জরিপ সংস্থা ইউগভ-এর এক জরিপে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক ব্রিটিশ নাগরিক বলেছেন, করোনা মহামারির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার কাজটি কঠিন হবে৷ এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় এক হাজার ৬০০ ব্রিটিশ নাগরিক জরিপে অংশ নেন৷ এদের ৪৯ শতাংশ মনে করছেন, ২০২০ সালের মার্চের আগের জীবনে ফিরে যাওয়ার কাজটি কঠিন হবে৷ এদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ বলেছেন, আগের মতো মানুষের ভিড়ের মধ্যে যাওয়ার কাজটি সহজ হবে না৷ ১৬ শতাংশ মনে করছেন মানুষের সঙ্গে মেশা, আড্ডা দেয়ার বিষয়টি কঠিন হবে৷
ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির সদস্য জুলিয়া ফাউলকনব্রিজ জরিপের ফলাফলে অবাক হননি৷ ‘‘এমন ফলই আমি আশা করছিলাম,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ বরং ‘‘মানুষের যদি এমন বড় পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ না থাকত, তাহলে আমি অবাক হতাম৷''
ইউকে কাউন্সিল ফর সাইকোথেরাপির মুখপাত্র ও সাইকোথেরাপিস্ট ব্রেট কার বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী আমরা সবাই ট্রমার মধ্যে আছি৷ পুরো বিশ্ব একটি খুবই অনিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছে৷'' তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় আপনি যদি যুদ্ধের এলাকা থেকে দূরে থাকেন তাহলে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারেন৷ ‘‘কিন্তু করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষের সবাই একই বাতাস শেয়ার করেন,'' বলেন ব্রেট কার৷ তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় পোশাক দেখে শত্রু চেনা যায়, কিন্তু করোনার সময়ে ‘‘আপনার স্বামী কিংবা আপনার সন্তান আপনার ‘শত্রু' হয়ে উঠতে পারে৷''
পুলিশের ক্ষমতাবৃদ্ধি মানতে চান না ব্রিটেনের আন্দোলনকরীরা
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে পুলিশকে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে ব্রিটেনের প্রস্তাবিত এক আইনে৷ এর প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আন্দোলন চলছে দেশটিতে৷
ছবি: Henry Nicholls/REUTERS
‘কিল দ্য বিল’
এমন নামেই পরিচিত আন্দোলনটি৷ নানা প্রতীকে পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা৷ এই ছবিটি লন্ডনে গত তিন এপ্রিলের একটি সমাবেশ থেকে তোলা৷
ছবি: Toby Melville/REUTERS
পুলিশের ক্ষমতা
আন্দোলনকারীদের একজন মাটিতে পড়ে আছেন৷ আরেকজনকে ধরাশায়ী করার চেষ্টায় পুলিশ৷ প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে এক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে৷ যেমন, আন্দোলনের সময় এমনকি শব্দের মাত্রা পর্যন্ত ঠিক করে দিতে পারবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে আড়াই হাজার পাউন্ড জরিমানা দিতে হবে৷
ছবি: Toby Melville/REUTERS
একজোট
এই আন্দোলনে একজোট হয়েছে ব্রিটেনের বিভিন্ন দল ও সংগঠন৷ জলবায়ুকর্মী ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের আন্দোলনকারীরাও প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছেন৷ লন্ডন ছাড়াও প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Hannah McKay/REUTERS
প্রতিবাদের অধিকার
আন্দোলনকারীদের যুক্তি, প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে ৷ কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে পুলিশকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাতে সহজেই তারা প্রতিবাদকারীদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করতে পারবে৷
ছবি: Henry Nicholls/REUTERS
আন্দোলনে গতি
গত মার্চে ৩৩ বছর বয়সি এক নারীকে লন্ডনের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়৷ এই হত্যায় এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ ঘটনার পর আইনটির বিরুদ্ধে আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছে৷ বেশ কিছু জায়গায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Hannah McKay/REUTERS
লেবার পার্টির সমর্থন
আইনের বিপক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির বিভিন্ন সদস্য৷ তিন এপ্রিল লন্ডনে একটি সমাবেশে মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের নীচে দলটির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনকে বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Toby Melville/REUTERS
গণতন্ত্রের মৃত্যু!
এই আন্দোলনকারী মনে করেন আইনটি পাস হলে ব্রিটেনের গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে৷ মৃত চরিত্রের পোশাক পরে প্ল্যাকার্ডে এমন বার্তাই লিখে এনেছেন তিনি৷
ছবি: Toby Melville/REUTERS
প্রক্রিয়া
বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনা সত্ত্বেও বিলটি এরই মধ্যে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের একটি ধাপ পেরিয়েছে৷ তবে চূড়ান্তভাবে পাসের আগে সংসদ কমিটি সেটি পরীক্ষা করবে এবং হাউস অব কমন্সে এ নিয়ে বিতর্ক হবে৷
ছবি: Henry Nicholls/REUTERS
8 ছবি1 | 8
পরামর্শ
জুলিয়া ফাউলকনব্রিজ বলেন, করোনা পরবর্তী জীবন শুরুর সময় মানুষকে প্রথমে চিন্তা করে দেখতে হবে, করোনার সময় তিনি আসলে কোন বিষয়টা করতে না পারায় সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছেন৷ যেমন নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পাবে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বিয়ার পানের চেয়ে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা'' হতে পারে৷
ফাউলকনব্রিজ বলেন, যারা মনে করছেন করোনার পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটা কঠিন হবে, তাদের মনে রাখতে হবে যে, এক্ষেত্রে তারা একা নন৷ আরও অনেকেই তাদের মতো ভাবছেন৷
যারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তাদের জন্য আরেকটি পরামর্শ দিয়েছেন ফাউলকনব্রিজ৷ সেটা হচ্ছে, আগে থেকে পরিকল্পনা করা৷ সেটা হতে পারে এমন৷ যাদের সঙ্গে আপনি দেখা করতে যাচ্ছেন তাদের আগেই জানিয়ে দেয়া যে, কোন বিষয়গুলো আপনাকে নার্ভাস করে৷ দেখা হওয়ার পর কোলাকুলি না করার কথাও বলতে পারেনি আপনি৷
বিদায়, ‘লকডাউন হিরো’ ক্যাপ্টেন টম!
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা ব্রিটেনের শতবর্ষী সেই সাবেক ক্যাপ্টেন অবশেষে হার মানলেন করোনার কাছে৷ তার প্রতি কৃতজ্ঞ গোটা বিশ্ব৷
ছবি: Jason Cairnduff/REUTERS
যে কারণে শিরোনামে
গত বছর করোনা সংকট যখন যুক্তরাজ্যকে কাবু করে ফেলেছে, তখন দেশের স্বাস্থ্য কর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে আসেন শতবর্ষী টম৷ তিনি জানান, এনএইচএসের কর্মীদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ করতে নিজের বাগানে ১০০ বার হাঁটবেন তিনি৷ তাতে যে টাকা উঠবে, সব দেবেন স্বাস্থ্যকর্মীদের৷ বলেছিলেন,‘‘হিপের হাড় ভেঙে গেলেও আমি থামবো না৷’’ ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটতে থাকেন প্রতিদিন৷
ছবি: Dylan Martinez/REUTERS
ব্যাপক সাড়া
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর জন্য নিজের বাগানে হেঁটেই তিন মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা) অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি৷ সারা বিশ্ব থেকে অনেক মানুষ অর্থ দান করেন টমের অভিনব ডাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Goodall
মারা গেলেন ক্যাপ্টেন টম
‘ক্যাপ্টেন টম’ পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করেছেন৷ ১০০ বছর বয়েসি টম মঙ্গলবার করোনা সংক্রমণজনিত নিউমোনিয়ায় ভুগে লন্ডনের বেডফোর্ড হাসপাতালে মারা গেলেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়া এই সাবেক ক্যাপ্টেন করোনাকালে তার মানবিকতার, অদম্য মনের জোরের জন্য গোটা বিশ্বের নজর কাড়েন৷
ছবি: Jason Cairnduff/REUTERS
টমের জন্য শোক ও শ্রদ্ধা
করোনাকালে টম বিশ্বকে শিখিয়েছিলেন মানবিকতা ও কৃতজ্ঞতার পাঠ৷ তার মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাজ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷ দেশের বাইরে থেকেও আসছে শোকবার্তা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও তাকে স্মরণ করে টুইট করেছেন৷ উত্তর লন্ডনে টমের বাসার গেট ভরে যায় মানুষের পাঠানো ফুল ও বার্তায়৷
ছবি: Hannah McKay/REUTERS
রানির বার্তা
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত বছরই একশ বছর বয়সেও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি ওভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে অর্থ সংগ্রহ করা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অবদানের জন্য ক্যাপ্টেন টমকে নাইট উপাধি দিয়েছিলেন৷ ‘স্যার টম’ বিদায় নেয়ার পর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে শোকজ্ঞাপন করেন ব্রিটেনের রানি৷
ছবি: Chris Jackson/empics/picture alliance
ক্যাপ্টেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ক্যাপ্টেন টম শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও আলোচিত হয়েছেন একজন ‘লকডাউন হিরো’ হিসাবে৷ তাঁর কাজের প্রতি সম্মান জানাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সবাইকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় করতালির মাধ্যমে ক্যাপ্টেন টমের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাতে অনুরোধ করেন৷ ব্রিটিশ সংসদেও পালিত হয় টমের স্মৃতিতে এক মিনিট নীরবতা৷ প্রিমিয়ার লিগের খেলা চলাকালীন ফুটবল স্টেডিয়ামেও স্মরণ করা হয় তাঁকে৷
ছবি: John Sibley/REUTERS
ক্যাপ্টেনের স্মৃতিতে...
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে অসংখ্যা মানুষ একসাথে হাততালি দিয়ে স্মরণ করেন ক্যাপ্টেনকে৷ শুধু রাজনীতিকরাই নন, এতে যোগ দেন সামরিক সদস্য, খেলোয়াড়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরাও৷
ছবি: Matthew Childs/REUTERS
বিদায়, ক্যাপ্টেন টম মুর
আপামর জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় ক্যাপ্টেন টমের স্মৃতিতে যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সাজানো হয় শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের হোর্ডিঙে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে লন্ডনের বিখ্যাত পিকলি সার্কাসের চৌমাথায় টাঙানো হোর্ডিং৷ সেখানে জ্বলজ্বল করছে ক্যাপ্টেন টমের হাসিমুখ৷