করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জার্মানির নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে দেশটির বাসিন্দারা৷ তবে, দাবি উঠেছে এসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় পুরো দেশ লকডাউন বা সান্ধ্যআইন জারি না করলেও দু'জনের বেশি মানুষকে একসঙ্গে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি৷ পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন, স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে৷ এছাড়া সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ ঘরের বাইরে যেকোনো স্থানে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের দূরত্ব দেড় থেকে দুই মিটার বজায় রাখার নির্দেশনাও জারি করা হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় সীমান্ত ও জরুরি নয় এমন সব দোকানপাট৷ একইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহে বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনা টেস্টও করা হচ্ছে৷
জার্মানির উদ্যোগে সন্তুষ্টি, আক্ষেপ
জার্মানির কয়েকজন বাসিন্দা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, জার্মানির এসব উদ্যোগে তারা সন্তুষ্ট৷ দেশটির সাবেক রাজধানী বন শহরের বাসিন্দা আসাদ আহমেদ টিপু এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জার্মানি যদিও দেরি করে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তবুও খুবই জরুরি ছিল এসব পদক্ষেপ নেয়া৷’’
৪০ বছর আগে উচ্চশিক্ষা নিতে জার্মানিতে আসেন টিপু৷ বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে টিপু বলেন, ‘‘মানুষের জীবন ব্যবসা থেকে বেশি মূল্যবান৷ তাই জার্মানিতে বর্তমানে কার্যকর নিষেধাজ্ঞাগুলো অতিশীঘ্রই তুলে দেয়া ঠিক হবে না৷ বরং নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷
‘‘কিন্ডারগার্টেন-স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় শীঘ্রই খোলা একেবারেই উচিত হবে না৷ কারণ শিক্ষার্থীরা করোনা ভাইরাসে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাদের বাবা মা, দাদা দাদিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ তাদের ক্লাস এক সেমিস্টার পেছালে তেমন কোন ক্ষতি হবে না৷’’
জার্মানির তথ্যপ্রযুক্তিখাতে চাকুরিরত বেলাল ইব্রাহিম জার্মানির নেয়া উদ্যোগগুলোতে বেশ সন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপের দেশটি প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই করেছে যেটা আমরা পরিসংখ্যানে দেখতে পাচ্ছি৷ এদেশে করোনায় মৃতের হার অত্যন্ত কম৷’’
তবে, বনের আরেক বাসিন্দা সিন্ডি ব্যাংকমান মনে করেন, করোনা সংক্রমণের হার কমাতে বর্তমান উদ্যোগগুলো কার্যকর হলেও এটাই সঠিক পন্থা কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন কোন উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল যা আমাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি বন্ধ না করেও কার্যকর হতো৷ যেমন, এরকম উদ্যোগ যদি নেয়া হতো যে যারা বাড়ির বাইরে যাবে তারা সুরক্ষা মাস্ক ব্যবহার করবে এবং যাদের মধ্যে কোন রকম সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেবে তারা বাড়িতে থাকবে – তাহলে সবকিছু একেবারে বন্ধ না করলেও চলতো৷’’
জার্মানির জীবনযাত্রায় করোনার প্রভাব
জার্মানিতে করোনার সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে৷ যার প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে আনতে হচ্ছে নানা পরিবর্তন৷ দর্শকহীন ফুটবল ম্যাচ বা ফ্লাইট বাতিল, অনুষ্ঠান বা মেলা স্থগিত কিংবা গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়া, সবই হচ্ছে করোনার প্রভাবে৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
খাদ্য সহায়তা বন্ধ
জার্মানিতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর সুপারশপ ও খাবারের দোকানগুলোতে লম্বা লাইন ধরে লোকজন নিত্যপণ্য কেনা শুরু করে৷ টিনজাত খাবার এবং টয়লেট পেপারের তাক তো খালিই থাকছে৷ এ অবস্থায় দেশটিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Matzka
ফাঁকা স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় ভিড় এড়িয়ে চলা৷ যে কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক আয়োজন বাতিল হয়ে গেছে৷ স্বাস্থ্য ‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ‘ বিবেচনা করে খালি স্টেডিয়ামে জার্মান ফুটবল লীগের ম্যাচ আয়োজন করতে ক্লাব ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/O. Berg
একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল
করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর জার্মানিতে একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা স্থগিত বা বাতিল করা হচ্ছে৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাইপৎশিশ বইমেলা, মুজিকম্যাসে ফ্রাঙ্কফুর্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
এখনো খোলা স্কুল
ইটালিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ জার্মান সরকার এখনো এই সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ যদিও দেশটির অন্তত ১০০টি স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার করোনার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাডেন-ভ্যুটের্নবের্গ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিতের কথা ভাবছেন৷
ছবি: picture-alliance/SvenSimon/F. Hoermann
এশীয়রা বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন
চীনের উহান নগরীতে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়৷ যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ করোনা আতঙ্কে পশ্চিমা দেশগুলোতে লোকজন শুধু চীন নয় বরং এশীয় রেঁস্তোরা ও দোকান এড়িয়ে চলছেন৷ এশীয় চেহারার কারণে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে৷ লাইপৎশিশে বুন্দেস লিগার ম্যাচ দেখতে যাওয়া একদল জাপানিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
এয়ারলাইন ব্যবসায় ভাটা
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে; বিশেষ করে এয়ারলাইনগুলোর৷ জার্মানির এয়ারলাইন লুফথান্সার ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তাদের প্রায় ১৫০ উড়োজাহাজ বসে আছে, বাতিল হয়েছে সাত হাজার ১০০র বেশি ফ্লাইট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
গাড়ি উৎপাদনে ধস
ডিসেম্বরের শেষ দিকে উহানে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর জানুয়ারি থেকে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ আছে৷ জার্মানির গাড়ি উৎপাদন শিল্পেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/J. Meyer
পর্যটক নেই
জার্মানির পর্যটন খাতে করোনার প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন৷ সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর ৭৬ শতাংশের বেশি হোটেল ও রেঁস্তোরা তাদের বুকিং বাতিল হওয়ার কথা জানিয়েছে৷ আয়ও একইভাবে হ্রাস পেয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Wurtscheid
সীমান্তে পরীক্ষা
ইটালি ও ফ্রান্সের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে৷ সোমবার পর্যন্ত সেখানে ১১৩৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন৷ যার প্রেক্ষিতে জার্মান সীমান্ত দিয়ে আসা গাড়ির যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা শুরু করেছে পোল্যান্ড ও চেকপ্রজাতন্ত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
9 ছবি1 | 9
জার্মানির মনোচিকিৎসা খাতে কর্মরত এই নারী বলেন, ‘‘জার্মানি সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করেছে তাহচ্ছে সময়মতো করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাটেরিয়ালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করা৷ দেশটি এই সংকট একটা লম্বা সময় অবধি গ্রাহ্য করেনি৷’’
সাময়িক আর্থিক ক্ষতি, সহায়তা
মিশর থেকে তিন বছর আগে জার্মানিতে আসা বেলাল স্বীকার করেছেন জার্মানির আরোপ করা বিধিনিষেধের কারণে শুধু আর্থিক নয়, আরো নানাভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তিনি৷ তার কথায়, ‘‘আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশেও যেতে পারছি না৷ তবে, আমি কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি, আমার সেটা দরকার নেই৷’’
প্রসঙ্গত, করোনার কারণে আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে সহায়তা করছে জার্মান সরকার, এজন্য বড় অংকের উদ্ধার তহবিলও ঘোষণা করেছে দেশটি৷ জার্মানির গ্রিন পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ভেয়ার্ল শহরের শাহাবুদ্দিন মিয়া জানিয়েছেন, করোনার কারণে তাঁর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের কাছ থেকে নয় হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তিনি৷ তবে, ব্যবসার ক্ষতি হলেও বর্তমান নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো বাড়ানোর পক্ষে মিয়া৷
তিনি বলেন, ‘‘এপ্রিলের পরেও নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে হবে৷ কারণ আক্রান্তের সংখা কমাতে আরও সময় লাগবে৷ আমার মনে হয় জুন মাসের শেষাবধি সম্ভব হবে৷’’
সদ্য মা হওয়া সিন্ডি ব্যাংকমানের ক্ষতিটা অবশ্য অন্যত্র৷ তার কথায়, ‘‘আমি আমার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারছি না৷ আমার মা এবং ভাইবোনেরা এখনো আমার সন্তানকে দেখতে আসতে পারেনি৷’’
‘নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন’
জার্মানির রাজধানী বার্লিনের দুই বাসিন্দা করোনা মোকাবিলায় জার্মানির নেয়া উদ্যোগে কিছু ঘাটতি দেখছেন৷ মিতালি মুখোপাধ্যায় মনে করেন, জার্মানি সঠিক সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানির উদ্যোগে ততটা সন্তুষ্ট নই, যতটা হব ভেবেছিলাম৷ ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি প্রথম দিকে থেকেও নুন্যতম প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে পারেনি৷’’
বার্লিনের আরেক বাসিন্দা ওয়ারেসুল মাহবুব জানিয়েছেন, করোনার কারণে জার্মানিতে বিনা নোটিশে চাকুরি হারানোর ঘটনা ঘটেছে যা তিনি অতীতে কখনো দেখেননি৷
বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমি বেশ কয়েকদিন দেখেছি অনেকেই নিয়ম না মেনে ৩-৪ জন একসাথে ঘোরাফেরা করছেন৷ সেগুলো মনিটর করার জন্য কাউকে দেখিনি৷ এছাড়া অনেকেই বিনা নোটিশে চাকরি হারিয়েছেন৷’’
সিন্ডি ব্যাংকমানের মতে, করোনা সংকট সামগ্রিকভাবে গোটা মানবজাতিকে একটি ধাক্কা দিয়েছে৷ আর এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা হচ্ছে আমাদের খুব ভালোভাবে তৈরি সামাজিক কাঠামো আসলে অত্যন্ত নাজুক এবং খুব সহজে ভেঙ্গে পড়তে পারে৷ আমাদের তাই ভবিষ্যতে বিভিন্ন সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো ভালো পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিতে হবে৷’’
উল্লেখ্য, জার্মানির নানা বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশটিতে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার কমানো গেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ সরকারি হিসেবে দেশটিতে বুধবার অবধি নিশ্চিতভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০৩,২২৮৷ আর মৃতের সংখ্যা ১,৮৬১, যা মোট আক্রান্তের এক দশমিক আট শতাংশ৷ বেসরকারি হিসেবে অবশ্য আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা আরো বেশি৷
এক নজরে জার্মানির ১৬ রাজ্য
এক শতকে দুই বিশ্বযুদ্ধ, নাৎসিবাদের উত্থান, দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কয়েক দশক পর পুনরেকত্রীকরণ, নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে জার্মানি৷ এখন ইউরোপের নেতৃত্বে থাকা দেশটিতে রয়েছে ১৬টি রাজ্য৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এ রাজ্যটিতে ফ্রান্স এবং সুজারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে৷ সুবিশাল ব্ল্যাক ফরেস্ট এবং হাইডেলবার্গ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখতে অনেকের পছন্দ এই রাজ্য৷ রাজ্যের রাজধানী স্টুটগার্ট৷
বাভারিয়া
জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখ৷ দেশটির ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ জুড়ে এ রাজ্য৷ জার্মানির অন্য সব অঞ্চলের তুলনায় বাভারিয়ার সংস্কৃতি বেশ আলাদা, এমনকি ভাষাও৷ আল্পসের সৌন্দর্য দেখতে, বিয়ার পানের উৎসব অক্টোবরফেস্ট দেখতে বাভারিয়া আসতেই হবে৷
বার্লিন
জার্মানির রাজধানী বার্লিন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পশ্চিম ও পূর্বে ভাগ করা হয় জার্মানি৷ বার্লিন ওয়ালের মাধ্যমে ভাগ হয় বার্লিনও৷ কিন্তু বহু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এখন বার্লিনকে মনে করা হয় জার্মানির সবচেয়ে পরিবর্তনশীল এলাকা হিসেবে৷ রাজধানী হিসেবে বার্লিন পেয়েছে রাজ্যের মর্যাদা৷
ব্রান্ডেনবুর্গ
রাজধানী বার্লিনকে ঘিরে অবস্থিত ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্য৷ বেশ কিছু চোখ ধাঁধানো প্রাসাদ, রোমান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে এ রাজ্য জুড়ে৷ ব্রান্ডেনবুর্গের রাজধানী পটসডাম৷
ব্রেমেন
জার্মানির সবচেয়ে ছোট রাজ্য ব্রেমেন৷ জনসংখ্যার দিক দিয়েও সবচেয়ে ছোট এটি৷ তবে ঐতিহ্যের দিক দিয়ে অন্য কোনো রাজ্যের চেয়ে কম নয় এটি৷ মাত্র দুটি শহর রয়েছে রাজ্যটিতে- ব্রেমেন এবং ব্রেমারহাভেন৷
হামবুর্গ
উত্তর জার্মানির এই শহরটিও পেয়েছে রাজ্যের মর্যাদা৷ শুধু বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাই নয়, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ও নর্ডিক দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখে এই বন্দরনগরীটি৷
হেসে
হেসে রাজ্যের রাজধানী ভিসবাডেন৷ রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট৷ জার্মান সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাঙ ফন গ্যোয়েটের জন্ম এই শহরেই৷
লোয়ার সাক্সনি
নর্থ সি বা উত্তর সাগরের পাড়ে অবস্থিত এই রাজ্য৷ রাজ্যটির রাজধানী হানোফার৷ ছড়িয়ে থাকা সমুদ্রসৈকতের কারণেই অনেক জার্মানের কাছে ছুটি কাটানোর জন্য এই রাজ্যটি পছন্দের৷
মেকলেবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া
বাল্টিক সাগরের পাড়ে অবস্থিত এ রাজ্যটির রাজধানী শ্ভেরিন৷ রাজ্যটির সাগরপাড়ে এত বেশি রিসোর্ট রয়েছে, মজা করে রাজ্যটিকে মাঝেমধ্যে বার্লিনের বাথটাবও বলা হয়৷
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া
নানা সংস্কৃতির সফল সম্মীলন ঘটেছে এ রাজ্যে৷ এ রাজ্যের রাজধানী ড্যুসেলডর্ফ৷ বিভক্ত জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির রাজধানী বন শহরও এই রাজ্যেই অবস্থিত৷
রাইনলান্ড-পালাটিনেট
প্রতিবেশী তিন দেশ বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যের৷ রাজ্যটির রাজধানী মাইনৎস৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ওয়াইন প্রস্তুতকারক অঞ্চলগুলোর অন্যতম এটি৷
সারলান্ড
রাজ্যটির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সার নদীর নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে এ রাজ্যের৷ লুক্সেমবার্গ ও ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্তে এ রাজ্য অবস্থিত৷ ফরাসি ও জার্মান সংস্কৃতির মিলন ঘটেছে এ রাজ্যে৷ এর রাজধানীর নাম সারব্র্যুকেন৷
শ্লেভিগ-হোলশ্টাইন
ডেনমার্ক সীমান্তে অবস্থিত জার্মানির এ রাজ্য৷ রাজ্যটির দুই পাশে রয়েছে দুই সাগর- একদিকে উত্তর সাগর, অন্যদিকে বাল্টিক সাগর৷ এ রাজ্যের রাজধানী কিল৷
সাক্সনি-আনহাল্ট
এ রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য৷ এক রোমান সম্রাটের সমাধি, প্রাচীন দুর্গ ও প্রাসাদ এবং মার্টিন লুথারের জন্মস্থানও এই রাজ্যে৷
সাক্সনি
সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের পাশেই অবস্থিত সাক্সনি রাজ্য৷ পূর্ব জার্মানির এ রাজ্যটি বিভক্ত জার্মানির সমাজতান্ত্রিক অংশে ছিল৷ পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এ রাজ্যটির, রাজধানী ড্রেসডেন৷
ঠুরিঙ্গিয়া
ভার্টবুর্গ, ভাইমার, গ্যোটে, গ্রোপিয়াসসহ নানা বিখ্যাত জার্মানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পূর্ব জার্মানির রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়ার নাম৷ রাজ্যের রাজধানীর নাম এরফুর্ট৷