ভ্রমণ, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্র করোনা ভাইরাসের প্রসারের ফলে চরম সংকটে পড়েছে৷ বিচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক স্টিমুলাস সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা যাচ্ছে৷ পেট্রোলিয়ামের মূল্য আরও কমছে৷
বিজ্ঞাপন
আপাতত গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করতে ব্যস্ত৷ ভাইরাসের প্রসারের গতি কমাতে একের পর এক দেশ ভ্রমণসহ নানা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করছে৷ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা নিশ্চিত করতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ বড় জমায়েত এড়িয়ে মানুষজন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন৷ এমন জরুরি পরিস্থিতির নেপথ্যে আরও এক সংকট প্রকট হয়ে উঠছে৷ পর্যটন, বেসামরিক বিমান চলাচল থেকে শুরু করে একাধিক ক্ষেত্র মন্দার কবলে পড়ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির উপর এমন অনিশ্চয়তার কুপ্রভাবের প্রকৃত মাত্রা সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন প্রান্তে সরকার একের পর এক কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করছে৷ ইটালির মতো গোটা দেশের ‘লকডাউন' আর ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার বার বার কেঁপে উঠছে৷ সেইসঙ্গে কমে চলেছে পেট্রোলিয়ামের মূল্য৷ ফলে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে৷ বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণার পর আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের হাতছানি দেখা দিচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার সকালে এশিয়ার পুঁজিবাজারে এই আশঙ্কার প্রতিফলন দেখা গেছে৷ বুধবার অ্যামেরিকার পুঁজিবাজারেও ব্যাপক দরপনতন ঘটেছিল৷
করোনা ভাইরাসকে ঘিরে সংকটের ফলে প্রায় সব অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই লোকসানের মুখ দেখছে৷ এর মধ্যে সৌদি আরব রাশিয়াকে শিক্ষা দিতে পেট্রোলিয়ামের মূল্য কমানোর ফলে সংকট আরও ঘনিভূত হচ্ছে৷ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের প্রসার রুখতে পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেও পুঁজিবাজার অস্থির হয়ে উঠেছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনীতির সহায়তা করতে সরকারি পর্যায়ে কিছু পদক্ষেপের ফলে কিছু সুবিধা হলেও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার জন্য তা সহায়ক হচ্ছে না৷এখনো পর্যন্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে প্রায় ১৫,০০০ কোটি ডলার মূল্যের সরকারি সহায়তার ঘোষণা করা হয়েছে৷ বর্তমান সংকটের মেয়াদ সম্পর্কেও এই মুহূর্তে কোনো ধারণা না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সম্পর্কে পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে না৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে চরম বেকারত্ব ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবার আশঙ্কাও রয়েছে৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির উপরেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য চাপ বাড়ছে৷ যদিও বেশ কিছুকাল ধরে সুদের হার প্রায় তলানিতে এসে ঠেকার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির পদক্ষেপ নেবার ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে৷ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক জরুরি বৈঠকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনায় বসছে৷
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷