ইটালির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে পারলেও উচ্চকক্ষ বা সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেননি কন্টি। ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। মঙ্গলবারই তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং প্রেসিডেন্ট তা গ্রহণও করে নিয়েছেন।
এবার কী হবে
এখনো নতুন করে সরকার গঠনের সুযোগ আছে কন্টির সামনে। নতুন জোট তৈরি করে তিনি ফের প্রেসিডেন্টের কাছে যেতে পারেন। নইলে প্রেসিডেন্ট অন্য কাউকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য আহ্বান করতে পারেন। তা না হলে ফের নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কন্টিই নতুন করে সরকার তৈরি করবেন। তাঁর জোটসঙ্গি সেন্টার-লেফট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং ফাইভ স্টার এখনো তাঁর সঙ্গে আছে। আরো একটি দলকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছেন কন্টি। তা সম্ভব হলে ফের নিজেদের সংখযাগরিষ্ঠতা সেনেটে প্রমাণ করতে পারবেন তিনি।
করোনা সমস্যা
ইউরোপের বহু দেশে করোনার টিকাকরণ জোর কদমে চললেও ইটালিতে এখনো তা খুব ভালো ভাবে হচ্ছে না। সরকারের দাবি, বড় বড় কোম্পানি তাদের সময় মতো টিকা পাঠাচ্ছে না। কন্টি ফের ক্ষমতায় এলে বেশ কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর আগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে।