করোনায় শুধু ইটালির মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারাই যাচ্ছেন না, ধ্বসে পড়ছে তাদের অর্থনীতিও৷ দেশটির ওয়াইন উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরাও পড়েছেন বিপাকে৷
বিজ্ঞাপন
ইটালির সর্বদক্ষিণের অঞ্চল পুগলিয়া৷ দিন যত যাচ্ছে এখানকার ওয়াইন উৎপাদকদের চিন্তা ততই বাড়ছে৷ সময়টা এখন আঙ্গুরের ফলনের৷ তার থেকে তৈরি হবে ওয়াইন, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি৷
কিন্তু উৎপাদকদের হাতে এখন আঙ্গুর সংগ্রহের পর্যাপ্ত টাকা নেই৷ করোনা ভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে ওয়াইনের বিক্রি কমে গেছে৷ জার্মানি এবং ফ্রান্স থেকে আসা সব কার্যাদেশগুলোও বাতিল হয়ে গেছে৷ ‘‘যদি পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটে তাহলে আমরা এমনকি ফসল তোলার জন্য মৌসুমি শ্রমিকদেরও পাবো না,'' বলেন স্থানীয় একটি সংগঠনের প্রধান লুকা লেজারো৷ স্থানীয় উদ্যোক্তারা সাধারণত উৎপাদনে যাওয়ার জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয়৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন৷
ইটালির ব্যাংকগুলো অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েক বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ নতুন ঋণের আশিভাগ ‘গ্যারান্টি' সরকার নিজেই দেবে বলে জানিয়েছে৷
তারপরও অর্থছাড় নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা৷ বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে যে ব্যাংকগুলো রয়েছে তাদের অবস্থা এমনিতেই দুর্বল৷ এখানে খেলাপির হারও অন্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি৷ এ কারণে যাদের ব্যবসা ব্যাংকের অর্থের উপর নির্ভরশীল, তারা বড় বিপদে পড়েছেন৷ ব্যাংকগুলো সেখানে যথেষ্ট অর্থের জোগান দিতে পারছে না৷
সব মিলিয়ে পুগলিয়ার ওয়াইন শিল্প আর উৎপাদকরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাড়িয়ে৷
এফএস/এসিবি (রয়টার্স)
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷