করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন কোন রোগী শনাক্ত হয়নি৷ নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এখনও তিনজন৷ নতুন করে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর৷ এই বিষয়ে কাউকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷ বিদেশ ফেরত কারো প্রতি বিরুপ আচরণ না করতে বাড়ির মালিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি৷
এর আগে রোববার বাংলাদেশে তিনজন নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় আইইডিসিআর৷ আক্রান্তদের দুইজন সম্প্রতি ইটালি থেকে দেশে ফিরেছেন৷ পরবর্তীতে তাদের সংস্পর্শে আসা মোট চারজনকে পরীক্ষা করা হলে একজনের পরিবারের নারী সদস্যের দেহে কোভিড ১৯ ভাইরাসটি পাওয়া৷ আক্রান্ত তিনজনের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর৷
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নভেল করোনার ভাইরাস কোভিড ১৯ বাংলাদেশে এখনও ব্যাপকতা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েনি৷ তাই স্কুল, কলেজ বন্ধের প্রয়োজন নেই৷
করোনায় করণীয়
করোনা প্রতিরোধে কী করতে হবে তা নিয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZUMA Wire/Cdc
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
আট মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্তের ঘোষণা দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর৷ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ইটালি থেকে ফিরেছেন৷ পরবর্তীতে তাদের একজনের সংস্পর্শে পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷
ছবি: Privat
করোনা যেভাবে ছড়ায়
মোট সাতটি প্রজাতির করোনা ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে৷ তার একটি ২০১৯ এন করোনা ভাইরাস৷ এই ভাইরাসটি প্রথমে প্রাণী থেকে মানুষে এবং এখন তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে৷ এটি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়৷ হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZUMA Wire/Cdc
যেসব লক্ষণ দেখা যায়
শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস প্রবেশের পর দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে জ্বর হয়৷ এছাড়াও শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া হতে পারে৷ কারো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার থাকলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/XinHua/Xiong Qi
কী করবেন?
প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতাই একমাত্র উপায়৷ ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধুতে হবে৷ অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না৷ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে৷ হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বাহু, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে৷ অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন৷ মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খান৷
ছবি: Reuters/R. Patrasso
চিকিৎসা কী?
এন করোনা ভাইরাস নতুন হওয়ায় এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি৷ চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/XinHua/C. Min
অসুস্থ হলে করণীয়
অসুস্থ হলে ঘরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর৷ তবে মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে যেতে হবে৷ রোগীকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
সরকারের নির্দেশনা
কেউ যদি চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, ইতালি, ইরান এসব দেশে ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর-কাশি-গলা-ব্যথা-শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন এবং কুয়েত-মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
আইইডিসিআরের রবিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ইটালি ছাড়া অন্য দেশে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি কোভিড ১৯ আক্রান্ত হননি৷ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন একজন বাংলাদেশি, তার অবস্থার উন্নতি হয়নি৷ এছাড়া উহান থেকে ভারতে ফেরা ২৩ জন বাংলাদেশি দিল্লি শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে৷
প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
শনিবার থেকে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে৷ পাশাপাশি দুটি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনেও যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে৷ রবিবার ১৬,৯৫৫ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে৷
সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধুতে হবে৷ অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না৷ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে৷ হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বাহু, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে৷ অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
করোনা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য হটলাইন চালু করেছে আইইডিসিআর৷ নাম্বার: ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫৷
এফএস/কেএম (আইডিসিআর, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
করোনার উপস্থিতি জানা যায় যেভাবে
করোনা ভাইরাস শরীরে আছে কি না, তা কীভাবে জানতে পারেন ডাক্তাররা, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/D. Ruvic
কাকে পরীক্ষা করা হয়?
সংক্রমণপ্রবণ জায়গায় থাকলেই কোনো ব্যক্তিত্বকে করোনা ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করার দরকার নেই৷ সর্দিকাশি থাকলেও যে এই পরীক্ষা করতেই হবে, এমনটা নয়৷ কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকার কোনো নির্দিষ্ট কারণ না পাওয়া গেলে তখনই করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরীক্ষা করা হবে বলে জানাচ্ছে জার্মানির রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Matthews
কেমন এই পরীক্ষা?
গলা বা গলা ও নাকের অংশ থেকে তরল নমুনা নেওয়া হয়৷ তারপর সেই নমুনা বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে যে সেখানে করোনা ভাইরাস আছে কি না৷ এই পরীক্ষা করতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে৷ জার্মানিতে এই পরীক্ষা করাতে কোনো খরচ লাগেনা, কারণ তা রোগীর নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Coffrini
আক্রান্তদের পরীক্ষার ফলাফল জানানো
নমুনা সংগ্রহ করা থেকে পরীক্ষাগারে সব রকমের যাচাই-বাছাই হওয়া থেকে সবশেষে সেই পরীক্ষার ফলাফল ডাক্তারের কাছে পৌঁছানো- এই পুরো প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে এক থেকে দুই দিন৷ এরপর সেই খবর রোগীকে জানানো ডাক্তারের দায়িত্ব৷ আলাদা ঘরে অন্যান্যদের থেকে দূরে বিশেষ সুরক্ষাবিধি মেনেই করোনা-আক্রান্তের সাথে দেখা করবেন ডাক্তার৷ বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগীর বাসায় গিয়েও তা জানানো যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কতটা নির্ভুল এই পরীক্ষা?
প্রথম চেষ্টায় করোনা ভাইরাস ধরা না পড়া মানেই যে শরীরে এই সংক্রমণ নেই, তা নয়৷ যদি নমুনা সংগ্রহে কোনো ফাঁক থেকে যায়, তাহলেও সংক্রমণ ধরা পড়বে না৷ সে কারণেই সংক্রমণ থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের একাধিকবার এই পরীক্ষা করাতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/
অন্য কোনো পদ্ধতি আছে কি?
এই পরীক্ষা সঠিকভাবে করতে উন্নতমানের পরীক্ষাগার ও দক্ষ বিশেষজ্ঞ দরকার, যা অনেক জায়গায় নেই৷ চীনের মতো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত দেশেও নেই এই প্রযুক্তি৷ ইউরোপ ও অ্যামেরিকাতেও পরীক্ষার নমুনা সমন্বয়ে রয়েছে গাফিলতি৷ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে নতুন প্রযুক্তি উঠে আসলেও তা এখনও ব্যবহারিক পর্যায়ে পৌঁছয়নি৷