সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণা শেষ করেছেন৷তাঁরা জানতে পেরেছেন, যে দেশগুলোতে যক্ষ্মার টিকা দেয়া বাধ্যতামূলক, সেসব দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু কম হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজি (এনওয়াইআইটি)-র গবেষকরা বলছেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি (১৩,৯১৫ জন) মানুষ মারা যাওয়া ইটালিতে কখনো সার্বজনীনভাবে যক্ষার টিকা (বিসিজি) দেয়া হয়নি৷সেখানে শুধুমাত্র যাঁদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয় তাঁদের এই টিকা দেয়া হয়৷
সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও (২,৪৫,৫৭৩ জন) ইটালির মতোই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বিসিজি টিকা দেয়া হয়৷
এনওয়াইআইটির গবেষণাটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷অন্য গবেষকদের পর্যালোচনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে সেটি রাখা হয়েছে৷
যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়তে ১৯২০-এর দশকে বিসিজি টিকা আবিষ্কার করা হয়েছিল৷বর্তমানে বিশ্বের ১৩ কোটির বেশি শিশুকে প্রতিবছর বিসিজি টিকা দেয়া হচ্ছে৷
করোনাবিরোধী যুদ্ধে বিজ্ঞান
03:10
সাধারণত একটি টিকা একটি নির্দিষ্ট প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে কার্যকর হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কাউকে কোনো রোগের টিকা দিলে সেটি শুধু নির্দিষ্ট ঐ রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে, যাকে বলে ‘অ্যাডাপ্টিভ ইমিউন সিস্টেম’৷
কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, বিসিজি টিকা হয়ত এর চেয়ে আরেকটু বেশি কার্যকর৷তাঁদের ধারণা, এই টিকা হয়ত যক্ষ্মার জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার পাশাপাশি ব্যাক্তির ‘ইনেট ইমিউন সিস্টেম'ও শক্তিশালী করতে পারে৷ এটি সেই ইমিউন সিস্টেম, যা শরীরে কোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলার চেষ্টা করে৷
এ কারণে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসে করোনা মোকাবিলায় বিসিজি টিকা কতখানি কার্যকর তা জানার চেষ্টা চলছে৷এই টিকা করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত লক্ষণ কমাতে পারে কিনা তা জানতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা৷
অস্ট্রেলিয়ার প্রায় চার হাজার হাসপাতাল কর্মীর উপর এই টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে৷
বিসিজি টিকার কার্যকারিতা জানতে কয়েক মাস লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
করোনার উপস্থিতি জানা যায় যেভাবে
করোনা ভাইরাস শরীরে আছে কি না, তা কীভাবে জানতে পারেন ডাক্তাররা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Ruvic
কাকে পরীক্ষা করা হয়?
সংক্রমণপ্রবণ জায়গায় থাকলেই কোনো ব্যক্তিত্বকে করোনা ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করার দরকার নেই৷ সর্দিকাশি থাকলেও যে এই পরীক্ষা করতেই হবে, এমনটা নয়৷ কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকার কোনো নির্দিষ্ট কারণ না পাওয়া গেলে তখনই করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরীক্ষা করা হবে বলে জানাচ্ছে জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Matthews
কেমন এই পরীক্ষা?
গলা বা গলা ও নাকের অংশ থেকে তরল নমুনা নেওয়া হয়৷ তারপর সেই নমুনা বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে যে সেখানে করোনা ভাইরাস আছে কি না৷ এই পরীক্ষা করতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে৷ জার্মানিতে এই পরীক্ষা করাতে কোনো খরচ লাগেনা, কারণ তা রোগীর নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Coffrini
আক্রান্তদের পরীক্ষার ফলাফল জানানো
নমুনা সংগ্রহ করা থেকে পরীক্ষাগারে সব রকমের যাচাই-বাছাই হওয়া থেকে সবশেষে সেই পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তারের কাছে পৌঁছানো- এই পুরো প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে এক থেকে দুই দিন৷ এরপর সেই খবর রোগীকে জানানো ডাক্তারের দায়িত্ব৷ আলাদা ঘরে অন্যান্যদের থেকে দূরে বিশেষ সুরক্ষাবিধি মেনেই করোনা-আক্রান্তের সাথে দেখা করবেন ডাক্তার৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগীর বাসায় গিয়েও তা জানানো যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কতটা নির্ভুল এই পরীক্ষা?
প্রথম চেষ্টায় করোনা ভাইরাস ধরা না পড়া মানেই যে শরীরে এই সংক্রমণ নেই, তা নয়৷ যদি নমুনা সংগ্রহে কোনো ফাঁক থেকে যায়, তাহলেও সংক্রমণ ধরা পড়বে না৷ সে কারণেই সংক্রমণ থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের একাধিকবার এই পরীক্ষা করাতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/
অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কি?
এই পরীক্ষা সঠিকভাবে করতে উন্নতমানের পরীক্ষাগার ও দক্ষ বিশেষজ্ঞ দরকার, যা অনেক জায়গায় নেই৷ চীনের মতো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত দেশেও নেই এই প্রযুক্তি৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকাতেও পরীক্ষার নমুনা সমন্বয়ে রয়েছে গাফিলতি৷ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে নতুন প্রযুক্তি উঠে আসলেও তা এখনও ব্যবহারিক পর্যায়ে পৌঁছয়নি৷