কুকুরপ্রেমী জার্মানদের করোনায় পোষাপ্রাণীর চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ায় কুকুরের মূল্য এখন আকাশছোঁয়া৷
বিজ্ঞাপন
কুকুর-বিড়ালের চাহিদা মেটাতে প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রজননকারীরা এখন হিমশিম খাচ্ছে৷ ব্যার্নাডেটে ডিয়ার্কস মায়ার যখন তার হোমপেজে ঘোষাণা দিলেন যে, ২০২১ সালের ১২ মার্চ কুকুরের বাচ্চা বিক্রি করা হবে, তখন এই কুকুর ব্যবসায়ী ভাবতেই পারেনি যে, তার জন্য কী অপেক্ষা করছে ৷ তিনি ভেবেছিলেন প্রতিবারের মতো ১০/১২ জন আগ্রহী হয়তো এবারও কুকুর কিনতে চাইবেন৷ ফল হলো ঠিক তার উল্টো, আশাতীত সাড়া পেলেন ৷ এমনকি যে কুকুর এখন জন্মায়নি সে কুকুরকেও আগ্রহীরা বুক করে রাখলেন৷ যদিও তার ফোন নাম্বার প্রকাশ করা হয়নি তাতেই এমন অবস্থা ! তিনি ডয়চে ভেলেকে টিলিফোনে জানান, কুকুর প্রজননকারীদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, তাদের কাছে পোষা প্রাণীর চাহিদা রয়েছে আরো অনেক বেশি৷
জার্মানরা এমনিতেই পোষাপ্রাণী ভালোবাসেন, বিশেষ করে কুকুর এবং বিড়াল৷ জার্মানির অ্যাসোসিয়েশন ফর ডগস-এর তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০২০ সালে শতকরা ২০ ভাগ বেশি কুকুর কিনেছে জার্মানরা৷
কুকুর দিয়ে করোনা পরীক্ষা: সময় ও অর্থ সাশ্রয়
ফিনল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব৷ এজন্য মানুষকেও শারীরিক কোনো কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Lehtikuva/Reuters
ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে, ব্যয় সংকোচন করতে সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে এলেও কারো আর করোনা টেস্ট করানো হবে না৷ করোনা পরীক্ষা ও ট্র্যাক করা নিয়ে পুরো ইউরোপই অনেকটা দিশেহারা৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
ফিনল্যান্ডের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা কেবিনে এক টুকরো খাবারের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা করছে কুকুর ‘কোসি’৷ মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগছে তার৷ সাধারণ করোনা পরীক্ষায় যে পরিমাণ সময় লাগে তার তুলনায় অনেক কম সময় লাগে এখানে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
শারীরিক অস্বস্তি নেই
নাক থেকে কোনো শ্লেষা নেয়ার দরকার নেই৷ কোনো ব্যক্তির হাত বা ঘাড় মোছা কাপড় শুঁকে তৎক্ষণাৎ কুকুর জানিয়ে দেবে করোনার সংক্রমণের কথা৷ এমনকি করোনা সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু পাঁচদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন ব্যক্তিরও করোনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে কুকুরের পরীক্ষায় এবং তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আনা হিলেম-জোর্কমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই কুকুরগুলো করোনার হাত থেকে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে৷ তিনি জানালেন, কুকুর পরীক্ষার পর তারা অন্য মাধ্যমে পরীক্ষা করেও পরীক্ষাগুলো শতভাগ সঠিক ছিল৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
প্রশিক্ষিত কুকুর
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কুকুরকে রোগ নির্ণয়ের কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ বেডবাগস, ক্যান্সারের মতো রোগ নির্ণয়ে তাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে৷ প্রথমে প্রশিক্ষণের পর কুকুর ‘কোসি’র সাত মিনিট সময় লেগেছে প্রশিক্ষক আসলে কী চাইছেন তা বুঝতে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
১৫ কুকুরকে প্রশিক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে ১৫টি কুকুরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে এমন কুকুর আছে, যারা শরীর শুঁকে বলে দিতে পারে কারো ডায়াবেটিস আছে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রয়োজন অনুমোদন
এই পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী করতে প্রয়োজন অর্থের এবং অনুমোদনের৷ স্থানীয় মেয়র অবশ্য বিমানবন্দরে এসে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নিজেকে পরীক্ষা করিয়েছেন৷ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন মাত্র দুই মিনিটে পরীক্ষা হয়ে যেতে দেখে৷ চার মাসের এ পাইলট প্রকল্পে ৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
এক মাসে খরচ দশ লাখ ইউরো
বিমানবন্দরের এই প্রকল্পে গত এক মাসে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ইউরো৷ শীতকালে আরো ৩০ লাখ ইউরো খরচ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
ফিনিশ সরকারের অনুমোদন মেলেনি
জনগণের বিপুল সমর্থন সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড সরকার এখনো এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়নি৷ বিমানবন্দরের যাত্রীরা খুব আগ্রহের সাথেই এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রকল্প পৌঁছেছে জার্মানিতেও
এই পরীক্ষা এখন আর কেবল ফিনল্যান্ডে সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানির গবেষকরাও জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছেন৷ হানোফারের ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোলগার ফোল্ক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তহবিল প্রয়োজন, সেটা তারা পাচ্ছেন না৷ মহামারি মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Frey
10 ছবি1 | 10
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কুকুর প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার বিজয়ী ব্যার্নাডেটে ডিয়াক্স মায়ার বলেন, ‘‘কুকুরপ্রেমী অনেকেই অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কুকুর কেনার জন্য আব্দার করে ইমেল করেছেন৷ কিন্তু তাদের দেওয়ার এত কুকুর আমার নেই!'' নিয়ম অনুযায়ী কুকুর প্রজননকারীদের প্রতি দুই বছরে দুটো কুকুর ছানা জন্ম দেওয়ানোর কথা থাকলেও তাদের অনেকেই সে নিয়ম মানে না৷ করোনা মহামারি এসব ব্যবসায়ীর জন্য সোনালী সময় ,তবে কিছু পশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর বলে তিনি জানান৷
ইউলিয়া জারভাস, ১০ বছর যাবত বন শহরের পশু আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মী৷ তার প্রিয় প্রাণীদের কাছ থেকে দূরে থাকতে না পেরে মিউনিখে ভেটেরনারি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আবার পশুদের কাছে ফিরে এসেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আতঙ্ক, এক সময় করোনা ঢেউ থেমে যাবে আর মানুষের প্রাণী পোষার নতুন শখও হারিয়ে যাবে৷'' করোনাকালে পশুপ্রেমীদের প্রতি ইউলিয়ার পরামর্শ , ‘‘ভালোভাবে চিন্তা করে পোষাপ্রাণী ঘরে আনুন, করোনা শেষ হলে প্রাণীটিকে কিভাবে সামলাবেন কিংবা করোনায় সঙ্গ দেওয়া প্রাণীটিকে তখন যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন কিনা ভেবে নিন৷''
জার্মানির প্রাণী সুরক্ষা সমিতির হেস্টার পমারেনিং বলেন, হোম অফিস করার সময় তিনমাসের জন্য কুকুর কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকে৷ কোনো কোনো পশু আশ্রয়কেন্দ্রে এক সপ্তাহান্তে ৫০০ আগ্রহীর কথাও তিনি উল্লেখ করেন৷ করোনা সংকটে শিশু কুকুর বিক্রির অবৈধ ব্যবসা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পমারেনিং৷
ওষুধ ও অস্ত্র ব্যবসার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রাণী ব্যবসা এখন আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম উত্স৷ জার্মানির অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৭৫টি পোষাপ্রাণী বিক্রির অবৈধ প্রতিষ্ঠান ধরা পড়েছে৷ সেগুলোতে আটশ'র বেশি কুকুর ছিল৷ পশু অধিকার কর্মী পমারিনিং বলেন, ইন্টারনেটে অবৈধ প্রাণী ব্যবসায়ীদের অর্ডার কার্ডে কেবল কুকুর এবং বিড়ালই নয়, সাপ, ক্যাঙ্গারু এবং হরিণের মতো প্রাণীও রয়েছে৷ তাই তার দাবি, করোনা সংকটের পরেও যেন ইন্টারনেটে পশু-পাখি বিক্রি বন্ধ রাখা হয় ৷
যেসব কারণে আপনি জার্মানিতে ধমক খেতে পারেন
নিয়মকানুন মানার ব্যাপারে জার্মানদের বেশ কড়াকড়ি৷ প্রায় সবকিছুর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলাটা এক ধরনের অভ্যাস, ভুল ধরিয়ে দেয়াটাও৷ ফলে অজানা কোনো নিয়ম না মানার কারণে রাস্তাঘাটে ধমক খাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়৷
ছবি: Getty Images/A. Scheuber
সাইকেল-হাঁটার আলাদা পথ
জার্মানিতে বেশিরভাগ রাস্তায় গাড়ি, সাইকেল ও পথচারীদের চলাচলে আলাদা জায়গা রয়েছে৷ এর মধ্যে উলটাপালটা হলেই বিপদ৷ হাঁটার রাস্তায় কেউ না থাকলেও আপনি সাইকেল চালাতে পারবেন না৷ আবার সাইকেলের রাস্তায় হাঁটতে থাকলে কেউ কোনো ধরনের হর্ন না দিয়েই আপনাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য ধাক্কাও দিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: imago-images/R. Oberhäuser
কুকুরের মল
জার্মানিতে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় কুকুর৷ নানা প্রজাতির কুকুর হাতে জার্মানদের রাস্তায় হাঁটতে দেখা যায়৷ কুকুর পালনের জন্য বাসস্থান, সেবা করার যোগ্যতা, স্বাস্থ্যবিমা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে৷ রাস্তায় বা অন্য কোনো স্থানে যদি আপনার কুকুর মলত্যাগ করে, সঙ্গে সঙ্গে তা নির্দিষ্ট পলিথিনে তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে আপনাকে ফেলতে হবে৷ তা না করলে জরিমানার সুযোগ তো থাকছেই, ভর্ৎসনাও শুনতে হতে পারে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/W. Layer
শিশুদের জন্য উদাহরণ
এমনিতে জার্মানরা আইনকানুন মেনে চললেও রাস্তা পেরনোর সময় গাড়ি না থাকলে প্রায়ই সিগনাল ছাড়াই দৌড় দিতে দেখা যায় তাদের৷ কিন্তু আশেপাশে যদি কোনো শিশু থাকে, তাহলে এমন করাটা বেশ বাজে দৃষ্টিতে দেখা হয়৷ অধিকাংশ জার্মানই নিজের সন্তানকে নিয়ে বাইরে বের হন নানা কিছু নিজের চোখে দেখে শেখার জন্য৷ নিজের শিশু সন্তানকে নিশ্চয়ই আপনি লাল বাতি জ্বলার মধ্যে দৌড় দেয়া শেখাতে চাইবেন না!
ছবি: Sandy Schulze/Fotolia
সময় মেনে চলুন
জার্মানরা প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী৷ তবে নিজেরা সময় মেনে চলায় তাদের যেমন আগ্রহ, কেউ সময় না মানলে তাকে এ ব্যাপারে উপদেশ দেয়ায় তারা আরো বেশি আগ্রহ পান৷ জার্মানিতে একটা প্রবাদও রয়েছে এ নিয়ে৷ সময়মতো আসা মানে ঠিক সময়ে আসা না, বরং সময়ের কয়েক মিনিট আগে আসা৷
ছবি: Colourbox/S. Tryapitsyn
সঠিক বিনে সঠিক আবর্জনা
জার্মানিতে প্লাস্টিক, পচনশীল বর্জ্য, কাগজ, কাঁচ, এমনকি কাপড় ফেলার জন্যও আলাদা আলাদা বিনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এসব বিন নির্দিষ্ট রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে৷ পরিবেশের ব্যাপারে অধিকাংশ জার্মানই বেশ সচেতন৷ আর এসব বিনে আলাদা বর্জ্য ফেলার উদ্দেশ্য হলো, পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি কমানো৷ ফলে তারপরও এক ধরনের বর্জ্য অন্য ধরনের বিনে ফেললে একটু বকা শুনতে হতেই পারে৷