1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে ১০ কোটি মানুষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ জুন ২০২০

করোনায় বাংলাদেশের ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষের আয় কমে গেছে৷ আর পরিবার হিসেবে আয় কমেছে শতকরা ৭৪ ভাগ পরিবারের৷ এখন প্রধান কাজ হলো আয় যাতে না কমে তার ব্যবস্থা করা৷ আর সেটা না করা গেলে দারিদ্র্য আরো বাড়বে৷

ছবি: DW/S. Hossain

ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় করোনাকালে বাংলাদেশের মানুষের আর্থনৈতিক অবস্থার এই চিত্র পাওয়া গেছে৷ সমীক্ষায় আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা এবং গবেষণা ব্যবহারের পাশাপাশি একটি জরিপও করা হয়৷ গত ১৫-১৮ এপ্রিলের সময়ের মধ্যে দেশের ২৫টি জেলার ৯৬২ জনের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে তথ্য নেয়া হয়৷ আর তাদের বাছাই করা হয় দৈব চয়নের ভিত্তিতে৷
‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শিরোনামে এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী এই করোনার সময় চাকরি হারিয়েছেন৷ তাদের একটি অংশ এরইমধ্যে দেশে ফিরেছেন৷ বাকিরা ফেরার অপেক্ষায়৷
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা ১০ কোটিরও বেশি মানুষের মধ্যে পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে আছেন৷ যাদের এখন দৈনিক আয় দুই ডলারের কম৷ তাদের মধ্যে চার কোটি ৭৩ লাখ উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং তিন কোটি ৬৩ লাখ মানুষ উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন৷
যেসব পরিবার থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৪.৮ শতাংশ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন৷ গত মার্চ থেকে মে মাসে তাদের পারিবারিক উপার্জন ৭৪ ভাগ কমে গেছে৷
এই সময়ে পোশাক খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে৷ তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি ২০১৯-এর এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ কমেছে৷
গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে এক হাজার ১১৬টি কারখানা কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ ২২ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন৷
সমীক্ষায় দেখা যায়, করোনাকালে অনলাইন বা ডিজিটাল শিক্ষায় অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ দেশে মাত্র ৩৪ শতাংশ পরিবারের স্মার্টফোন আছে৷ টিভি দেখার সুযোগ আছে ৫৪ শতাংশ পরিবারের৷ এর বাইরের শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে৷

শহরের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: কে এ এম মোর্শেদ

This browser does not support the audio element.

সার্বিকভাবে এই করোনায় অর্থনৈতিক এবং সাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷তাদের পরিবারের উপার্জনশীল সদস্যের মৃত্যু হলে নারী ও শিশুদের মধ্যে অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা সৃষ্টি হবে৷
সমীক্ষায় আরো বলা হয়, দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না৷
তাদের মতে, কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভাজন তৈরি করেছে৷
এই সমীক্ষার সাথে সরাসরি জড়িত ব্র্যাকের সিনিয়র পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ বলেন, ‘‘এই জরিপটি এপ্রিলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে৷ আমাদের আরো কয়েকটি সমীক্ষার কাজ চলছে৷ আমরা করোনায় কৃষক এবং সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আরো দুইটি সমীক্ষার কাজ সর্বশেষ তথ্য দিয়ে করছি৷ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নিয়ে সমীক্ষা করা হচেছ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে এখনকার পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘এখন গ্রামের দারিদ্র্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷ শুরুতে তারা বিপর্যস্ত বেশি ছিলো৷ বোরো ধান উঠে যাওয়ায় তারা কিছুটা সামলে উঠেছে৷ কিন্তু শহরের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ কারণ এখানে ইনফর্মাল সেক্টরের সাথে জড়িত মানুষগুলো এখনো কাজে ফিরতে পারেনি৷’’
তিনি জানান, সরাসরি মানুষের কাছ থেকে স্যাম্পেলিং ছাড়াও নানা অর্থনৈতিক জরিপের তথ্য তারা এসব সমীক্ষায় ব্যবহার করছেন৷ এনিয়ে তাদের মোট দুইটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে৷

পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘ধান চালের বাইরে কৃষক শব্জি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে৷ পোলট্রিও ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে৷ তবে সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই চেইনে৷ সেটার উন্নতি হলে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে৷ আর শহরে তো দোকান পাট খুললেও মানুষ সেখানে তেমন যাচ্ছেনা৷ হোটেল রোস্তোরা খুললেও সেখানে গ্রাহক নেই৷ ফলে শহরে এইসব সেক্টর নির্ভর মানুষগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷’’
বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, এই সমীক্ষায় বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে৷ শতকরা ৭৪ ভাগ না ৭০ ভাগ সেটা নিয়ে কথা হতে পারে৷ কিন্তু তাতে বাস্তব অবস্থার হের ফের হবেনা৷
তার মতে, ‘‘এখন মানুষের আয় যাতে আর না কমে সেই দিকে প্রথম নজর দেয়া প্রয়োজন৷ বাড়ানোর পরিকল্পনা পরে করা  যাবে৷ আর তা করতে হলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা যেসব সেক্টরে কম সেখানে জোর দিতে হবে৷ এখন অনলাইন বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে৷ সেখানে সরবরাহ ও হ্যান্ডেলিং-এ লোকজনকে কাজে লাগাতে হবে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়৷ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না৷’’
চাকরি হারানো প্রবাসী ও তার পরিবারের সদস্যেরা অনেক বিপদের মধ্যে আছেন বলে জানান কে এ এম মোর্শেদ৷ যারা ফিরে এসেছেন তারা সামাজিক নিন্দার শিকার হয়েছেন৷ বলা হয়েছে তাদের মাধ্যমেই করোনা ছড়িয়েছে৷ তারা ত্রাণও পাচ্ছেন না৷ আবার সরকার যে ২০০ কোটি টাকা ঋণের কথা বলেছে তাও পরিকল্পিত নয় বলে জানান তিনি৷

৯ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ