করোনার প্রভাবে ভারতের শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধস নামল। বৃহস্পতিবার সকালে শেয়ার বাজার খোলার পর তা তিন হাজার ২০০ পয়েন্ট নীচে নামে৷
বিজ্ঞাপন
করোনার থাবা এ বার শেয়ার মার্কেটে। বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজার খোলার পর তা ৩ হাজার ২০০ পয়েন্ট নীচে নেমে যায়। দেশের প্রমুখ শেয়ারের দামও অনেকটাই পড়েছে। নিফটি বা দেশের প্রধান ৫০টি শেয়ারের সূচকও ৮১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭০০। দুই বছরের মধ্যে এই প্রথমবার নিফটি ১০ হাজারের কম হল। বাজার খোলার পর ১৮৭৯টা শেয়ারের দাম কমেছে, ৫৪টি অপরিবর্তিত আছে এবং ১৩৯ টি শেয়ারের দাম বেড়েছে। টাকারও অবমূল্যায়ণ হয়েছে ৭ পয়সা।
শেয়ার বাজারে এই ধস নিঃসন্দেহে চিন্তার কারণ। প্রশ্ন হল, এই ধসের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান কারণ করোনা ভাইরাস। শেয়ার বিশেষজ্ঞ গৌরব দুয়া বলেছেন, ''বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও করোনাকে মহামারি বলে ঘোষণা করেছে। তার ফলে বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত। গোটা বিশ্বেই শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। ভারতীয় অর্থনীতিতে আগেই মন্দা শুরু হয়েছিল। তার ওপর করোনার আতঙ্ক যুক্ত হওয়ায় এই অবস্থা।'' আইডিবিআই ক্যাপিটালের প্রধান গবেষক এ কে প্রভাকর জানিয়েছেন, ''শেয়ার বাজার এমনিতেই তেজি ছিল না। তার ওপর করোনার প্রভাব পড়েছে। ভারতেও একই অবস্থা হয়েছে।''
শেয়ার বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে অ্যামেরিকার নিষেধাজ্ঞা। ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্য বাদে ইউরোপের বাকি দেশের লোকের অ্যামেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। তাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পর অ্যামেরিকায় শেয়ার সূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। জাপানে শেয়ার সূচক পড়েছে চার শতাংশের বেশি। এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন জায়গায় পৌঁছেছে জাপানের শেয়ার বাজার। ভারতও যাবতীয় ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার প্রভাব শেয়ার বাজারে পড়ছে বলেই বিশেজ্ঞদের একাংশের ধারণা।
পর্যটনে কেমন প্রভাব ফেলছে করোনা?
করোনা-আক্রান্ত দেশ থেকে আসা-যাওয়া করার বিষয়ে জারি হয়েছে নানা বিধি নিষেধ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
সীমান্তে কড়া পাহারা
চেক প্রজাতন্ত্র ও পোল্যান্ডের সাথে জার্মানির সীমান্তে বসেছে কড়া পাহারা৷ ৯ মার্চ থেকে জার্মানিতে পুলিশের সাথে ডাক্তারদের একদল যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন৷ জার্মান সরকার চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইটালিতে যাওয়া নিয়ে আরো বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kube
বিপদে ইটালি
৮ মার্চ থেকে উত্তর ইটালি থেকে সব ধরনের পথ বন্ধ রেখেছে সরকার৷ সেখানের দেড় কোটি বাসিন্দা বর্তমানে আটকে৷ মিলান, ভেনিসসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থল রয়েছে ইটালির উত্তরাঞ্চলে৷ এই মুহূর্তে গোটা ইটালিতে বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত জাদুঘর, সিনেমা হল ও থিয়েটার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Furlan
সমুদ্রভ্রমণে ঝুঁকি
থাইল্যান্ড, মালয়শিয়ার মতো যে দেশগুলিতে সমুদ্রভ্রমণ বড় ভূমিকা পালন করে, সেখানে জারি হয়েছে বাড়তি সতর্কতা৷ বেশ কিছু ক্রুজ বা প্রমোদতরীকে ঘাটে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না সংক্রমণের আশঙ্কায়৷ ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ৩ হাজার যাত্রীবাহী গ্র্যান্ড প্রিন্সেস তরীর মোট ১৯জনের শরীরে পাওয়া গেছে করোনা সংক্রমণ৷ প্রমোদতরী এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
এশিয়াতে পর্যটনে বড় ধাক্কা
চীন থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর ফলে সেখানের পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের আঘাত এসেছে৷ এছাড়া, কাম্বোডিয়াতেও কমেছে পর্যটকদের হার৷ ৯ মার্চ থাইল্যান্ডের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ৪৪ শতাংশ কমেছে পর্যটকদের আসার হার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Taga
ভারতে কী কী বিশেষ বিধিনিষেধ?
করোনা-আক্রান্ত দেশগুলি থেকে ভারতে প্রবেশ করা নিয়ে জারি হয়েছে নানা কড়াকড়ি৷ শুধু তাই নয়, ভারতের সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিদেশ যেতে চাওয়া যাত্রীদের জানাতে হচ্ছে এর আগের দুই সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pavani
বাংলাদেশ কী করছে?
করোনা-আক্রান্ত ১০২টি দেশের মধ্যে ৬৫টি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে বিদেশ থেকে আগত সকল যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে৷
ছবি: A. Goni
6 ছবি1 | 6
কিন্তু করোনাই কি ভারতীয় অর্থনীতির পতনের একমাত্র কারণ? বিরোধীদের বক্তব্য, সন্দেহ নেই, করোনাশেয়ার বাজার ধসের একটা কারণ। কিন্তু শুধু সে কারণে ভারতীয় অর্থনীতির এই বেহাল দশা নয়। তাঁদের বক্তব্য, সরকার অর্থনীতি সামলাতে পারছে না। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী সরকার ভাঙানোর খেলা থেকে ফুরসত বার করে যদি এই সব বিষয়েও কথা বলেন, তাহলে ভালো হয়।'' তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইঞা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''শেয়ার বাজারে ধস নামার অন্যতম কারণ করোনা হতে পারে, তবে সেটা ছোট কারণ। আজ না হোক, কাল শএয়ার বাজারে ধস নামতোই কারণ, দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। এ বছর রাজস্ব আদায় অনেক কম হয়েছে। জিএসটি, সিজিএসটি, এসজিএসটি সবই কম আদায় হয়েছে। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। সরকার তা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাঙ্কে পরিশেোধ না দেওয়া ঋণের পরিমাণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি এর কারণ।'' সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এখন অজুহাত হিসাবে সব ব্যর্থতার পিছনেই করোনা ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে।''
এটা ঘটনা, বিরোধীরা সুযোগ পেলেই সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে। আবার এও ঠিক, ভারতীয় অর্থনীতির হাল নিয়ে সম্প্রতি বিশেযজ্ঞরা প্রভূত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। উৎপাদন শিল্প থেকে শুরু করে প্রচুর ক্ষেত্র মার খাচ্ছে। এই সব সূচক বুঝিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় অর্থনীতি প্রবল চাপে রয়েছে। ক্রমশ তা মন্দার দিকে চলে যাচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা। ফলে পরিস্থিতি চিন্তাজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। শেয়ার বাজারেও তার প্রতিফলন ঘটছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)
জার্মানির জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব
জার্মানিতে করোনার সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে৷ যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে আনতে হচ্ছে নানা পরিবর্তন৷ দর্শকহীন ফুটবল ম্যাচ বা ফ্লাইট বাতিল, অনুষ্ঠান বা মেলা স্থগিত কিংবা গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, সবই হচ্ছে করোনার প্রভাবে৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
খাদ্য সহায়তা বন্ধ
জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে৷ টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপারের তাক তো খালিই থাকছে৷ এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Matzka
ফাঁকা স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা৷ যে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে৷ স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে খালি স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল লীগের ম্যাচ আয়োজন করতে ক্লাব ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg
একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল
করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
এখনো খোলা স্কুল
ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
এশীয়রা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন
চীনের উহান নগরীতে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়৷ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকান এড়িয়ে চলছেন৷ এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
এয়ারলাইন ব্যবসায় ভাটা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে; বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর৷ জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০ উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গাড়ি উৎপাদনে ধস
ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে৷ জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/J. Meyer
পর্যটক নেই
জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন৷ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে৷ আয়ও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Wurtscheid
সীমান্তে পরীক্ষা
ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে৷ সোমবার পর্যন্ত সেখানে ১১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র৷