করোনায় আরও ৯৮ জন মারা গেলেন৷ নতুন করে আক্রান্ত হলেন ১৮৬৮ জন৷ অবশ্য চীনের দাবি, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনায় কিছুটা লাগাম টানা কি সম্ভব হয়েছে? অন্তত চীন দাবি করছে, হয়েছে৷ কারণ, দৈনিক মৃতের সংখ্যা একশর থেকে কম হয়েছে। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও কমেছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৬৮ জন। মারা গিযেছেন ৯৮ জন৷ জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এক দিনে নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে কম সংখ্যা বলে দাবি করেছে চীন৷ তবে এখনও মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি৷
উহানে উচাং হাসপাতালের প্রধান লিউ ঝিমিং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন৷ উহানের এই হাসপাতালেই প্রচুর করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা হয়েছে এবং হচ্ছে। বেজিংয়ের সংবাদমাধ্যম কেইক্সিনয়ের একটি খবর এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের রিপোর্ট বলছে, চীনে অন্তত ৩০০০ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত৷ সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে, ১৭১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ ফলে উহানে এখন চিকিৎসক ও নার্সের সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের মেডিকেল তথ্য বিচার করে জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত ৮০ ভাগের ক্ষেত্রে সামান্য উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন৷ ১৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে এবং তারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন৷ ৫ শতাংশের অবস্থা সঙ্কটজনক এবং আক্রান্তের মধ্যে ২ শতাংশ মারা যাচ্ছেন৷
অন্যদিকে জাপান উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা প্রমোদতরি ডায়মন্ড প্রিন্সেস-এর আরও পাঁচ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে৷ তাঁরা সকলেই ফিলিপাইন্সের নাগরিক৷ জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরের কাছে রাখা এই প্রমোদতরির কর্মী ও যাত্রী মিলিয়ে ৩৫ জন ফিলিপাইন্সের লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে ডায়মন্ড প্রিন্সেস-এর ৪৩৫ জন যাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সোমবার অ্যামেরিকা ওই প্রমোদতরি থেকে কয়েকশ যাত্রীকে উড়িযে নিয়ে চলে গিয়েছে৷ ডায়মন্ড প্রিন্সেসে থাকা বেশ কিছু অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকও অধৈর্য হয়ে পড়েছেন৷ তাদের অস্ট্রেলিয়া নিয়ে আসার জন্য বিমান পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও কানাডাও একইরকমভাবে তাঁদের দেশের নাগরিকদের দেশে ফেরাচ্ছে৷
বাজারেও করোনার আঘাত
করোনা ভাইরাসের প্রভাব স্বাস্থ্য থেকে এসে পড়েছে বাজারেও৷ কীভাবে সামলাচ্ছে তারা করোনার দাপট, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: VLADIMIR MARKOV via REUTERS
বাড়ছে প্রতিরোধক বিক্রি
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মতোই দ্রুতগতিতে বাড়ছে জীবাণুর ভয়৷ সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা ধরনের জীবাণু-প্রতিরোধকের চাহিদা৷ কেমিক্যাল সংস্থাগুলির বিভিন্ন পণ্যের বিক্রিও বাড়ছে৷ কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ চীনের সীমান্তে আটকা থাকার ফলে নতুন মাল পৌঁছতে পারছে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রেস্টুরেন্টে ভাঁটা
কেএফসি, পিৎজা হাট বা ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফাস্ট ফুড চেনগুলির রমরমা করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মতো নেই৷ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এই সব দোকান৷ অনলাইনে বিক্রিও বন্ধ৷ অন্যান্য অনলাইন খাবার অর্ডার করার অ্যাপও এখন আর চীনে খাবার সরবরাহ করছে না৷
ছবি: picture-alliancedpa/imaginechina/Y. Xuan
খেলার সামগ্রীতেও করোনার প্রভাব
বিশ্বখ্যাত খেলার সামগ্রীর ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস ও নাইকি সাময়িকভাবে চীনে তাদের বেশির ভাগ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, যেসব দোকানে নাইকি বা অ্যাডিডাসের পণ্য বিক্রি হয়, সেখানেও চলছে কড়া নজরদারি, যাতে করে বিক্রি না হওয়া পণ্যের মাধ্যমে জীবাণু আরো না ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer/Imaginechina
বিপদের ঝুঁকিতে গাড়িপ্রস্তুতকারীরা
জার্মান গাড়ি শিল্পের উপর এই ভাইরাসের ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে, মনে করছেন গাড়ি শিল্প বিশেষজ্ঞ ফার্ডিনান্ড ডুটেনহ্যোফার৷ বিখ্যাত গাড়িপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেনের মোট ৩৩টি কারখ্না রয়েছে চীনে, যার মধ্যে বেশ কটি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে৷ গাড়ি প্রস্তুতের কাজে বাধা আসলেও ডেলিভারির কাজ ঠিকই চলছে এখনও৷
ছবি: Imago Images/Xinhua
সাবধানী হন্ডা
করোনা ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহান অঞ্চলে জাপানি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা হন্ডার তিনটি কারখানা আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে৷ এখনও যদিও স্পষ্ট নয় যে কবে থেকে কাজ আবার শুরু হবে, কিন্তু তবুও সাবধানে ফাঁকি রাখতে চান না হন্ডা কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাহিদামত পণ্য নেই বাজারে
বর্তমান বিশ্বে এক দেশের বাজারের সাথে আরেক দেশের শিল্প খুব গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট থাকায় হ্যুনডাই বা হন্ডার মতো সংস্থার প্রস্তুত বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বাজারেও৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় এই সপ্তাহেও বন্ধ থাকবে হ্যুনডাই গাড়ির প্রস্তুতের কাজ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই ধারা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে৷
ছবি: Reuters/Aly Song
ফ্রাংকফুর্টেও করোনার প্রভাব
চীনের সাথে একাধিক দেশ ইতিমধ্যে বন্ধ করেছে বিমান পরিষেবা৷ এই বন্ধের ফলে বহু ব্যবসায়ী প্রাংকফুর্টের বিখ্যাত ‘আম্বিয়েন্টে’ শিল্পমেলায় তাদের পসরা নিয়ে আসতে পরেননি৷ যদিও জার্মানির সাথে উহানের কোনো সরাসরি বিমান ব্যবস্থা নেই, তবুও সাবধান থাকতে এয়ারপোর্টে বিশেষ আইসোলেশন ইউনিট (চীনফেরত যাত্রীদের জন্য বিচ্ছিন্ন বলয়) রাখা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Schreiber
7 ছবি1 | 7
প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করার জন্য কোনও ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি। তবে পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে জাপান জানিয়েছে, তারা এইচআইভির মোকাবিলায় ব্যবহার করা একটি ওষুধ দিয়ে করোনা থামানো যায় কি না, তার পরীক্ষা করে দেখবে৷ চীনের চিকিৎসকরা আবার প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা আটকাতে চাইছেন৷ তাঁদের দাবি, খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে৷
চীনে মাস্ক পেতে অসুবিধা হচ্ছিল৷ ছয় দিনের মধ্যে তারা মাস্ক বানাবার কারখানা তৈরি করছে৷ শনিবার এই কারখানা তৈরির কাজ শেষ হবে। তারপর তারা প্রতিদিন আড়াই লক্ষ মাস্ক তৈরি করবে৷