1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় বাড়ছে নির্যাতন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনার এই সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে৷ এর সঙ্গে বাড়ছে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ৷ সাইবারক্রাইমও বেড়ে গেছে৷

পিরোজপুরে শ্বশুর, শাশুড়ির হাতে এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হনছবি: bdnews24.com

এই করোনায় যে শুধু স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তা নয়, শাশুড়ি বা পরিবারের অন্য পুরষ সদস্যদের হাতেও তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ এমনকি শ্বশুর বাড়িতে  নারী সদস্যদের হাতেও তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷

গত ৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় এক গৃহবধূ তার শাশুড়ি, শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরের নির্মম নির্যাতনে শিকার হয়েছেন৷ পারিবারিক কথা কটাকাটির জের ধরে তাকে নির্যাতন করা হয়৷ তার স্বামী প্রবাসী৷ গৃহবধূর মেয়ে মাকে নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে পুলিশ শাশুড়ি আলেয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে৷ বাকি দুই আসামি পলাতক৷

২৩ আগস্ট কক্সবাজারের বেকুয়ায় আরেক গৃহবধূ তার স্বামীর নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে যান৷ স্বামী সাইফুদ্দিন যৌতুকের দাবিতে তাকে লোহার রড দিয়ে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়৷ নির্যাতক স্বামী পালিয়েছে৷

গত ১৩ জুন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে খুঁটির সাথে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করে তার স্বামী আশরাফ হোসেন৷ শ্বশুর বাড়ির সদস্যরাও নির্যাতনে অংশ নেয়৷ এ নিয়ে ছয় জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে৷

করোনায় সময় এভাবে প্রায় প্রতিদিনই সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী৷ একই সঙ্গে বাড়ছে শিশু নির্যাতন৷

‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ গত মে মাসে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে৷ তারা জানায় দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে৷

জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪টি শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি৷ শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ তাদের বাবা-মা ও আত্মীয়দের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে৷ আর নারীরা বেশির ভাগই স্বামীর হাতে৷

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তখন ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘সারা বিশ্বে এই করোনায় নারীর প্রতি সহিংসতা শতকরা ২০ ভাগ বেড়ে গেছে৷ বাংলাদেশও তার বাইরে নয়৷ আর আমরা যে চিত্র পেয়েছি, পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ৷ কারণ, যোগযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেকেই অভিযোগ করতে পারছেন না৷’’

এদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসেবে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন৷ এই সময়ে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৮৯ জন নারী৷ তাদের মধ্যে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন ১৬৩ জন৷

করোনার সময় প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থাও আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে: ডা. তাজুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই সময়ে কাজ হারানো, ঘরে বসে থাকা এই সব কারণে পুরুষ হতাশায় ভুগছে৷ তার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে৷ আর তার ফল নিতে হচ্ছে নারী ও শিশুকে৷’’ আর অর্থনেতিক সংকট কাটাতে পুরুষ নারীর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, ফলে যৌতুকের দাবিতে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি৷ তার মতে, ‘‘এই করোনার সময় প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থাও আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে৷’’

করোনার সময়ে প্রথম দিকে অপরাধ কিছুটা কমে গেলেও তা এখন আবার আগের অবস্থায় চলে এসেছে৷ আর প্রতারণাসহ অনলাইনের মাধ্যমে অপরাধ বেড়ে গেছে৷ মানি ট্রান্সফার অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা বেড়েছে৷ বেড়েছে অনলাইন শপিং প্রতারণা৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম জানান, ‘‘অপরাধের ধরন কিছুটা পাল্টেছে৷ এখন অনলাইনে অপরাধীরা বেশি সক্রিয়৷ আর প্রচলিত ধারার অপরাধ তো আছেই৷’’ তিনি আরো বলেন, এরমধ্যেও  তাদের কাছে যত অভিযোগ আসে তার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই নারীর প্রতি অপরাধ৷ আর তারমধ্যে ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সের নারীরাই বেশি সাইবার ক্রাইম-এর শিকার হচ্ছেন৷ এর সঙ্গে আছে অনলাইনে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার অপরাধ৷

এই সময়ে জঙ্গিরাও ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে: ড. জিয়া রহমান

This browser does not support the audio element.

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার শুরুর দিকে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সব কিছু থমকে গিয়েছিল৷ ফলে অপরাধীরাও কিছুটা থমকে গিয়েছিল৷ কিন্তু এখন তারা আগের মতোই সক্রিয় হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, নানা কারণে এখন অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘একদিকে আর্থিক সংকট অপরাধ বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ অন্যদিকে আছে করোনার কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা৷ আর অপরাধের ধরন যে পাল্টাচ্ছে তা ধরতে দক্ষতার অভাবও আছে তাদের৷’’

তিনি বলেন, ‘‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বাড়ার নতুন কারণ হলো করোনার কারণে অভিযোগ জানানোর সুযোগ কমে যাওয়া৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হতাশ পুরুষের ব্যর্থতা ঢাকার নির্মম উপায়৷ সব কিছুর জন্য নারী ও শিশু যেহেতু দুর্বল তাই তাদের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে জঙ্গিরাও ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে৷ তাই এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরো মাত্রায় সক্রিয় হতে হবে৷ বাড়াতে হবে দক্ষতা৷ আর নারীদের অভিযোগ করার সুযোগ এবং সক্ষমতা বাড়াতে হবে৷’’ ডা. তাজুল ইসলাম মনে করেন, এর সঙ্গে  প্রয়োজন এখন নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি, কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ