বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়ালো। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস সহ ইউরোপের দেশগুলি আবার কড়া ব্যবস্থা চালু করেছে। জার্মানিও কড়াকড়ি চালু করার কথা ভাবছে।
বিজ্ঞাপন
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাব হলো, মঙ্গলবারই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে চীনে যখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমছিল, তখন কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করেছিলেন, করোনা তার শীর্ষে পৌঁছেছে। এ বার তার প্রকোপ কমতে থাকবে। কিন্তু তাঁদের আশা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। করোনার গ্রাফ কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। গোটা বিশ্বে তা ছড়িয়েছে।
সব চেয়ে বেশি লোক মারা গেছেন অ্যামেরিকায়। দুই লাখেরও বেশি। তরপর আছে ব্রাজিল, ভারত, মেক্সিকো ও যুক্তরাজ্য।
জার্মানির আশঙ্কা
করোনার প্রকোপ আবার বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তিনি বিভিন্ন স্টেটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সংবাদসংস্থা ডিপিএ ও একটি জার্মান সংবাদপত্র জানাচ্ছে, সেখানে নেয়া খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঘরোয়া পার্টিতে ২৫ জন ও বাইরের পার্টিতে ৫০ জনের বেশি থাকতে পারবেন না এমন নিয়ম চালু করা হতে পারে। মদ বিক্রির সময়সীমা কম করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে এই সব কড়াকড়ি সেই সব শহরে চালু করা হবে, যেখানে এক লাখের মধ্যে ৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
দাওইজম বা তাওইজম চীনের পাঁচটি স্বীকৃত ধর্মের একটি৷ বর্তমানে চীন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন এই ধর্মে বিশ্বাসীরা৷ চীনের শানদং অঞ্চলের এক তাও যাজক সেই অঞ্চলে করোনাকালে যারা মারা গেছেন, তাদের স্মৃতি রক্ষায় এক অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Wang
স্মারক-ফলকে প্রয়াতদের স্মৃতি
শানদং অঞ্চলের একটি তাও মঠে গেলে দেখা যাবে সারি সারি স্মৃতিফলক৷ মোট ৫৫৮টি স্মৃতি-ফলকের ওপর লেখা আছে মৃতের নাম ও জন্মস্থান৷ এভাবেই, করোনাকালে নিহতদের মনে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন তাও যাজক লিয়াং শিংইয়াং৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষের প্রকৃত মৃত্যু তখন হয়, যখন গোটা বিশ্ব তাকে ভুলে যায়৷ আমার মতে, ধর্মবিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, সবার আত্মাই স্মরণ করার যোগ্য৷’’
ছবি: Reuters/T. Wang
একমাত্র ফলক সংকলন
২০১৫ সালে তাও ধর্ম গ্রহণ করেন লিয়াং৷ পাহাড়ি এলাকায় সবুজে ঘেরা মঠের এই ফলক চীনে ব্যতিক্রমী৷ শুধু তাই নয়, লিয়াঙের বিশ্বাস, এই সংকলন হয়ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাও বা বৌদ্ধ স্মৃতিফলকের সংকলন হতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Wang
করোনাকালে স্মৃতিচারণ
করোনা সংক্রমণের কারণে চীনে প্রাণ হারিয়েছেন মোট চার হাজার ৬৩৪জন৷ উহান অঞ্চল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কবলে প্রাণ হারিয়েছেন যারা, তাদের স্মৃতিতে চীনে এই তাও ফলক ছাড়াও আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ কোনো কোনো জাদুঘরে বিশেষ বিভাগ চালু হয়েছে, যেখানে আক্রান্তের পরিবারের পক্ষে নানা জিনিস দান করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/T. Wang
শুধু করোনায় আক্রান্তের জন্য নয়
লিয়াং জানান, শানদং অঞ্চলের এই তাও মঠের ফলকে যাদের নাম আছে, তাদের মধ্যে খুব কমই করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন৷ বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে বয়সজনিত বা অন্যান্য রোগের কারণে৷ কিন্তু প্রত্যেকেই লিয়াঙের মতে ‘স্থানীয় হিরো’৷
ছবি: Reuters/T. Wang
পরিবারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন
লিয়াং বলেন, ‘‘শারীরিক মৃত্যুর পরেও এভাবে প্রিয়জনকে দেখতে পারা, বিশেষ করে মৃত্যুর পরেও পরিবারের সদস্যদের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারার এই সুযোগ আমার কাছে সবচেয়ে শান্তির৷’’ স্থানীয়দের অনেকেই মঠে আসেন নিরিবিলিতে মৃত প্রিয়জনদের স্মৃতির সান্নিধ্য পেতে৷
ছবি: Reuters/T. Wang
বিরোধিতা
কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, লিয়াং এই কাজ করে তাও ধর্মের প্রচার করতে চান৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন, টাকার লাভে লিয়াং এই কাজ করছেন৷ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লিয়াং জানান, স্মৃতি ফলক গড়তে দুই লাখ ইউয়ান (প্রায় ২৫ লাখ টাকা) নিজের পকেট থেকে দান করেছেন৷ সোশাল মিডিয়াতেও ছড়াচ্ছে লিয়াঙের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত৷ তবে নিজের কাজে অনড় তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Wang
7 ছবি1 | 7
সোমবার জার্মানিতে এক হাজার ১৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কড়াকড়ি না করলে বড়দিনের সময় দিনে প্রায় ২০ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হবেন।
ফ্রান্সে কড়াকড়ি শুরু
ফ্রান্সের দশটি শহরে ইতিমধ্যেই কড়াকড়ি চালু করা হয়েছে। জিম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দশজনের বেশি লোকের জমায়েত বন্ধ। রাত দশটার পর বার বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি দেখেই এই কড়াকড়ি চালু করতে হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসেও কড়াকড়ি শুরু। বার ও রেস্তোরাঁ রাত দশটার বেশি খুলে রাখা যাবে না। বাড়িতে তিনজনের বেশি অতিথি আসতে পারবেন না। জরুরি দরকার ছাড়া মানুষকে বাইরে বেরতেও মানা করা হয়েছে। ফুটবল সহ অন্য খেলাধুলো খালি স্টেডিয়ামেই হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইংল্যান্ডে কোভিড পজিটিভ হওয়ার পরও কেউ যদি বাড়ি থেকে বের হন তাহলে তাঁকে এক হাজার পাউন্ড জরিমানা দিতে হবে বলে সরকার জানিয়েছে। একাধিকবার এই অপরাধ করলে জরিমানার পরিমাণ হবে দশ হাজার পাউন্ড।