জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মতে, করোনা মহামারি বিশ্বের চলমান সংঘর্ষগুলিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে৷ তৈরি করছে নতুন সংঘাতের প্রেক্ষাপটও৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বর্তমান করোনা সংকট বাড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষ৷ শুধু তাই নয়, অনেক জায়গায় নতুন সংঘাতের পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে এই সংকটের কারণে, জানান তিনি৷
চলমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে মার্চ মাসে গুটেরেস বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহামারির বাস্তবতা সংঘর্ষ ঠেকাতে পারেনি৷ যুদ্ধবিরতিও লক্ষ্য করা যায়নি কোথাও, যেমনটা চেয়েছিলেন গুতেরেস৷
কিন্তু সব দেশের পরিস্থিতিই এক রকম নয়, জানান তিনি৷ গুতেরেস বলেন, ‘‘কিছু কিছু দেশ শান্তিরক্ষার্থে যথেষ্ট অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ তা অবশ্যই আশা জাগায়৷ এটাই আমার মতে বর্তমানে সংঘর্ষ বা যুদ্ধ মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো পন্থা৷ এতে করে ভবিষ্যৎ শান্তি সুনিশ্চিত হবে৷''
ঘর হারা মানুষ এখন আরো অসহায়
যুদ্ধ বা অন্য কারণে জোর করে মানুষকে ঘরহীন করে দেয়ার ঘটনাগুলো সম্প্রতি স্থায়ী রূপ নিচ্ছে৷ অর্থাৎ এই মানুষগুলো ফিরতে পারছেন না ঘরে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে এমন কথা৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
এক দশকে দ্বিগুণ
ইউএনএইচসিআরের হিসেবে, ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে ঘরহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় আট কোটি (৭.৯৫ কোটি)৷ এর অর্থ বিশ্বের প্রতি ৯৭ জনে ১ জনকে জোরপূর্বক ঘর ছাড়া করা হয়েছে৷ ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল চার কোটি দশ লাখ৷ অর্থাৎ এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ এমন নিয়তির শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Chiba
স্থায়ীভাবে ঘরহীন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ঘরহীন মানুষের সংখ্যা শুধু পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে তা নয়, মানুষ স্থায়ীভাবে ঘরহীন হচ্ছেন৷ বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের ৭৭ ভাগই দীর্ঘমেয়াদে আটকা পড়েছেন আশ্রয় পাওয়া অন্য এলাকা বা দেশে৷
ছবি: DW/ P. Vishwanathan
নাজুক অবস্থা
নানা কারণে বাস্তুহীনদের মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে ভুগছেন৷ অনেক দেশ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতেও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance /AA/A. Mehmet
পাঁচ দেশের নাগরিক বেশি
ঘরহীন হওয়া মানুষদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই পাঁচটি দেশের৷ দেশগুলো হলো, সিরিয়া (৬৬ লাখ), ভেনেজুয়েলা (৩৭ লাখ), আফগানিস্তান (২৭ লাখ), দক্ষিণ সুদান (২২ লাখ) ও মিয়ানমার (১১ লাখ)৷ এই দেশগুলোর বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন পার্শবর্তী দেশে৷ যেমন রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
উন্নয়নশীল দেশেই সবচেয়ে বেশি
প্রতি দশ জন শরণার্থীর আট জনই উন্নয়নশীল দেশে আটকা পড়ে আছেন৷ তুরস্কে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থী আছেন৷ কলম্বিয়ায় ১৮ লাখ, পাকিস্তান ও উগান্ডায় ১৪ লাখ করে আশ্রয় পেয়েছেন৷ জার্মানিতে প্রায় ১১ লাখ এবং বাংলাদেশে সাড়ে আট লাখ শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Gurel
দশ জনে চার জন শিশু
হিসেব অনুযায়ী, শরণার্থীদের ৪০ ভাগই শিশু, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সের নীচে৷ সংখ্যায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Watad
6 ছবি1 | 6
করোনাকালে যুদ্ধ, কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা
২০১১ সাল থেকে এখনও চলছে সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধ৷ ২০১১ সাল থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই যুদ্ধে৷ শনিবার সিরিয়ার জন্য নতুন করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ৷ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি সিরিয়ার পরিস্থিতি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা৷
আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির পাশাপাশি চীন, ব্রাজিল থেকে উঠে আসছে করোনা মহামারির মধ্যেও সংঘর্ষের, আগ্রাসনের খবর৷ উঠে আসছে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যেই ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতের খবরও৷
বিশেষজ্ঞদের মতামত, এই সংকট একদিকে যেমন দেশগুলির স্বাস্থ্য পরিষেবার বাস্তব চিত্র উন্মোচন করছে, অন্যদিকে সংঘর্ষ মোকাবিলায় ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তাদের ব্যর্থতাও প্রকাশ করছে৷