সামাজিক দূরত্ব ও একাকীত্বের কারণে লকডাউনে জার্মানিতে আত্মহত্যার হার বাড়ার আশঙ্কা করেছিলো অনেকেই, পরিসংখ্যান বলছে তা বাড়েনি৷ তবে মানসিক স্বাস্থ্য এখনও উদ্বেগজনক৷
বিজ্ঞাপন
মার্চ মাসের শুরুতে জার্মান মনোরোগ অ্যাসোসিয়েশন, সাইকোথেরাপি এবং নিউরোজলি সোসাইটি, করোনা মাহামারির মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলো৷ স্যোশাল ডিসট্যান্সিং, আর্থিক উদ্বেগ এবং নিয়মিত থেরাপিতে না যেতে পারার কারণে জার্মানিতে আত্মহত্যার হার আরো বাড়তে পারে বলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছিলো৷
তবে মে মাসে শুরুতে করা এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় জার্মানির সাতটি অঙ্গরাজ্যে আত্মহত্যার হার বাড়েনি৷ বরং করোনাকালীন সময়ে জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে গত বছরের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ আত্মহত্যার হার কমেছে৷ তথ্যটি প্রকাশ করে আউগ্সবুর্গার আলগেমাইনে পত্রিকা ৷
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে বছরে আট লাখ মানুষ বেছে নেয় স্বেচ্ছামৃত্যু৷ আর এই প্রবণতা বাড়ছে কিশোরদের মধ্যেও৷ তাই কৈশোরে আত্মহত্যা ঠেকানোর সাত উপায় দিলেন মনোরোগের অধ্যাপক ক্রিস্টিন হ্যাডফিল্ড৷
ছবি: Imago/Aurora Photos
মৃত্যু নিয়ে আলাপ
‘‘আমি তোমার ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না’’ বা ‘‘আমি আত্মহত্যা করবো’’--মজার ছলেও যদি কোনো কিশোর এসব কথা বলে, সেটা গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে৷ তাঁর ওপর কৌশলে দৃষ্টি রাখতে হবে৷ অনেক সময় মুখে না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমন কথা লিখতে পারে কিশোররা৷ সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷
ছবি: picture-alliance
বিধ্বংসী আচরণ
কিশোর বয়সে রাগ এক-আধটু হয়েই থাকে৷ কিন্তু রেগে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে চাওয়ার অর্থ হলো, আত্মহত্যা প্রবণতা দানা বাঁধতে শুরু করা৷ অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, অতিমাত্রায় ড্রাগ আর অ্যালকোহলে সেবনে কিশোরটি জড়িয়ে পড়ছে কি না৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সমাজবিমুখতা
একা থাকা পরিণত বয়সেও কষ্টের৷ তাই কৈশোরে পরিবার ও বন্ধু থেকে আলাদা হয়ে থাকার মানসিকতাকে আত্মহত্যার কারণ বলছেন বিশ্লেষকরা৷ বন্ধুবান্ধব, ভাই-বোন নিয়ে যারা সামাজিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে, মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার সুযোগ তাঁদের কম৷ তাই বাবা-মাসহ পরিবার পরিজনদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা খুব জরুরি৷ কোনো কিশোর যাতে নিজেকে একা মনে না করে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Cheskin
ফাঁদে পা অথবা একরাশ হতাশা
কৈশোরের উচ্ছ্বল দিনগুলোতে হতাশা কিংবা কোনো ভুলে পা দেয়া উস্কে দিতে পারে আত্মহত্যার চেষ্টাকে৷ তাই কিশোর মনের চিন্তাটা শুনতে হবে অভিভাবকদের৷ সন্তান কি বলতে চায় তা শুনতে হবে৷ কিছু বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে, তাহলে অভয় দিয়ে, ভালোবেসে সেই কথাটা শুনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/Godong
অভ্যাসে বদল
কিশোর বয়সে নিত্যদিনের জীবনে হুট করে পরিবর্তন দেখা গেলে তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই৷ মনে রাখতে হবে, এটা হতাশার লক্ষণ৷ বাবা-মা-কে বুঝে নিতে হবে, তাঁদের আদরের সন্তান কোনো একটা সমস্যায় ভুগছে৷ দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুম মানে আত্মহত্যা প্রবণতা৷ আর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ঘুমানো কিন্তু বিষণ্ণতা৷ সচেতন থাকুন৷
ছবি: picture-alliance
প্রিয় জিনিসের প্রতি অনীহা
কোনো কারণ ছাড়া প্রিয় ক্রিকেট ব্যাট ছুঁড়ে ফেললো, আব্দারের পর আব্দার করে কেনা হাতঘড়িটার দিকে উদাসীন- আপনার সন্তানের মধ্যে এমন আচরণ দেখলে সতর্ক হয়ে যান৷ মনে রাখবেন, নিজের ব্যবহারের জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানে, তার মাথায় কিছু একটা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/DP
অকারণ মেজাজ দেখানো
কৈশোরে ক্ষণে ক্ষণে মন পালটানো নতুন কিছু নয়৷ তারপরেও সতর্ক থাকতে হবে৷ পরিবারের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা আছে কিনা তা জানতে হবে৷ সবমিলিয়ে কৈশোরের উচ্ছ্বলতায় সন্তানও যেন উচ্ছ্বল থাকে, অভিভাবককে হতে হবে সবচেয়ে কাছের বন্ধু৷
ছবি: Imago/E. Umdorf
7 ছবি1 | 7
জার্মান ডিপ্রেশন লীগের উপ প্রধান থোমাস ফয়েগ্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই অবাক হয়েছি যে এই করোনার সংকটে রোগীদের সাহায্য ও পরামর্শের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো, যা একটি প্যারাডক্স৷’’
তিনি জানান, ডিপ্রেশন রোগীদের যে সাহায্যের প্রয়োজন ছিলোনা তা নয়! করোনাকালে ডাক্তারের কাছে যাওয়া বা কথা বলার জন্য যেরকম মানসিক শক্তির প্রয়োজন তা হয়তো তাদের ছিলোনা৷ তাছাড়া ডিপ্রেশনের রোগীরা সবসময় সরাসরি মানুষের সাথে কথা বলতে চায়, অনলাইন থেরাপিতে তারা তেমন স্বাচ্ছন্দবোধ করেনা৷
আত্মহত্যাকারীদের শতকরা ৯০ ভাগ হতাশা, পৃথিবীর সবকিছুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এবং অন্যান্য মনোরোগজনিত অসুস্থতার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷ জার্মান ডিপ্রেশন এইড ফাউন্ডেশনের প্রধান উলরিশ হেগ্যার্ল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি যতদূর জানি, জার্মানিতে আত্মহত্যার হার যতটা কমেছে সে সংখ্যা এখনো বিবৃতি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়৷’’
এপ্রিলের শুরুতে জার্মানির হ্যানোভার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩.৫৪৫ জন নিয়ে এক জরিপ করা হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকেরও বেশি জানায়, করোনাকালে তাদের মেজাজ আগের চেয়ে বেশি খিটখিটে আর শতকরা ২৯ জনের প্রতিক্রিয়া ছিলো খুবই অ্যাগ্রেসিভ৷
করোনাকালে স্যোশাল ডিসট্যান্সিং, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজন ডিপ্রেশন রোগীদের দিকে সময়মতো সাহায্যে হাত বাড়িয়ে না দিলে পরিস্থিতে গুরুতর হতে পারে বলে গত এপ্রিল মাসে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উলরিশ হেগ্যার্ল সতর্ক করেছিলেন৷