বাস বা সাবওয়ে থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এখন বাহন হিসেবে সাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন৷
বিজ্ঞাপন
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন এলাকার ৫১ বছর বয়সি শিল্পী জন ডনোহু মনে করেন, এখন গণপরিবহন নিরাপদ নয়, তাই একটি সাইকেল কিনেছেন তিনি৷
ইউএস সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত শতকরা ০.৬ভাগ শ্রমিক সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতেন৷ শহরাঞ্চলে এই হার ছিল আরো বেশি ৷
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটা-র সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা পাঁচ ভাগ মানুষ কর্মস্থলে যান নিজের সাইকেলে আর বাইক শেয়ারিংয়ের সাহায্য নেন মাত্র ১ ভাগ মানুষ৷ তাছাড়া বিকল্প বাহন হিসেবে বড় শহরগুলোতে সাইকেলের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে ৷
ইউরোপের সাইকেল-বান্ধব শহর
পরিবেশ-বান্ধব, স্বাস্থ্যকর আর সাশ্রয়ী- সব দিক দিয়েই বাহন হিসাবে এগিয়ে বাইসাইকেল৷ সেই চিন্তা মাথায় রেখে নিজেদের এলাকাকে সাইকেল-বান্ধব করেছে ইউরোপের বিভিন্ন শহর৷ সাইকেল-বান্ধব এমন কয়েকটি শহর সম্পর্কে জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
কোপেনহেগেন
ডেনমার্কের রাজধানী শহরে রয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারের সাইকেল নেটওয়ার্ক৷ সাইকেলকে মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ৷ সিগন্যালে সাইকেল নিয়ে অপেক্ষার জন্য আছে সুন্দর ব্যবস্থা৷ কোপেনহেগেনে ৬২ শতাংশ মানুষ সাইকেল চড়ে কাজে যান৷ সাইকেল-বান্ধব নগর গড়ার উদাহরণ হিসাবে ‘কোপেনহেগেনাইজ’ শব্দটি তাই জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজি অভিধানে৷
সাইকেল-বান্ধব শহরগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম৷ এখানকার সাইকেল-চালকেরা প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পথ চলেন৷ উটরেস্ট এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বড় সাইকেল পার্কিং, যেখানে সাড়ে ১২ হাজার সাইকেল রাখা যায়৷ ২০২০ সালের মধ্যে এটাকে ৩৩ হাজারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আন্টভের্প
বেলজিয়ামের আন্টভের্প শহরের সাইকেল পার্কিং অগণিত আর সেগুলোর অবকাঠামো অভিভূত করে সবাইকে৷ সাইকেলের পথ বাড়ানোর পাশাপাশি কেবল সাইকেল আর পথচারীদের জন্য তিনটি সেতু তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/P. Schickert
প্যারিস
কয়েক বছর ধরে সাইকেল নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছে প্যারিসের নগর কর্তৃপক্ষ৷ শহরের নানা জায়গায় রয়েছে বাইসাইকেল স্টেশন৷ পর্যটকেরাও সাইকেল নিয়ে ঘুরতে পারেন পুরো শহর৷ অন্যদিকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেল ভাড়া নেওয়া সেখানে বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/S. Dee
মালমো
সাইকেলের জন্য অবকাঠামো বাড়াতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে সুইডেনের মালমো শহর৷ এখানে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেলের রাস্তা রয়েছে৷ মালমো আর কোপেনহেগেনের মধ্যে ফেরি পারাপার সেখানকার বাইসাইকেল পর্যটনকে বেশ জনপ্রিয়তা দিয়েছে৷ কোথাও কোথাও হোটেলের সামনেই মিলবে সাইকেল স্টেশন আর ওয়ার্কশপ৷
ছবি: Ohboy
ট্রন্ডহেইম
নরওয়ের শহর ট্রন্ডহেইম৷ পাহাড়ি এই নগরে চালু আছে ‘ট্রাম্পে’ নামে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাইসাইকেল উঠানামার ব্যবস্থা৷ প্রতি ঘন্টায় সেখানে ৩০০ সাইক্লিস্টকে ১৩০ মিটার উচ্চতায় আনা-নেওয়া করা হয়৷ পাহাড়ি পথেও সাইকেল নিয়ে চিন্তা নেই, এর চেয়ে স্বস্তির আর কি হতে পারে!
ছবি: public domain
ম্যুনস্টার
জার্মানির ওয়েস্টফালিয়ার ম্যুনস্টার এলাকায় মানুষের চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি৷ সাইকেলের জন্য চওড়া রাস্তা, পর্যাপ্ত পার্কিং আর সমতল ভূমির কারণে সেখানে এই দ্বিচক্রযান এতো জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
বার্সেলোনা
২০০২ সালেও ভাড়ায় বাইসাইকেল পাওয়া যেত স্পেনের বার্সেলোনা শহরে৷ কেবল সাইকেলের জন্য রয়েছে ১৫৮ কিলোমিটার রাস্তা৷ অনেক জায়গায় গাড়ির গতি ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখায় সাইক্লিস্টদের জন্য এলাকাটি বেশ নিরাপদ৷ পর্যটকেরা যাতে বাইসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন, আছে সেই ব্যবস্থাও৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Guarino
বাসেল
সুইজারল্যান্ডের বাসেল অনেকটা সমতল এবং দর্শনীয় স্থানগুলোও কাছাকাছি৷ গ্রীষ্মে ‘স্লো আপ’ নামে গাড়িমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয় সেটিকে৷ প্রচুর লোকের সমাগম হওয়ায় তখন ৩০ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারিত রাখা হয় কেবল সাইক্লিস্টদের জন্য৷ একইসঙ্গে সাইক্লিস্টদের আনন্দ দিতে থাকে বহু আয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/M. Dr. Schulte-Kellinghaus
9 ছবি1 | 9
মার্কিন সরকার সাইকেলকে অপরিহার্য বাহন মনে করছেন৷ এখন সবরকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অনেক সাইকেলের দোকানই খোলা৷
ন্যাশনাল সাইকেল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিন-চতুর্থাংশ সাইকেল বিক্রি হয় বড় দোকানগুলোর মাধ্যমে ৷ সাইকেলের বড় চেইন শপগুলো এখন বন্ধ থাকলেও ওয়ালমার্টের মতো ডিপার্টমেন্ট স্টোরে এখন সবচেয়ে বেশি সাইকেল বিক্রি হচ্ছে৷
নিউইর্য়কের ব্রুকলিন এলাকার এক সাইকেল দোকানের মালিক জো নোসলা জানান, তার দোকানে আগে যেসব সাইকেলের মূল্য ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার, এখন গড় মূল্য কমে পাঁচশ থেকে আটশ ডলারে ঠেকেছে৷ কারণ, সাইকেল বিক্রি বেড়ে গেলেও অনেক খুচরা বিক্রেতারা সমস্যার সম্মুখীন৷
শুধু করোনা সংকটের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে সাইকেল চালানোর পরিকল্পনা করেই অ্যামেরিকানদের কেউ কেউ এখন সাইকেল কিনছেন৷ যেমন, বাল্টিমোরে ঘরবন্দি থাকায় কেইটলিন লী নিরাপদে যাতায়াত করার জন্য ৫৫০ ডলারে একটি সাইকেল কিনেছেন৷ তিনি সম্প্রতি মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন ৷ তিনি জানান, সম্ভব হলে পরেও তিনি সাইকেলেই যাতায়াত করবেন৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, করোনা ভাইরাস কখনোই পুরোপুরি বিলুপ্ত হবে না, তাইঅন্যান্য ভাইরাসের মতো কোভিড ১৯ -এর সাথেও আমাদের জীবনযাপন করা শিখতে হবে৷''
এনএস/এসিবি (রয়টার্স)
১৩ এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতদের গণকবর
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। লাশ এত বেশি যে কবর দেয়ার জন্য নিতে হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে তারই কিছু মুহূর্ত...
ছবি: Reuters/L. Jackson
ভয়াবহ বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে নেমেছে বিপর্যয়৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্রাটা অনেক বেশি৷ ভাইরাসটির প্রাদূর্ভব প্রথমে চীনে দেখা গেলেও চীন পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে৷ এশিয়া থেকে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়লে শুরুতে মৃত্যুর সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ইতালি, ঠিক পেছনেই ছিল স্পেন৷ কিন্তু এখন সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে সেখানে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
'মৃত্যুপুরী' নিউইয়র্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নিউইয়র্কের৷ গোটা দেশের মোট আক্রান্তের ৩৪ ভাগই নিউইয়র্কের৷ ফলে করোনায় মৃতদের জন্য এখন আর কবর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ গণকবর দেয়া শুরু করতে হয়েছে বাধ্য হয়ে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কেন এই গণকবর
যে হারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যু হচ্ছে, সেই হারে আলাদাভাবে সবাইকে কবর দেয়ার জায়গা এবং এত বড় কর্মযজ্ঞে শরিক হওয়ার মতো লোকবলের অভাব রয়েছে৷ তাই বহু মানুষকে কবর দেয়া হচ্ছে একসঙ্গে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কোথায় এই গণকবর?
মৃত্যুহার খুব দ্রুত কমাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রে কত জায়গায় গণকবরের ব্যবস্থা করতে হবে তা এখন বলা মুশকিল৷ তবে নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ডের অন্তত একটি গণকবরের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
কবর খোঁড়ার ধুম
ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, হার্ট আইল্যান্ডে করোনা ভাইরাসে মৃতদের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে পুরোদমে৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
শেষ বিদায়ে 'একা'
মৃতদের হাসপাতাল থেকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গণকবরে৷ সংক্রমণ এড়াতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের অনুপস্থিতিতেই দেয়া হচ্ছে কবর৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
সারি সারি কবর, থরে থরে কবর
লম্বা লাইনে অনেক মৃতদেহ পাশাপাশি কবর দিয়েও চলছে না, হাট আইল্যান্ডে কয়েক স্তরে কবর দেয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের৷