কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ায় অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে তাদের ‘নোয়াখালীর ভাসানচর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতে পারে ভেবে’ দুই রোহিঙ্গা আইসোলেশন সেন্টার থেকে পালিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের তিনদিন পরই সংক্রমণ ঠেকাতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি৷ সংক্রমণ ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে; গত মঙ্গলবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ক্যাম্পে প্রথম এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়৷
তারপর কোভিড-১৯ আক্রান্ত অন্তত দুই রোহিঙ্গাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা৷
বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আছে৷ তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের সময় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা গাদাগাদি করে থাকে৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এক কথায় অসম্ভব৷
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ কতটা?
03:47
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৯ রোহিঙ্গা করোনা পজিটিভ হয়েছেন৷ এছাড়া আরো প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পের ভেতর কোয়ারান্টাইন জোনে আলাদা করে রাখা হয়েছে৷ ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত কতজনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
স্থানীয় একজন জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত দুই রোহিঙ্গা 'হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগ থেকে পালিয়েছেন৷
গত দুই দিনে মাত্র ২০ জন রোহিঙ্গাকে নমুনা পরীক্ষা করাতে রাজি করানো গেছে৷ তাদের ভয়, করোনা পজিটিভ হলে তাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ আমরা তাদের বলেছি তাদের কোথাও পাঠানো হবে না৷ তারপরও তাদের আতঙ্ক যাচ্ছে না৷’’
রোহিঙ্গা নেতা আবু জামান বলেন, ‘‘ভাসানচর নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ এজন্য তারা টেস্ট করাতে যেতে ভয় পাচ্ছে৷’’
নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ক্যাম্প নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সরকার৷ ওই ক্যাম্পে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে৷ কিন্তু মূল ভূখণ্ড থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ওই চরে যেতে রাজি না রোহিঙ্গারা৷ সম্প্রতি সমুদ্রে ভাসমান রোহিঙ্গাদের দুইটি দলের ৩০৬ জনকে ভাসানচরে রাখা হয়েছে৷
এদিকে, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আইসোলেশনে রাখার জন্য ক্যাম্পে প্রায় ৫০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা করা হয়েছে, যদিও সেগুলোর বেশির ভাগই খালি পড়ে আছে৷ ক্যাম্পে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করা হলেও রোহিঙ্গারা তাতে অংশ নিতে রাজি হচ্ছে না বলে জানান 'ওয়ান ক্যাম্প ব্লক' এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান খান৷
মোহাম্মদ শাফি নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘‘আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি চিকিৎসা নিলে এই রোগ ভালো হয়ে যায়৷ কিন্তু তারা আমার কথা বিশ্বাস করছে না৷’’
এসএনএল/ এসিবি (এএফপি)
গত বছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘর দেখুন...
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷