যুক্তরাজ্যের পর করোনার নতুন স্ট্রেইন এখন অ্যামেরিকায় ছড়াচ্ছে। নতুন একটি সমীক্ষা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
করোনার অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস এখন অ্যামেরিকায় ছড়াচ্ছে। নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি নয়দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। এই নতুন ভাইরাসের নাম বি.১.১.৭।
ইউএস সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল(সিডিসি) মনে করছে, মার্চের মধ্যে এই নতুন স্ট্রেইন ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তখন এটাই করোনার প্রধান ভাইরাস হিসাবে অ্যামেরিকায় গণ্য হবে। সিডিসি-র রিপোর্ট বেশ কিছু গবেষক ও বিশেষজ্ঞ মিলে তৈরি করেছেন।
অ্যামেরিকায় নতুন স্ট্রেইনে আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে খুব বেশি নয়। ফ্লোরিডায় ১৮৭, ক্যালিফর্নিয়ায় ১৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এই নতুন স্ট্রেইন থামাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে, অ্যামেরিকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। কারণ এই স্ট্রেইন ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি ছোঁয়াচে।
জানুয়ারির প্রথম থেকে অ্যামেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু মৃত্যুর হার এখনো যথেষ্ট বেশি। গড়ে এখনো প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালের উপরেও চাপ প্রচণ্ড রয়েছে। এই অবস্থায় সমীক্ষার রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে।
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী সেটি নিয়ে এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
সাধারণ প্রতিক্রিয়া
যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে৷ যেমন, শরীরে ইনজেকশন দেয়ার স্থানটি লাল হয় বা ফুলে যায়৷ তিনদিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা হতে পারে৷ তবে এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়৷ শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক৷ অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mark Lenninhan/AFP/Getty Images
গুরুতর প্রতিক্রিয়া
বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ যেমন, যুক্তরাজ্যে টিকা কর্মসূচি চালুর পর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইজনের অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে সতর্ক করেছে৷ তবে সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণেই করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
টিকার উপাদান
সাধারণত টিকায় দুর্বল বা মৃত ভাইরাস থাকে৷ যার মাধ্যমে শরীর সেই ভাইরাসের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ তবে করোনার টিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রথমবারের মতো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এতে কোন ভাইরাস থাকে না৷ তার বদলে কোভিড-১৯ এর জীবাণুর ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিরূপ থাকে৷ তাই দুই ধরনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুই রকম হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
বায়োনটেক-ফাইজার
অনুমোদন পর্যায়ে বায়োনটেক-ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতা সাময়িক অবসাদ আর মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন৷ এমআরএনএ ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে একজন ও ব্রিটিনে দুইজনের ত্বক লাল হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বিট্রিশ মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
মডার্না
বায়োনটেক-ফাইজারের মতোই এমআরএনএ ভিত্তিক মডার্নার টিকাটি৷ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকাগ্রহীতাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি৷ হালকা যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে সেগুলো ছিল সাময়িক৷ তবে ১০ শতাংশ অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক প্যানেল৷ অল্প কয়েকজন রোগী অ্যালার্জি ও মুখের স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগেছেন৷ তবে কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: Dado Ruvic/Reuters
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে একজন মেরুদণ্ডের প্রদাহে ভুগেছেন৷ সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার পর কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ ছিল৷ কিন্তু পরে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরীক্ষার পর জানিয়েছে সেটির কারণ ভ্যাকসিন নয়৷ এছাড়া টিকাটি নেয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ও পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যাথা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলক কম ছিল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Porzycki
স্পুটনিক ফাইভ
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরুর আগে গত আগস্টেই নিজেদের টিকা স্পুটনিক ফাইভ এর অনুমোদন দেয় রাশিয়া৷ দুই ধরনের পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে এতে৷ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জ্বর, মাথাব্যাথার মতো টিকাটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ তবে কোন গুরুতর প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত যত তথ্য জানা গেছে সেগুলোর কোনটিই আসলে পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে না৷ দীর্ঘ মেয়াদে টিকাগুলোর ব্যবহার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা অজানা৷ সেটি হয়ত সামনের মাস বা বছরগুলোতেই পরিস্কার হবে৷
ছবি: Borja Abargues/NurPhoto/Getty Images
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকায় এখন করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সবগুলি টিকাই আগের ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার কথা ভেবে তৈরি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়েছিল, চালু টিকাগুলি নতুন স্ট্রেইনকে রুখতে পারবে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তা নতুন স্ট্রেইন রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নেওয়ার পরেও জার্মানিতে কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের চিন্তা বেড়েছে।