করোনায় নির্বাচনে অসুবিধা নেই ইসির!
২৫ জানুয়ারি ২০২২আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে দেশের ২১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে ভোট নেয়া হবে৷ শেষ সময়ে এখন ওইসব এলাকায় প্রচার প্রচারণা তুঙ্গে৷ নির্বাচন কমিশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করার নির্দেশ দেয়ার কথা বললেও বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই বলে স্থানীয় পর্যায় থেকে জানা গেছে৷ আর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও তা দেখা গেছে৷ করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেই নির্বাচন হলেও বাস্তবে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক এসব ছিলো বিরল৷
সরকার যে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে তাকে প্রকাশ্যে কোনো সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ৷ ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও সর্বোচ্চ ১০০ জনের বেশি উপস্থিতি না করা হয়েছে৷ কিন্তু ইউপি নির্বাচনে শত শত কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন৷ সভা-সমাবেশ করছেন৷ স্থানীয় প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা৷
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘গন্ডগ্রামে নির্বাচন হচ্ছে৷ আমার জানামতে সেসব এলাকায় করোনার কোনো হটস্পট নাই৷ ঢাকা শহরে একজন দাঁড়ালে সেখানে শত লোক ভিড় করে৷ গ্রামে সেরকম না৷ আমরা সরকারের যে নির্দেশনা আছে সেটা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই নির্বাচনের আয়োজন করছি৷’’
তার মতে, এই নির্বাচন কশিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ এখন যদি নির্বাচন বন্ধ করা হয় তাহলে জট তৈরি হবে৷ নতুন কমিশন আসার পর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে৷
তার কথা, ‘‘ওইসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কী না তা মনিটরিং করা নির্বাচন কশিমনের পক্ষে সম্ভব নয়৷ আমরা মানতে বলেছি৷ দেখার দায়িত্বে প্রশাসন আছে তারা দেখবে৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে জার্মানি বা ইউরোপের বাস্তবতা মিলালে চলবে না৷ এই করোনার মধ্যেও ভারতে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে৷ প্রাদেশিক নির্বাচনের তফসিল দেয়া হয়েছে৷’’
ভোট দিতে গেলে ভোটারদের করোনার টিকার সার্টিফিকেট লাগবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সব মানুষকে তো করোনার টিকা দেয়া যায়নি এখনো৷ আর ভোট তো সাংবিধানিক অধিকার৷ ফলে ভোট দিতে করেনার টিকা দেয়ার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হলে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হবে৷’’
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ‘‘আমরা একটা গাইডলাইন তৈরি করেছি৷ সেই গাইডলাইন অনুযায়ী মাস্ক পরে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে৷ সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে৷ ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে৷ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই এগুলো দেখবেন৷ আলাদা কোনো টিম থাকবে না৷ কোনো মেডিকেল টিমও থাকবে না৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত যোগাযোগ আছে৷ যেসব এলাকায় নির্বাচন হচ্ছে তার কোনো জায়গায় যদি করোনার হটস্পট হয় তাহলে তারা আমাদের জানাবে৷ তখন আমরা ব্যবস্থা নেব৷ প্রথম ধাপের নির্বাচনের সময় আমরা কিছু এলকায় নির্বাচন বন্ধ করেছিলাম৷’’
এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো বক্তব্য মঙ্গলবার জানা যায়নি৷ তবে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, ‘‘আমরা বলেছিলাম নির্বাচনটা স্থগিত করা হোক৷ সেটাই সবচেয়ে ভালো হোত৷ যেহতু বন্ধ করা হয়নি এখন যদি স্বাস্থ্যবিধিও না মানা হয় তাহলে ওইসব এলাকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে৷’’
সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নির্দেশনা তো ঠিকই আছে৷ কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না৷ একটা কাজ ভালো কাজ হয়েছে সরকারি অফিসে অর্ধেক জনবল অফিসে এবং অর্ধেক হোম অফিস কার্যকর হয়েছে৷ আর কোথাও তেমন দেখছি না৷’’
তার মতে, গণপরিবহণ, হোটেল রেস্তোরাঁ, শপিং মল, সভা-সমাবেশ এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে হবে৷ সরকারের ম্যাকনিজম আছে তার বাইরেও কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে হবে৷ মাস্ক পরাতে হবে৷ টিকা দ্রুত দিতে হবে৷
বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে৷ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ৩২.৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে৷ এপর্যন্ত গড় সংক্রমণ হার ১৪.০৫ ভাগ৷ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৩ জন৷ মারা গেছেন ১৮ জন৷
দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা চার হাজার ৫৭৪টি৷ সব মিলিয়ে আট ধাপে চার হাজার ১৩৮টি ইউনিয়নে ভোটের ব্যবস্থা করেছে ইসি৷ এরইমধ্যে তিন হাজার ৭৭৩টি ইউনিয়নে ভোট শেষ হয়েছে৷ ষষ্ঠ ধাপে ৩১ জানুয়ারি ২১৯ ইউপিতে, সপ্তম ধাপে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৩৮ ইউপিতে এবং অষ্টম ধাপে ১০ ফেব্রুয়ারি আট ইউপিতে ভোট হবে৷