1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় বাল্যবিয়ে: স্কুলছাত্রীদের ঝরে পড়া বেড়েছে!

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে করোনা মহামারির সময় বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মেয়েদের ঝরে পড়া বেড়েছে৷ কিন্তু দেশজুড়ে মোট ঝরে পড়া স্কুলছাত্রীর সংখ্যা কতো তা নিয়ে এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো জরিপ হয়নি৷

Bangladesch I Nargis Nahar I Zwangsheirat
ছবি: Abdul Khalek Faruk/DW

বাল্যবিয়ের কারণে কী পরিমাণ স্কুলছাত্রী ঝরে পড়েছে সে সংখ্যা জানা না গেলেও কিছু বেসরকারি সংস্থা বলছে করোনার সময়ে দেশজুড়েই উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বাল্যবিয়ের ঘটনা৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণা বলছে, দেশে করোনার কারণে বাল্যবিয়ে শতকরা ১৩ ভাগ বেড়েছে৷ গত ২৫ বছরে যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ৷

এদিকে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার শতকরা ১৭ ভাগ৷ আর মাধ্যমিক পর্যায়ে শতকার ৩৭ ভাগ৷ তবে করোনায় এ সংখ্যা বেড়েছে বলে আশঙ্কা করছে সরকার৷ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও আগামী শিক্ষাবর্ষে ৭৭ লাখ বই কম ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে মোট ছাত্রী ৪৭০ জন৷ তাদের মধ্যে ৬৭ জনেরই চলতি বছর বিয়ে হয়ে গেছে৷ যাদের বিয়ে হয়েছে তারা সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক৷ সাতক্ষীরা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সাকিবুর রহমান সরেজমিন গিয়ে এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷

যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের সর্বোচ্চ বয়স ১৭ বছর৷ আর তাদের বেশির ভাগের বয়সই ১৬ বছর৷ তারা সবাই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী৷ তবে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিয়ের ঘটনাও ঘটেছে৷

‘খরচ মেটাতে না পেরেই বাল্যবিয়ের এমন ঘটনা ঘটেছে’

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে সাকিবুর রহমান বলেন, ‘‘করোনার সময়ে প্রধানত খরচ মেটাতে না পেরেই বাল্যবিয়ের এমন ঘটনা ঘটেছে৷ বিশেষ করে অনলাইন ক্লাসের জন্য ইন্টারনেট ডাটা কেনা তাদের পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ আর অভিভাবকদের আয়ও কমে যায়৷''

তিনি জানান, বিয়ে হওয়া এ ছাত্রীদের কেউই আর স্কুলে যাচ্ছে না৷ তিনি আরো দাবি করেন, স্কুল থেকেও বিবাহিত মেয়েদের স্কুলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ কারণ তারা মনে করছেন, ওই মেয়েরা স্কুলে গিয়ে বিয়ের গল্প করলে অন্য মেয়েরাও বিয়েতে উৎসাহিত হতে পারে৷ আর যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের অধিকাংশেরই কাবিন নেই৷ ফলে বয়স নিয়ে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি৷

শনিবার তালা উপজেলার শার্শা বাহারুল উলুম মাদ্রাসায় ঘুরে সাকিবুর রহমান জানান ওই মাদ্রাসায় মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৬৯ জন৷ এর মধ্যে মোট ছাত্রী ৮৭ জন৷ ছাত্রীদের ৪০ জনের বিয়ে হয়ে গেছে৷ দশম শ্রেণীর ১৮ জন ছাত্রীর মধ্যে ১১ জনের এবং অষ্টম শ্রেণীর ১৮ জনের মধ্যে আট জনের বিয়ে হয়েছে৷ যাদের বিয়ে হয়েছে তারা আর মাদ্রাসায় আসছে না৷

আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ ছাত্রীদের বাল্যবিয়ের কথা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এবার ৬৮ জনের এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু পরীক্ষা দেবে ৪৭ জন৷ ২১ জন দিচ্ছে না৷ তাদের বিয়ে হয়ে গেছে৷ দশম শ্রেণীর ১৪-১৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে৷ আরও চার-পাঁচ জন আছে বিয়ে হয়েছে৷ তারা নিচের ক্লাসে পড়ে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘যাদের বিয়ে হয়েছে তারা যাতে স্কুলে আসে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ শিক্ষকদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যাতে বাল্যবিয়ের ঘটনা না ঘটে৷’’

এদিকে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাকালে বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৬৫টি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে৷ সাত মাসে ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহের তথ্য পেয়েছে তারা৷

গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের মোট ২১ জেলায় জরিপ চালিয়েছে সংস্থাটি৷

প্রতিষ্ঠানটির কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস বলেন,  ‘‘এই বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে আমরা যা জেনেছি তার মধ্যে রয়েছে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের নিরাপত্তা সংকট, অভিভাবকদের কাজ হারানো এবং ব্যবসা-বণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ তাছাড়া বাল্যবিয়ের যেহেতু একটি ট্রেডিশন আছে তাই করোনাকে বিয়ে দেয়ার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন অনেকে৷’’

তিনি জানান, যারা এই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তারা সবাই স্কুলের ছাত্রী৷ আর বিয়েগুলো হয়েছে শুক্র-শনিবার বন্ধের দিন-রাতে৷ তার মতে, ‘‘তারা (বিয়ে হয়ে যাওয়া এসব ছাত্রী) সবাই শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়েছে৷ আমরা এখন যে খবর পাচ্ছি তাতে ড্রপআউটের তথ্য পাচ্ছি৷ আমরা সে কারণে আরেকটি জরিপ করবো৷’’

‘করোনাকে বিয়ে দেয়ার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন অনেকে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, করোনার সময় বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের কারণে ঠিক কি পরিমাণ ছাত্রী ঝরে পড়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছেনা৷ কারণ এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ হয়নি৷

মেয়েদের ড্রপআউট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলাদাভাবে কাজ না হলেও করোনাকালে ড্রপআউট শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি৷

অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিতি ধরে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই তালিকা করা হয়৷ মংলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক) সুমন্ত পোদ্দার দুই সপ্তাহ আগে জানান, ‘‘আমাদের কাছে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তাতে প্রাথমিকে শতকরা ৫০ ভাগের মত ড্রপ আউট দেখানো হয়েছে৷ এখন আমরা এটা সরেজমিন পরীক্ষা করে দেখছি৷ কাজ শেষ করতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে৷’’

দেশের ৬৪ জেলার ৩৪৫টি উপজেলা, সব সিটি কর্পোরেশন এবং ১৫টি শহরে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে৷

এদিকে সারাদেশে বাংলা মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল ৪০ হাজার৷ করোনার কারণে এই ধরনের ১০ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে৷ এ স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের শতকরা ৫২ ভাগ মেয়ে বলে জানান বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জিএম জাহাঙ্গীর কবির রানা৷  

তিনি বলেন, ‘‘বন্ধ হয়ে যাওয়া ১০ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই অন্য কোথাও ভর্তি হয়নি৷ আর সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরেছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ