সারা বিশ্ব যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে তখন পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গি হামলা বাড়িয়েছে বোকো হারাম৷ এদিকে, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী মোজাম্বিকের একটি শহর দখল করে নিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে ইসলামিক স্টেট করোনা মহামারির সময়েও হামলা চালিয়ে যেতে অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ করোনা ভাইরাস অমুসলিমদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে আসা একটি শাস্তি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়৷
আল কায়েদা এক বিবৃতিতে লকডাউনের সময় বাসায় বসে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করতে অমুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
যত হামলা
মার্কিন জেনারেল স্টেফান টাউনসেন্ড সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট মিলিটারি টাইমসকে জানান, করোনার কারণে তারা সোমালিয়ায় কার্যক্রম স্থগিত রাখতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু আল কায়েদা, আল শাবাব ও আইসিস সংকটের ফায়দা তোলার ঘোষণা দিয়েছে৷
ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোজাম্বিকের এক জঙ্গি সংগঠন ২৪ মার্চ বন্দর নগরী মোসিম্বোয়া ডা প্রাইয়ায় হামলা চালিয়ে শহরটিকে খেলাফতের অংশ ঘোষণা করেছে৷ দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন৷
কয়েকটি উগ্র মতাদর্শ
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reuters
ইসলামিক স্টেট, আইএস
একসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reuters
আল-কায়দার উত্থান
জর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf
দেশে দেশে আল-কায়দা
বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penney
‘‘সাদারাই সেরা’’
বর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.com
উগ্র ডানপন্থা
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchell
বামপন্থিদের সশস্ত্র লড়াই
সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishi
স্বাধীনতাকামীদের সংগ্রাম
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance
7 ছবি1 | 7
গত রবিবার ক্যামেরুনের উত্তরাঞ্চলের এক গ্রামে আত্মঘাতী বোমা হামলায় সাতজন প্রাণ হারান৷ হামলাকারী দুজন বোকো হারামের সদস্য ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ১০ জন৷
২৩ মার্চ আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত বোকো হারামের একটি অংশ চাডের এক সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়৷ এতে ৯২ জন সশস্ত্র সৈন্য প্রাণ হারান৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চাডের যুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা৷ চাডে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জন৷
‘ইসলামিক স্টেট ফর ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স' বা আইএসডাব্লিউওপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বোকো হারামের আরেক অংশ ২৪ মার্চ নাইজেরিয়ার সৈন্যদলের উপর হামলা করে৷ এতে অন্তত ৪৭ জন সৈন্য প্রাণ হারান বলে স্থানীয় পত্রিকাগুলো জানিয়েছে৷ নাইজেরিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬৷ মারা গেছেন ছয় জন৷
এদিকে মিশরের দুজন সামরিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের কার্যক্রম বেড়েছে৷ সামরিক বাহিনী সম্ভাব্য অন্তত তিনটি বড় হামলা ঠেকিয়েছে বলে জানান তাঁরা৷
পালটা হামলা
এসব হামলার জবাবে ‘মাল্টিন্যাশনাল জয়েন্ট টাস্কফোর্স' বা এমএনজেটিএফ লেক চাড এলাকায় বোকো হারাম ও আইএসডাব্লিউএপির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে৷
গত সপ্তাহে মার্কিন বাহিনীর আকাশ থেকে চালানো হামলায় আল শাবাবের একজন ঊর্ধতন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা৷
আবু-বকর জাল্লোহ/জেডএইচ
ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বন্দিজীবন
যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় আইএস জঙ্গিরা এখন সিরিয়ায় বন্দি৷ ১০ হাজারের বেশি জঙ্গি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে সিরিয়ার হাসাকা শহরে৷ ছবিঘরে দেখুন সেখানে কেমন আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জঙ্গিদের বন্দিজীবন
২০১৪ সালে ইসলামি খেলাফত কায়েম করার কথা বলে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ যুদ্ধের সময় অনেক মানুষ হত্যা করেছে তারা৷ কিন্তু গত বছর যুদ্ধে নিজেদের শেষ ঘাঁটিটিও হারানোর পর থেকে তারা বন্দি৷ সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হাসাকা শহরে বন্দি আছে দশ হাজারেরও বেশি জঙ্গি এবং জঙ্গিদের স্ত্রী, সন্তান৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
কুর্দিদের কাছে বন্দি
যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ছিল কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে৷ পরাজিত আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে পুরেছে কুর্দিরাই৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জায়গার অভাব
কোয়ামিশি শহরের কাছের এই এলাকাটিতে একটি কারাগার রয়েছে৷ সেখানে সব জঙ্গির জায়গা হয়নি৷ তাই স্থানীয় স্কুলেও রাখা হয়েছে আইএস যোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
দুই হাজার বিদেশি
যুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ আইএস-এ যোগ দিয়েছিলেন৷ তারাও এখন বন্দি৷ হাসাকার দশ হাজারের মধ্যে অন্তত দুই হাজার জঙ্গিই বিদেশি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
বিদেশিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
কুর্দি যোদ্ধারা জানিয়েছেন, এত বন্দি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তায় রাখতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন৷ বিদেশি বন্দিদের অনেকেই এসেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে৷কিন্তু কোনো দেশই তাদের ফেরত নিতে চায় না৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘আমাদের কী শাস্তি হবে?’
সিরীয় আইএস যোদ্ধা মাহমুদ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের কী হবে জানতে চাই৷ আমরা আমাদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানি না৷ তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, সিরিয়ায় আছে নাকি বাইরে, কিছুই জানি না৷ তাছাড়া কী শাস্তি হবে তা-ও আমরা জানি না৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
হাসপাতালে শতাধিক জঙ্গি
হাসাকার ৫০ শয্যার হাসপাতালে রয়েছে শতাধিক অসুস্থ এবং যুদ্ধাহত জঙ্গি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
নারী, শিশু বাইরে
জঙ্গিদের স্ত্রী এবং সন্তানদের কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে৷ নারীরা ঘোরাফেরা করতে পারেন, শিশুরা খেলতে পারে মাঠে৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘দেশে ফিরতে চাই না’
কুর্দি যোদ্ধাদের অনুমতি নিয়ে নয়জন আইএস জঙ্গির সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স৷ তবে জঙ্গিদের স্ত্রীরা কথা বলতে রাজি হননি৷ হংকং থেকে আসা এক নারী কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা সন্তান৷ স্বামী মারা গেছে৷ আমি জানি এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়৷ এটা কোনো ঘর নয়, স্রেফ একটা তাঁবু৷ তবু আমি দেশে ফিরবো না৷ সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়৷ আল্লাহ চাইলে সব ভালো হবে৷’’