চাকরি নেই, অথবা থাকলেও নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণ, এ অবস্থাতেই কাটলো করোনাকালের মে দিবস৷ এসব অধিকার আদায়ে স্বাভাবিক প্রতিবাদ সমাবেশ করতে না পারলেও, ভিন্ন উপায়ে সোচ্চার ছিলেন দুনিয়ার মজদুররা৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে কাজ হারিয়ে বা অলস হয়ে বসে আছেন কোটি কোটি মানুষ৷ তাই এবারের মে দিবস তাদের জন্য ভিন্ন৷ কর্মপরিবেশ, বেতন, ভাতা এসবের দাবিতে এমনকি প্রতিবাদ সমাবেশও করতে পারছেন না তারা৷
এশিয়ার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একটা বড় অংশ পোশাক শিল্পের কর্মী৷ তাদের একজন ইন্দোনেশিয়ার উইরিওনো৷ দুই সন্তানের এই পিতা এখন লে অফে আছেন৷ এছাড়া পাশাপাশি কফি সরবরাহকর্মী হিসেবে যে কাজটি করতেন তা বন্ধ৷ উপায় না দেখে শেষমেষ কাপড় সেলাইয়ের একটা দোকান দিয়েছেন তিনি৷
‘‘কারখানায় যে বেতন পেতাম তার সমান হয়ত এখন কামাতে পারি না৷ কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানদের খাবার তো জোগাড় করতে হবে,’’ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন তিনি৷
শুধু উইরিওনো নয়, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া বা মিয়ানমারে এমন লাখ লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন৷ এসব পোশাক কারখানার অসংখ্য অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ তাই তারা কাজ দিতে পারছে না৷ এছাড়া সরকারের বেঁধে দেয়া লকডাউন তো আছেই৷
শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই ২০ লাখ পোশাক শ্রমিক কর্মহীন৷ কম্বোডিয়াতে প্রায় ১৩০টি কারখানা লে অফে গিয়েছে৷ এতে সেখানকার এক লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়৷ দেশটিতে এক হাজার কারখানা রয়েছে, যেখানে আট লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন৷
‘‘কোভিড-১৯ একটি মুখবিহীন খুনি বা সন্ত্রাসী, যে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলছে এবং আক্রান্ত করছে,'' মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেং সৌর বলেন৷ তিনি জানান, অন্যান্য দেশের মতো মে দিবসে শ্রমিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷ ইন্দোনেশিয়াতেও একে রমজান মাস, তার ওপর করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শ্রমিকরা যেন বড় জমায়েত না করেন সে আহ্বান দিয়েছে সরকার৷
ঐতিহাসিক কয়েকটি শ্রম আন্দোলন
মে দিবসের চেতনা শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে দিবস পালনের সূচনা হয়৷ ছবিঘরে দেখে নিন বিশ্বের অন্যতম কয়েকটি শ্রম আন্দোলনের কথা৷
ছবি: picture alliance / Tass/dpa
হে মার্কেটের শ্রমিকদের আন্দোলন
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা নেমেছিলেন তুমুল আন্দোলনে৷ তাঁদের দাবি ছিল, উপযুক্ত মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ নয়৷ মে মাসের প্রথম দিনেই শ্রমিকরা ধর্মঘটের আহ্বান জানায়৷ প্রায় তিন লাখ শ্রমিক যোগ দেয় সেই সমাবেশে৷ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়৷ বহু শ্রমিক হতাহত হন৷
ছবি: picture-alliance/KPA/TopFoto
মে দিবস
পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত ছয় শ্রমিককে৷ কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহত্যাও করেন৷ পরের বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
ছবি: AP
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস
বর্তমানে মে মাসের প্রথম দিনটিকে পুরো পৃথিবীতে পালন করা হয় ‘মে দিবস’ হিসেবে৷ পৃথিবীর সব শ্রমিকের লড়াই-সংগ্রাম-পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানানো হয় এই দিনে, শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদের আত্মত্যাগের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন
অ্যামেরিকা স্বাধীন হওয়ার আগে শ্রমজীবী মানুষের প্রথম সংগঠন গড়ে ওঠে ১৬৮৪ সালে৷ ঠেলাগাড়ির চালকরা প্রথম ঠেলা শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলেন৷ ১৮৪২ সালে অ্যামেরিকায় শ্রমিক শ্রেণি ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মঘট করার অধিকার পায়৷ বিশ্বের প্রথম নারী শ্রমিকদের ধর্মঘট পালিত হয় অ্যামেরিকায় ১৮২৩ সালে৷ বিশ্বের শিল্প-কারখানাগুলোয় শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় ১৮২৮ সালে৷
ছবি: M. Cardy/Getty Images
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সংগঠন
ঊনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণি নিজ নিজ দেশে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে৷ ১৮৬৪ সালে মার্কস- এঙ্গেলসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সমিতি৷ ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সংগঠন নামে খ্যাত৷
ছবি: AP
প্যারিস কমিউন
১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ প্যারিসের শ্রমিকরা শহর থেকে বুর্জোয়া শাসকদের হটিয়ে নিজেদের হাতে ক্ষমতা নিয়ে নেয়৷ দশ দিন পরে ২৮ মার্চ তারিখে শ্রমিকরা গঠন করেছিল পৃথিবীর প্রথম প্রলেতারিয়েত রাষ্ট্র প্যারিস কমিউন৷
অক্টোবর বিপ্লব
অক্টোবর বিপ্লবকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলগুলোয় বলা হয় ‘মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’৷ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ায় বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে, শুরু হয় ‘লাল’ আর ‘সাদা’-দের মধ্যে গৃহযুদ্ধ৷ অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় রাশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে একটি অগ্রসর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্তি
এই বিপ্লব জনগণকে পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিল৷ এই বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি কৃষকের জন্য শুধু সামাজিক মুক্তিই আনেনি, রাশিয়ার গণতান্ত্রিক সমস্যাগুলোও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিল৷ লেনিন স্বয়ং ১৯২৪ সালে পরলোকগমন করেন, কিন্তু রুশ বিপ্লব, সোভিয়েত রাশিয়া বা কমিউনিজম, এ সবের সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷
ছবি: picture-alliance/akg
তেভাগা আন্দোলন
১৯৩০ সালে বাংলার কয়েকটি জেলায় কৃষকরা তেভাগার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন৷ তেভাগা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, ভাগচাষিকে ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ দিতে হবে৷ এই আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণ বর্ণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমান ও নমঃশূদ্র চাষিদের অসহযোগ আন্দোলন৷ এ আন্দোলনে জমিদারদের পাইক-বরকন্দাজদের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করতে হয়েছিল কৃষকদের৷ ১৯৪৬ সালেও আর এক দফা আন্দোলন হয়েছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images/R. Gacad
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার খনি শ্রমিকদের ওপর নানা নির্যাতন, মজুরি বৃদ্ধি, থাকা-খাওয়া ও জীবনমান উন্নয়ন ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং ১৯৪৬ সালে ৭০ হাজার শ্রমিকের অংশগ্রহণে ধর্মঘট পালিত হয় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে৷ এএনসি এই আন্দোলনে যোগদানের বিষয়ে নীরব থাকলেও ম্যান্ডেলা পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে কমিউনিস্ট নেতা জেবি মার্কসের সঙ্গে দেখা করে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন৷
ছবি: dapd
জার্মানির শ্রমিক আন্দোলন
১৯৫৩ সালের ১৭ জুন তৎকালীন পূর্ব জার্মানির সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণ৷ বড় কোম্পানিগুলো জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ব জার্মান সরকার, যার প্রতিবাদে ১৬ জুন থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল কয়েকশ’ শ্রমিক৷ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৭০০ শহরে৷ ১৭ জুন আন্দোলন থেকে সরকারের পদত্যাগ, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দুই জার্মানির একত্রীকরণের দাবি ওঠে৷ সেনাদের গুলিতে নিহত হয় ৫০ জন৷
ছবি: Getty Images
শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল ইউরোপ
স্পেন ও পর্তুগালে ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর বুধবার পালিত হয়েছিল সাধারণ ধর্মঘট৷ কর্মবিরতি পালন করেছিলেন গ্রিস ও ইটালির শ্রমিকরা৷ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানায় বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো৷ এতে বিভিন্ন দেশের শিল্প-কারখানা অচল হয়ে পড়ে৷ বাতিল হয় ইউরোপের অনেক ফ্লাইট৷ চার দেশে একযোগে ধর্মঘট পালনের ঘটনা ইউরোপে এটিই প্রথম৷
ছবি: Reuters
ফ্রান্সে শ্রমিক আন্দোলন ২০১৬
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ফ্রান্সে সর্ববৃহৎ শ্রমিক বিদ্রোহ দেখা গিয়েছে ২০১৬ সালে৷ শ্রম আইন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অসন্তোষের জের ধরে জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার (সিজিটি) ইউনিয়নের ডাকে ধর্মঘটে ফ্রান্সের প্রায় সব বিভাগের শ্রমিকরাই অংশ নিয়েছিলেন৷ এ ধর্মঘটের একপর্যায়ে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন৷ তাদের সঙ্গে শামিল হয় ছাত্র ও তরুণরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট
হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১৯শে জানুয়ারি সেই ধর্মঘট ছিল বৃহৎ, ঐতিহাসিক এবং সবদিক দিয়ে সফল৷ পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালায় সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ভারতে শ্রমিক বিক্ষোভ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৮ হাজার রুপি করা এবং শিল্প-কারখানার বেসরকারিকরণ ঠেকানোসহ ১৪ দফা দাবিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন করেন সেবা খাতের লাখ লাখ শ্রমিক৷ ১৫ কোটির বেশি শ্রমিক এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে সংগঠনগুলোর দাবি৷
ছবি: AP
15 ছবি1 | 15
কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের জন্যও করোনা নিয়ে এসেছে বড় দুঃসংবাদ৷ বিশেষ করে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে তাদের একটি বড় অংকের রপ্তানির ওপর বাণিজ্য সুবিধা তুলে দেয়ার কথা বলেছে৷
মিয়ানমারে ৬০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন৷ বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড মিয়ানমারের কান্ট্রি ডিরেক্টর আরাধ্য মেহতা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে নারী শ্রমিকরা শুধু চাকরিই হারিয়েছেন তা নয়, তারা পারিবারিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন৷
এদিকে, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি নিয়েই বাংলাদেশে আটশ'রও বেশি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে৷ শ্রমিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, খোলার প্রক্রিয়ায় থাকা কারখানার প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে৷
‘‘কোনো কোনো পোশাক মালিক কারখানায় নিরাপত্তার পরিবেশ বজায় রাখছেন৷ বাকিরা রাখছেন না৷ এটা খুবই বিপদজনক,’’ এপিকে বলেন শ্রমিক অধিকার কর্মী কল্পনা আক্তার৷
বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ বছরে এখন প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি করে তারা, যদিও এ বছর রপ্তানি বৃদ্ধির হার এমনিতেই ঋণাত্মক ছিল৷ তার ওপর করোনার কারণে শিল্পটির বেহাল দশা৷ তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি রুবানা হক জানিায়েছেন, এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোর প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ এসব কারখানায় প্রায় ৪১ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷
এদিকে, পৃথিবীর কোথাও কোথাও মে দিবস পালনে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন কর্মীরা৷ তুরস্কে কর্তৃপক্ষ বা ইউনিয়নগুলোর অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কোথাও কোথাও জড়ো হয়েছেন কর্মীরা৷ চেক প্রজাতন্ত্রে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে কিংবা ফ্রান্সে ব্যালকনি থেকে গান গেয়ে অধিকার আদায়ের কথা বলা হয়৷ তাদের দাবি ছিল, কর্মক্ষেত্রে মাস্ক সরবরাহ, স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করা অথবা চাকরি হারানোদের সরকারি সাহায্য দেয়া৷
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের সিনটাগমা স্কয়ারে প্রতিবাদকারীরা দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে লাইন করে দাঁড়ান৷ আয়োজকরা টেপ দিয়ে দাগ দিয়ে দেন৷
জার্মানিতে গেল ৭০ বছরে এই প্রথমবার রাস্তায় বড় সভা সমাবেশ মিছিল ছাড়া পালিত হলো মে দিবস৷ এর পরিবর্তে জার্মান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (ডিজিবি) ও সামাজিক গণতন্ত্রী পার্টি (এসপিডি) অনলাইনে অনুষ্ঠান করেছেন৷
জেডএ/এসিবি (এপি, ডিপিএ)
মে একটি বিশেষ মাস
বসন্তের শেষ, গ্রীষ্মের শুরু – শীতের দেশ জার্মানিতে মে মাসটিকে বলে ‘ভনেমোনাট’ বা স্বর্গসুখের মাস৷ নেচে, গেয়ে, ধুনি জ্বালিয়ে এই মাসকে স্বাগত জানায় জার্মানির মানুষ৷ প্রেম কিংবা ডাইনিরাও বাদ যায় না!
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pförtner
ভালপুর্গিস নিশি
সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে নাকি জার্মানির হার্ৎস অঞ্চলে এপ্রিল মাসের শেষে, মে মাসের গোড়ায় ডাইনিরা ধুনি জ্বালিয়ে ‘শয়তানের সঙ্গে মোচ্ছবে মাতে’৷ আজও ৩০শে এপ্রিল তারিখে সেই ডাইনিদের দেখতে হাজার হাজার দর্শক ও পর্যটক ভিড় করেন ব্রকেন পাহাড়ির ২০টি স্থানে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় স্থানটি হলো হার্ৎস পর্বতমালায় অবস্থিত ‘ডাইনি নাচের আখড়া৷’
ছবি: AP
মে মাসের বহ্ন্যুৎসব
আগুনের চারপাশে গোল হয়ে নাচাটা শুধু ডাইনিদের জন্য নয়৷ জার্মানি জুড়ে মানুষজন কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে উৎসব করেন৷ কোনো কোনো এলাকায় খড় আর পুরনো জামাকাপড় দিয়ে তৈরি ডাইনি পুতুলকে পুড়িয়ে মারা হয় – অবশ্যই ভূত-প্রেত তাড়ানোর উদ্দেশ্যে৷
ছবি: AP
‘মে পোল’ বা মে মাসের ধ্বজা
ক্রিসমাস ট্রি’র মতোই, তবে এক্ষেত্রে কোনো কচি বার্চ গাছকে রঙিন কাগজের মালা আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়৷ বহু জার্মান গ্রাম আর শহরের মূল চত্বরে এ ধরনের ‘মে পোল’ বা মে মাসের ধ্বজা খাড়া করা হয়৷ কোলন অঞ্চলে তরুণ ও কিশোর প্রেমিকরা ৩০শে এপ্রিলের রাত্রে অভীপ্সিতার বাড়ির সামনে একটি মে পোল বেঁধে তাদের অনুরাগ ব্যক্ত করে৷
ছবি: picture-alliance/Helga Lade
মে’র নাচ
ডাইনি নাচের পাশপাশি পুরনো আমলের সাজপোশাক পরে লোকনৃত্যেরও ব্যবস্থা রয়েছে; ছোটরাও তাতে কম যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খড়ি দিয়ে আঁকা...
জার্মানি কিংবা অস্ট্রিয়ায় রাস্তার পিচে, এমনকি গোটা গ্রাম জুড়ে খড়ির গণ্ডি এঁকেও প্রেম নিবেদন করা যেতে পারে৷ শুধু নিবেদন কেন, প্রেম জানান দিতেও কোনো আপত্তি নেই: খড়ির হৃদয়ের মাঝখানে প্রেমিক-প্রেমিকার আদ্যক্ষর লিখে দিলেই হলো৷
ছবি: Fotolia/d-jukic
মে ডে
পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস৷ কাজেই এদিন শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন দাবীদাওয়া নিয়ে পথে নামেন৷ প্রথাটির সূচনা অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে শ্রমিকরা ১৮৫৬ সালের পয়লা মে তারিখে দিনে কাজের সময় আট ঘণ্টায় বেঁধে দেওয়ার দাবিতে মিছিল করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
মাদার্স ডে
মাদার্স ডে বা মাতৃদিবস পালন শুরু হয় ইংল্যান্ডে, সুদূর ১৬৪৪ সালে৷ মাদার্স ডে জার্মানিতে আসে ১৯২৩ সালে৷ সাধারণত মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে মাদার্স ডে পালিত হয়ে থাকে৷