লকডাউন আরো কড়াকড়ি করায় ঘরবন্দি জীবন হয়েছে দীঘার্য়িত৷ অনিশ্চিত এ জীবনে জার্মানদের অনেকে হয়ে উঠছে বেপরোয়া৷ তাদের কেউ পার্টি করে বা অন্যভাবে নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়ছে আর তা প্রায় সব বয়সিদের মধ্যেই৷ কয়েকদিন আগে আমার জার্মান বন্ধু উলা টেলিফোনে তার ১৯ বছর বয়সি মেয়ে লীনার কথা জানালো৷ মেয়ে আর বাড়িতে থাকতে না পেরে তিন বান্ধবীকে গাড়িতে তুলে ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ ম্যাকডোনাল্ডস-এ যায়৷ রেস্তোরাঁ বন্ধ, লীনার প্ল্যান ছিলো গাড়িতে বসে ড্রাইভ থ্রু দিয়ে খাবার নিয়ে আবার বাড়ি ফিরবে৷ কিন্তু বিধি বাম! গাড়ির ভেতরে আড্ডায় মত্ত চার তরুণীর মুখে মাস্ক না থাকায় দিতে হলো জনপ্রতি ৩০০ ইউরো জরিমানা৷ জার্মান পুলিশ বলে কথা, গাড়ির ভেতরেও ঠিকই দেখে ফেলেছে ! ২০ ইউরো বার্গারের দাম দাড়ালো শেষ পর্যন্ত ১২০০ ইউরোতে গিয়ে!
উলার ১৬ বছর বয়সি ছেলে টোবিয়াস ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে৷ তিন বন্ধু বাইরে হাঁটার সময় একে অপরের থেকে দূরত্ব দেড় মিটারের কম থাকায় প্রতিজনকে ৫০ ইউরো করে জরিমানা গুনতে হয়েছে৷ উলা বললো, আমার কপাল!
যাই হোক, আজকাল বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও করোনার নিয়ম-কানুন না মানার খবরাখবর থাকে৷ সেরকমই একটি খবর দেখলাম আজ৷ জার্মানির বাডেম বুর্টেমব্যার্ড রাজ্যের উলম শহরে এক শিশুর মা-বাবা ঘটা করে তাদের সন্তানের জন্মদিন পালন করেছেন এই কড়া লকডাউনের মধ্যে৷ আর যায় কোথায় ! সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কসহ অনেক শিশু৷ প্রাপ্তবয়স্কদের কেউ কেউ পার্টি ছেড়ে যাবে না জানালেও পরে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়৷ লকডাউনের নিয়ম লঙ্ঘন করে গতকাল বড় করে জন্মদিন উদযাপন করায় চারজন প্রাপ্তবয়স্কের বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট করা হয়েছে৷
ঘরে ইন্টারনেট নেই, তবুও চলছে লেখাপড়া
করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে অনলাইন ক্লাস৷ কিন্তু ফিলিপাইনসের কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগের অবস্থা এমন যে লেখাপড়ার জন্য একরকম যুদ্ধেই নামতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ফিলিপাইনসের পরিস্থিতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিস্থিতি কেড়ে নিয়েছে৷ অনলাইনে পড়াশোনার দিকে সবাই ঝুঁকলেও বিশ্বের বহু জায়গায় পর্যাপ্ত ইন্টারনেট পরিষেবা নেই৷ ফলে, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অসংখ্য শিক্ষার্থী৷ ফিলিপাইনসের অবস্থাও অনেকটা এমনই৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ছাদে সংযোগ
দশ বছর বয়েসি ঝায় আর চালমার বাসার ভেতরে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায় না৷ তাই করোনাকালে পঞ্চম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থীকে ছাদে উঠে চালের ওপর বসে বসেই করতে হয় অনলাইন ক্লাস৷ তার মা জানিয়েছেন, ‘‘মাঝে মাঝে আমরা সিমকার্ড পরিবর্তন করি যাতে আরেকটু ভালো সংযোগ পাওয়া যায়৷ কিন্তু সবসময় তা করার মতো টাকা হাতে থাকে না৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
সরকারের সাহায্য
ফিলিপাইনসের সরকার অন্যান্য দেশের মতোই শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতিতে ট্যাব বা মোবাইল ফোন দিয়েছে, যার সাহায্যে তারা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারে৷ কথা ছিল জানুয়ারি মাসেই স্কুল খুলবে৷ কিন্তু ফিলিপাইনসে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত৷ ফলে, আরো কিছু দিন অনলাইনেই চলবে পড়াশোনা৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পরিসংখ্যান যা বলছে
অনলাইন পড়াশোনায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলি সাফল্য পেলেও ফিলিপাইনসে বাস্তবতা ভিন্ন৷ দশ কোটি আট লাখ মানুষের দেশটিতে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগের হাতেই, অর্থাৎ মাত্র দুই কোটি মানুষের কাছে রয়েছে ইন্টারনেটের সুবিধা৷ এছাড়া আরো অনেক পরিবারেরই নেই মোবাইল কেনার সামর্থ্য৷ অন্যদিকে ইন্টারনেট না থাকায় স্কুলছুট হয়েছে সেদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ, জানাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পরিবারের ভূমিকা
এগারো বছরের লাভলি তার পরিবারের সাথে ম্যানিলার একটি কবরস্থানেই থাকে৷ মুরগি বেচে সংসার চালান তার বাবা-মা৷ বাসার মানুষের কাছ থেকে সে পড়াশোনায় সাহায্য না পেলেও তাদের পাশে, কবরের ওপরে বসেই, পড়ার কাজ শেষ করে৷ লাভলির মা জানেন, এই পরিস্থিতি পড়াশোনার জন্য অনুকূল নয়৷ তবে পরিস্তিতি মেনে নিয়েই তাকে বলতেহয়, ‘‘ব্যবসা না দেখলে ওকে খাওয়াবো কী? ও পড়াশোনা করে চাকরি পেলে তবেই আমরা এখান থেকে বেরোতে পারবো৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
পড়ার জন্য পাহাড় চড়া
কলেজপড়ুয়া মার্ক ফিলিপাইনসের বাতাঙ্গাস অঞ্চলের বাসিন্দা৷ ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তাকে কখনো জঙ্গলের ভেতর, কখনো পাহাড়ে চড়তে হয়৷ পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারনেটের খরচ জোগাতে পার্ট-টাইম কাজও করে সে৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
তবুও নাছোড়বান্দা যারা
হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অনড় মার্ক৷ তার বক্তব্য, ‘‘আমি জানি, আমরা ধনী নই, তাই পড়াশোনা শেষ করেই আমি বাবা-মায়ের ঋণ শোধ করতে চাই৷ হাল না ছেড়ে, ধৈর্যের সাথে এই কঠিন সময়েও আমি পড়ায় মন দিতে চাই৷ উন্নতি করতে চাই৷’’
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
7 ছবি1 | 7
আসলে এতদিন ঘরে থাকতে থাকতে মানুষ পাগলপ্রায়৷ কি করবে মানুষ, তেমন কিছুই তো করার নেই৷ ধীরে ধীরে অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছে৷ এমন এই পরিস্থিতিতে কারো সাথে দেখা না হলেও টেলিফোনে কিছুটা হলেও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি৷ কথাবার্তায় প্রায় সবার মধ্যেই কেমন যেন অ্যাগ্রেসিভভাব লক্ষ্য করা যায়৷ আমি নিজেও অবশ্য এর ব্যতিক্রম নই, অল্পতেই রেগে যাই৷
মানুষ এখন কতটা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠেছে তার আরেক নমুনা জার্মানির এয়ারফুর্ট শহরের এক সুপার মার্কেটের ঘটনা৷ এক লোক মাস্ক ছাড়া এক দোকানে ভেতরে ঢোকায় আরেকজন তার সাথে রীতিমতো ঝগড়া শুরু করে দেয়৷ একটু পরেই সে মাস্কটা পরে নেয় কিন্তু তাতেও মাঝ বয়সি লোকটির রাগ কমেনি৷ দোকান থেকে বের হওয়ার পর মাস্ক না পরা হেটে যাওয়া লোকটির পেছন পেছন গাড়ি নিয়ে যায় এবং গাড়ি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয়৷ ভাগ্য ভালো গাড়ির আঘাত তেমন লাগেনি তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে৷
এদিকে গতকাল মিষ্টি মেয়ে ফ্রিডিরিকের বয়স ১০ বছর হলো৷ মাত্র একজন বন্ধুকে নিয়ে জন্মদিন করায় মেয়ের খুবই মন খারাপ৷ জীবনের প্রথম "রাউন্ড বার্থ ডে” মেয়েটির কত স্বপ্ন ছিল বড় আয়োজন হবে! ফ্রিডিরিকের মা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বারবারা ম্যুলার বেশ মজা করেই কথাটা জানালেন৷