জার্মানির চার্চে হাজির পুলিশ। সেখানেই তারা প্রায় একশ জনকে পেল, যাঁরা করোনার নিয়ম না মেনে মাস্ক ছাড়াই গান গাইছেন।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার শহর হারফোর্ড। সেখানেই চার্চে উপস্থিত হলো পুলিশ। সেখানে তখন দেড়শ মানুষ। কিন্তু তার মধ্যে একশজনের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বের বিধিও তাঁরা মানেননি। পুলিশ জানিয়েছে, বিধিভঙ্গের দায়ে তাঁরা অভিযুক্ত হয়েছেন।
করোনা বিধিভঙ্গের দায়ে তাঁদের এবং উদ্যোক্তাদের ভালো রকম জরিমানা হতে পারে। করোনা বিধি অনুসারে যাবতীয় সতর্কতা নিয়ে মাত্র ২০ জন এই ধরনের অনুষ্ঠান বা প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন। তার বেশি নয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা যখন চার্চে পৌঁছয়, তখন বাচ্চা সহ একশ জন করোনার বিধি মানেননি। তাঁরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে প্রার্থনা সংগীত গাইছিলেন।
জার্মানিতে এখন করোনা রুখতে কড়াকড়ি খুবই কঠোর। ডিসেম্বরে এই কড়াকড়ির জন্য বড়দিনের মার্কেট সহ বেশ কিছু ইভেন্ট বাতিল হয়েছে।
এ বছর জার্মানিতে যেভাবে ক্রিসমাস উদযাপন
করোনা সংকট জার্মানিতে ক্রিসমাসের আমেজে কেমন প্রভাব ফেলেছে, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: picture alliance/D. Kalker
ড্রেসডেনের গির্জা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি ড্রেসডেন শহরের ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জাটি এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যের প্রতীক৷ সাধারণত, এই গির্জায় ক্রিসমাসের সময় ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ৷ এ বছর তা হবে না৷ বদলে, গির্জার অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
বাখের গির্জা
বিখ্যাত সংগীতস্রষ্টা ইওহান সেবাস্টিয়ান বাখ লাইপসিশ শহরের টোমাসকির্শে গির্জার সাথে দীর্ঘ ২৭ বছর যুক্ত ছিলেন৷ তার হাতে গড়া সেন্ট টমাস বয়েজ কয়ার আজও প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় নানা ধরনের ক্যারল পরিবেশন করে৷ এই গির্জায় জমায়েতের অনুমতি থাকলেও অন্যান্যবারের মতো হাজার হাজার মানুষ সেখানে যোগ দিতে পারবেন না৷ আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকজনই পারবেন অংশ নিতে৷
ছবি: Bachfest Leipzig/J. Schlueter
মিউনিখের ফ্রাউয়েনকির্শে
ক্রিসমাসের ভোর তিনটের সময় প্রতি বছর এই গির্জায় টানা ২০ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানো হয়৷ ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান তারাও সরাসরি সম্প্রচার করবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ সশরীরে অনুষ্ঠান উপভোগ করার অনুমতি রয়েছে মাত্র ১৩০জনের৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/A. Gravante
কোলন ক্যাথিড্রাল
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গির্জা কোলনের ক্যাথিড্রাল৷ ৫১৫ ফুট উঁচু এই ক্যাথিড্রালের ক্রিসমাসের বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষকে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ মানা হবে অন্যান্য করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Berg
রাজার ক্যাথিড্রাল
আখেন শহরের ক্যাথিড্রালটি এক হাজার ২২৪ বছর পুরোনো৷ এই ক্যাথিড্রালে এক সময় জার্মান রাজাদের অভিষেকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো৷ জনপ্রিয় এই ক্যাথিড্রালেও এবার করোনার কারণে ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মাত্র ১২০জন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
হামবুর্গের গির্জা
জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ‘মিশেল’ গির্জায় ক্রিসমাসের সময় বেশ কয়েকদিন ধরে চলে টানা প্রার্থনা৷ এ বছর গোটা প্রার্থনাটাই হবে গির্জার ভেতরে ও বাইরে খোলা আকাশের নীচে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে৷ কারণ, গুরুত্ব পাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব ও করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনের গির্জা
বার্লিনের কাইজার মেমোরিয়াল গির্জা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ আজও এই গির্জার গুরুত্ব মানুষের কাছে বেশ অনেকটাই৷ করোনাবিধি মেনে এখানে অন্যান্য বারের তুলনায় কম দর্শক ভিড় জমাবেন, কারণ, কড়াকড়ি কমানো হয়নি এখনো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
সর্বোচ্চ চূড়া যে গির্জার
বিশ্বের সবক’টি গির্জার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু চূড়ার খেতাব রয়েছে উলম শহরের ম্যুনস্টার গির্জার৷ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই স্থানে এবার ভীড় অনেকটাই কম হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ‘প্রোটেস্টান্ট গির্জা’য় ক্রিসমাস পালন করতে হলে প্রয়োজন হবে আগাম অনুমতির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
এগারোটি প্রার্থনার অনুষ্ঠান
হিলডেশহাইম ক্যাথিড্রালে নিয়ম মেনেই পালিত হবে ক্রিসমাস৷ দর্শকের ভীড় সামলাতে মোট ১১টি প্রার্থনা আযোজিত হবে৷ প্রতিবারই বজায় রাখা হবে দূরত্ব৷ একেকটি প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৮০জন৷
ছবি: Fotolia/panoramarx
নিয়ম মেনেই উৎসব
এরফুর্ট শহরের সবক’টি গির্জাতেই এবার ব্যাপক কড়াকড়ি৷ জার্মানির অন্যান্য গির্জার মতো এখানেও জারি আছে দূরত্ববিধি৷ গির্জার প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে হাতধোয়া ও জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা৷ এভাবেই সংকটের মধ্যেও সংযতভাবে উৎসব পালন করার পরিকল্পনায় জার্মানির গির্জাগুলি৷
তবে বড়দিনের আগেও জার্মানির এসেন শহরে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে লকডাউনের সময় নিয়ম ভাঙার জন্য ৬০ জনকে নোটিস দেয়া হয়েছিল। জার্মানির ১৬টি রাজ্য নিজের মতো করে করোনা নিয়ে বিধিনিষেধ চালু করতে পারে। কোনো রাজ্যই ধর্মীয় জমায়েত পুরোপুরি বাতিল করেনি। তা সত্ত্বেও বড়দিনে অনেক চার্চেই সার্ভিস বাতিল করা হয়েছিল। অনেকে অনলাইনে বা টিভিতে তা দেখিয়েছিলেন।
করোনা অতিমারির সময়ে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার বিষয়টি ছিল জার্মানির আইনসভার সদস্যদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি সবসময়ই স্পর্শকাতর। বিশেষ করে অতিমারির সময় মানুষ আরো বেশি স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। জার্মানির সংবিধানে বলা আছে, ধর্মীয় কার্যকলাপ অক্ষুণ্ণ রাখা হবে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা সাবধানে পা ফেলেছেন।