1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় সংক্রমণ বাড়ছে, শঙ্কাও বাড়ছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশে করোনা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক ও অজস্র প্রশ্ন। দেশে প্রথম একজন মারা যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ছবি: DW/M. Rashed

বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচরকে লকডাউন করা হয়েছে। আরো কিছু এলাকা লকডাউন হতে পারে। আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। বিদেশ থেকে আসা সবার কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে

আরো যত প্রস্তুতি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য টঙ্গি ইজতেমা মাঠকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেনা সদর দপ্তর বলছে তারা আশকোনা হজ ক্যাম্প এবং দিয়াবাড়ি কাম্পে কাজ করবেন। আর বাইরে থেকে বিমানবন্দরে আসার পরই সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে যাত্রীদের কোয়ারান্টিন ক্যাম্পে নেয়া হবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ছয়টি হাসপাতাল। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘করোনা ঠেকানোর প্রকৃষ্ট উপায় পুরো লকডাউন৷''

ছুটি বাতিল

করোনার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে দেশের সব বার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

হোম কোয়ারান্টিনে ৯ হাজার

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। বৃহস্পতিবার নতুন করে আরো তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। আইইডিসিআর বৃহস্পতিবারের ব্রিফিং-এ  জানায়, এ পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ৭৭ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯৩ জন। আর সারাদেশে হোম কোয়রেন্টাইনে আছেন ৯ হাজার ১৩ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫ জন।

এ পর্যন্ত করোনার ৩৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। তার মধ্যে করোনা পজিটিভ ১৭ জন। তবে এ পর্যন্ত মোট ‘কল' এসেছে দুই লাখ ৬০ হাজার। আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ৪৪ হাজারেরও বেশি কল এসেছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন তারা সহায়তা পাচ্ছেন না।

ডা. জাহিদুর রহমান খান

This browser does not support the audio element.

করোনা টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন

পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলা হলেও প্রশ্ন উঠছে, করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা মোকাবেলা করতে পারবে তো বাংলাদেশ? করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি?

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার  ল্যাবরেটরি কিট আছে এক হাজার ৭৩২টি। ল্যাবরেটরি মাত্র একটি। আর দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। এখনো র‌্যাপিড টেস্টিং কিট নাই। তবে স্বাস্থ্য মহপারিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন আরো দুই হাজার ল্যাবরেটরি টেস্টিং কিট আনা হয়েছে। চীন বাংলাদেশকে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। এরইমধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের উদ্ভাবিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে।

একটি মাত্র টেস্টিং ল্যাব!

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান খান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে করোনার  টেষ্টিং ল্যাব মাত্র একটি। কিন্তু কাজ হচ্ছে মাত্র রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাইনস্টিটিউট-এর (আইইডিসিআর) ল্যাবে। এটা মোটেই যথেষ্ট নয়। এখন ধরা পড়ছে না বলে বোঝা যাচ্ছে  না। আর পরীক্ষার সুযোগ না থাকলে ধরা পড়বে কিভাবে? আমরা পরীক্ষা করছি না বলে ধরা পড়ছেনা।''

তিনি বলেন, ‘‘টেষ্টিং ল্যাবরেটরির প্রস্তুতি আমাদের আগেই করা উচিত ছিল। সরকার বিভাগীয় শহরে টেস্টের যে কথা বলছে সেটা আসলে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ এনেই পরীক্ষা করা হবে। কোরিয়ায় ৯৬টি ল্যাব। আমাদের যে সেটআপ আছে, তাতে ৪-৫টি ল্যাব করা সম্ভব। কিন্তু আইইডিসিআর সেটা করছে না। কেন করছেনা তারাই জানেন।''

তিনি আরো বলেন, ‘‘কাজেরও কোনো সমন্বয় নেই। আইইডিসিআর এক কথা বলে আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা আরেক কথা বলে।''

ডা. এএসএম আলমগীর

This browser does not support the audio element.

সবাইকে টেস্টের সুযোগ দেয়া ক্ষতিকর?

ল্যাবরেটরি টেস্ট এবং র‌্যাপিড টেস্ট- করোনা পরীক্ষার এই দুই ধরনের টেস্টের প্রক্রিয়া ভিন্ন। র‌্যাপিড টেস্ট তাৎক্ষণিক। তবে বাংলাদেশে র‌্যাপিড টেস্ট এখনো শুরু হয়নি। তবে আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘‘সারা বিশ্বেই র‌্যাপিড টেস্টের ওপর নির্ভরতা নেই। উচ্চ মাত্রায় ভুল রিডিং দেয়। ফলে যারা করোনা সংক্রমণ আছে তাদেরও সুস্থ দেখায়। যার সংক্রমণ নাই তাকে সংক্রমিত দেখায়। তাই আমরা ল্যাবরেটরি টেস্টের ওপরই নির্ভর করি।''

তিনি স্বীকার করেন এখন একটি ল্যাবেই করোনা টেস্ট হচ্ছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আগ পর্যন্ত পৃথিবীর সবদেশেই সীমিত সংখ্যক ল্যাবরেটরিতেই করোনা টেস্ট করা হয়। কারণ, রেগীকে কন্টাক্ট-এ রেখে এই টেস্ট করতে হয়। বেশ সময় লাগে। তাকে আইসোলেটেড করতে হয়। ১৪ দিন ধরে এটা করতে হয়। তা না করলে রোগী হারিয়ে যায়। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়।''

তিনি বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তারা বিদেশ থেকে এসেছেন অথবা তাদের পরিবারের সদস্য। আমরা যদি এই টেস্ট প্রাইভেট সেক্টর বা অনিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানকে করতে দিই তারা নিয়ম মেনে করতে পারবে না। ফলে এটা ছড়িয়ে পড়বে। এ কারণেই এককভাবে আইইডিসিআর করছে।''

তিনি বলেন, ‘‘কিটের স্বল্পতা নাই। আমাদের পাইপলাইনে আছে। আর কাকে পরীক্ষা করতে হবে তা আমরা লক্ষণ দেখে সিদ্ধান্ত নিই। আমরা আরো ৪-৫টি ল্যাব প্রস্তুত করছি। প্রয়োজনে আমাদের নিয়ন্ত্রণে তা কাজে লাগাবো।''

ডা. জাহিদুর রহমান খানও বলেন, ‘‘দুই-তিন হজার কিট মজুদ থাকাই যথেষ্ট। কারণ, এগুলো সবসময়ই আরো পাইপ লাইনে থাকে।''

র‌্যাপিড টেস্ট কিট আসছে

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিকভাবে এক লাখ র‌্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরি করবেন।  প্রতিটি কিটের দাম পড়বে ২০০ টাকা। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা সেগুলো বাজারে দিতে পারবেন। উৎপাদনের অনুমতি পেলেও এখনো বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়নি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘ওটা কোনো সমস্যা নয়। বিক্রির অনুমতি পাওয়া যাবে।'' তার মতে, করোনা টেস্টিং আরো বিস্তৃত হওয়া দরকার। তা না হলে অনেকে করোনা আক্রান্ত হলেও তা জানা যাবে না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ