করোনা প্রাদুর্ভাব কমায় জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে৷ কিন্তু কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় পর্যায়ে আবারো ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ৷ দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ এর শঙ্কা৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিম জার্মানির এক লাখ তিন হাজার বাসিন্দার ছোট এক শহর গ্যুটার্সলো৷ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে এখন নতুন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এর নাম৷
সম্প্রতি সেখানে একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ সাত হাজার কর্মীর মধ্যে ১৫৫০ জনেরই কোভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়েছে৷ বাকিদের সবাইকেও কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে৷ মঙ্গলবার শহরের সমস্ত স্কুল আর ডে কেয়ার সেন্টাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ গুটার্সলো পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়াতে৷ সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট গ্যুটার্সলো এবং তার পার্শ্ববর্তী বারেনডর্ফ শহরে লকডাউনও ঘোষণা করেছেন৷
দ্বিতীয় দফা করোনার ঢেউ শুরুর আলামত?
বিশ্বব্যাপী একদিনে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিলো ২১ জুন৷ কয়েকটি দেশে নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷ ছবিঘরে থাকছে বিস্তারিত৷ এতে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Eissa
করোনা শনাক্তের রেকর্ড
২১ জুন বিশ্বব্যাপী ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০ জনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ মহামারি শুরুর পর ২৪ ঘণ্টায় এটাই সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে, তত বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে৷ বিশ্বে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ লাখ ৫২ হাজার রোগীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে৷ মারা গেছেন ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩১ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Inderlied
জার্মানি
জার্মানিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ মারা গেছেন তিনজন৷ মাত্র দুই দিনের মধ্যে এমন বৃদ্ধির জন্য নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ জার্মানিতে এখনো পর্যন্ত মোট ১৮৯,৮২২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৮২৷ করোনা মহামারি নিয়ে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে সংসদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
চীন
রবিবার ১৮ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ এদের মধ্যে ৯ জন বেইজিংয়ের বাসিন্দা৷ বেইজিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, যাতে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে৷ দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৫৭২৷ মারা গেছেন চার হাজার ৪৩৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Retamal
অস্ট্রেলিয়া
মেলবোর্নে নতুন ১৬০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে৷ গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে কোনো রোগীর দেহে সংক্রমণের ঘটনা ছিলো না৷ কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব পরিবার অনেকদিন পর একসাথে হয়েছে তাদের মধ্যেই সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে৷ দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৭ হাজার ৪৭৪ জন, মারা গেছেন ১০২ জন৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
মেক্সিকো
২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত৷ এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু৷ মোট সংক্রমিত ১ লঅখ ৮১ হাজার৷ মৃত্যু ২১ হাজার ৮২৫ জনের৷ তবে কর্তৃপক্ষের ধারণা বাস্তব সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি৷
ছবি: Getty Images/H. Vivas
ব্রাজিল
সংক্রমিত প্রায় ১১ লাখ মানুষ৷ মারা গেছেন ৫০ হাজার ৫৯১ জন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/L. Correa
রাশিয়া
সংক্রমিত ৫ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ৷ মারা গেছেন ৮ হাজার ১০১ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/V. Maximov
ভারত
সংক্রমিত ৪ লাখ ২৫ হাজার৷ মৃত ১৩ হাজার ৬৯৯ জন৷
ছবি: Reuters/A. Dave
যুক্তরাজ্য
সংক্রমিত ৩ লাখ ৬ হাজার৷ মৃত ৪২ হাজার ৭১৭ জন৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwood
বাংলাদেশ
মোট সংক্রমিত ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন৷ মৃত ১,৫০২ জন৷ (তথ্য: ২২ জুন পর্যন্ত)
ছবি: picture-alliance/abaca/S. Kanti Das
10 ছবি1 | 10
জার্মানির আরো কয়েকটি শহরেও স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে৷ বার্লিনেরনয়কোলনে ৩৭০ টি বাড়িকে কোয়ারান্টিনের আওতায় আনা হয়েছে৷ ১২০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গ্যোটিঙ্গেনের একটি বহুতল ভবনকে লকডাউন করা হয়েছে৷ একইভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে কয়েকটি চার্চেও৷
এই পরিস্থিতি যে শুধু জার্মানির তা নয়৷ লকডাউন শিথিলের পর স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়েছে ইউরোপের প্রায় সব দেশেই৷ ওয়েলসে একটি পোলট্রি খামারে ১৭৫ জন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন৷ সেখানে লকডাউন করার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ৷ কারখানাগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে আরো কয়েকটি জায়গায়৷
ওয়লসের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. গিরি শংকর বলেন, ‘‘লকডাউন তুলে নেয়ার কারণে এমন গুচ্ছ সংক্রমণগুলো ঘটবে৷ এটা প্রত্যাশিতই৷’’ এতে অবাক না হয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার কাছের এক নার্সিং হোমেও কয়েকজনের করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে৷ কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে শুরুর দিকে সংক্রমণ ঠেকাতে পারলেও এখন সেকেন্ড ওয়েভের আশংকা করছে ইসরায়েল৷ প্রতিদিন তিনশো জন সেখানে শনাক্ত হচ্ছেন৷ পাঁচ ভাগের দুই ভাগ স্কুল আবারও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সবার আচরণের পরবির্তন না ঘটলে আবারো লকডাউন আরোপ করা হবে ইসরায়েলে৷
সেকেন্ড ওয়েভ বা করোনা দ্বিতীয় ঢেউ এর হানা সামাল দিতে লুক্সেমবুর্গের সরকার দেশটির সব মানুষের করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ছয় লাখ ২৮ হাজার মানুষকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে এই পরীক্ষা চালানো হবে৷ উদ্দেশ্য এর মাধ্যমে নতুন ‘হট স্পটগুলো’ চিহ্নিত করা এবং সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া৷