বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভুল ভাবনা। কারণ, প্রথম ঢেউই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি গোটা বিশ্ব।
বিজ্ঞাপন
এক বিখ্যাত দার্শনিক বলেছিলেন, মানব সমাজ ঘটমান বর্তমানে বাস করে। এর কোনও অতীত বা ভবিষ্যৎ নেই। করোনা মহামারির কালে প্রায় তেমনই কথা বললেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ বলে যা প্রচার করা হচ্ছে, তার কোনও অর্থ নেই। করোনা ঘটমান বর্তমান। গত কয়েক মাসে একবারের জন্যও তা মিলিয়ে যায়নি। প্রকোপ কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। ফলে দ্বিতীয় ঢেউ শব্দটি অর্থহীন।
গত মে-জুন মাসে জার্মানি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ধীরে ধীরে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করে। স্বাভাবিক জীবনযাপনও শুরু হয়। দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজও খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে সেই সময় থেকেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। একদল বিশেষজ্ঞ বলতে শুরু করেন, আপাতত করোনার প্রকোপ কমলেও তার দ্বিতীয় ঢেউ ফিরে আসবে ইউরোপে। নতুন করে আক্রান্ত হবেন ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি সহ গোটা ইউরোপের নাগরিক।
বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনই বহু মানুষ বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেননি। গরম উপভোগ করতে অনেকেই বেড়াতে গিয়েছেন। এরই জেরে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুন করে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে ইউরোপে। অনেকে বলছেন, এটাই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আধিকারিকের দাবি, একে দ্বিতীয় ঢেউ বললে ভুল হবে। কারণ, কমলেও করোনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি ইউরোপ থেকে। মানুষের বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্যই তার প্রকোপ বেড়েছে।
করোনা সংকট মোকাবিলায় অ্যাপ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে নজরে রাখতে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অ্যাপ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/A. Widak
জার্মানি
জার্মানির জনসংখ্যার মোট ২০ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছে জার্মানির করোনা বিষয়ক অ্যাপ ‘করোনা ওয়ার্ন’৷ এক কোটি ৬২ লাখবার ডাউনলোড হওয়া এই অ্যাপে রয়েছে নানা প্রযুক্তগত সমস্যা, জানাচ্ছে জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ অ্যাপ তার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতায় তখনই পৌঁছতে পারবে যখন দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ তা ব্যবহার করবে, জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়৷
ছবি: picture-alliance/H. Dittrich
ফ্রান্স
ফ্রান্সের ‘স্টপ কোভিড’ অ্যাপের মূল কাজ হচ্ছে করোনা সংক্রমিত মানুষ কোথায় রয়েছেন এবং কার সংস্পর্শে এসেছেন, তার খোঁজ রাখা৷ এই অ্যাপটি মে মাসে বাজারে আসে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর৷ জুন মাস পর্যন্ত ২০ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Samson
যুক্তরাজ্য
করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত যুক্তরাজ্যে একই ধারার অ্যাপ চালু করবার আলোচনা চলছিল মার্চ মাস থেকেই৷ ‘এনএইচএস কোভিড ১৯’ অ্যাপটি এখনও বাজারে আসেনি, কিন্তু জনগণের পক্ষে এই অ্যাপ চালু করা নিয়ে চাপ রয়েছে কর্তৃপক্ষের ওপর৷ তার কারণ, মাথাপিছু করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Department for Health and Social Care/NHSX
অস্ট্রেলিয়া
‘কোভিড সেইফ’ অ্যাপটির কাজও হচ্ছে ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ বা সংক্রমণের পথ সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সাবধান করা৷ এই অ্যাপে একটানা ২১ দিনের তথ্য রেকর্ড করা থাকে, যা ব্যবহারকারীকে জানাবে এই সময়ের মধ্যে কোনো সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছেন কি না৷ ২১ দিন পর সেই তথ্য আপনা থেকেই মুছে দেয় অ্যাপটি৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
সিঙ্গাপুর
একটানা ২৫ দিন ধরে সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য রাখে সিঙ্গাপুরের কোভিড বিষয়ক অ্যাপ ‘ট্রেস টুগেদার’৷ এই অ্যাপে রাখা তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই থাকে এবং অ্যাপের ওয়েবসাইট বলছে, মহামারী শেষ হলে এই অ্যাপও মুছে দেওয়া হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Lai
ভারত
ভারতের করোনা-অ্যাপ ‘আরোগ্য সেতু’ এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড হওয়া করোনা-অ্যাপ৷ এর কারণ ভারতের বিশাল জনসংখ্যাও৷ পাশাপাশি, এই অ্যাপ ফোনে না থাকলে এক শহর থেকে আরেক শহরে এবং এক দেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করায় নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এই অ্যাপ এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছে, জানাচ্ছে প্রযুক্তসংস্থা সেনসর টাওয়ার৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
‘এক্সপোজার নোটিফিকেশন এপিআই’, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এক এক রাজ্যের এক এক নিয়মে৷ দেশজুড়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ না থাকায় রাজ্যগুলি নিজেদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী এই অ্যাপ দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Whitehurst
চীন
করোনা সংক্রমণের উৎসকেন্দ্র চীনে রয়েছে একাধিক করোনা-অ্যাপ৷ পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে জোর দিয়েছে ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত রাখায়, সেখানে চীনের একটি অ্যাপে সংরক্ষিত থাকছে ব্যবহারকারীর চলাফেরার সম্পূর্ণ হিসাব৷ জাপান টাইমসকে এবিষয়ে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চুই শিয়াওহুই বলেন, ‘‘চীনা ও পশ্চিমা সংস্কৃতি আলাদা৷ এখানে মানুষ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে দিতে পিছপা হয়না৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
8 ছবি1 | 8
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, মানুষ যে ভাবে বাঁচতে ভালোবাসে, করোনার তা পছন্দ। সাধারণ মানুষ যত একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করবেন, বেড়াতে যাবেন, আরও বেশি লোকের সঙ্গে মিশবেন, করোনারও ছড়াতে তত সুবিধা হবে। এই বছরটা সকলকে স্বাভাবিক জীবনযাপন পরিত্যাগ করতেই হবে। টিকা না বেরনো পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলতেই হবে। কারণ, করোনা যায়নি এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চলে যাবে, এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই।
শুধু ইউরোপ নয়, গোটা পৃথিবীতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। অ্যামেরিকাতেও এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে। যদিও মার্কিন বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার বলেছেন, অ্যামেরিকা করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কাই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় এক কোটি ৬৯ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ৬৩ হাজার জনের। শুধু অ্যামেরিকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫ লাখ। উত্তর থেকে দক্ষিণ মার্কিন বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ।
চীনেও দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধরলে মঙ্গলবার সেখানে সব চেয়ে বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১০১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ভারতের পরিস্থিতিও তথৈবচ। ১৫ লাখ মানুষ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট বলছে, গ্রামে এবং বস্তি এলাকায় সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি ছড়াতে শুরু করেছে। এর অর্থ, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আইসিএমআর এর মতো বিশেষজ্ঞ সংস্থাও জানিয়েছে, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণের লক্ষ্যণ স্পষ্ট।