করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে৷ সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস বিক্রিতে৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মুরগি নিয়ে আশঙ্কা অমূলক৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব কাঁপছে ভাইরাসের ভয়ে৷ চীন বা ইতালিতে যে মৃত্যু ও ত্রাস ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস, তার আঁচ এসে পড়েছে সাগরপারে৷ ভারতসহ উপমহাদেশে এখন ব্যাপক আতঙ্ক৷ বৃহস্পতিবার ভারতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে৷ কর্নাটকে মারা গেয়েছেন এক বৃদ্ধ৷ তবে তার অনেক আগে থেকেই রাজ্যে রাজ্যে আতঙ্কের গ্রাফ ক্রমশ উপর দিকে উঠেছে৷ পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়৷ রাস্তাঘাটে সস্তা থেকে দামি, নানা ধরনের মাস্ক পড়ে মানুষ ঘুরছে৷ ফোন করলেই শোনা যাচ্ছে ভাইরাস সম্পর্কিত সতর্কবাণী৷ সংবাদমাধ্যম ভরে আছে এই সংক্রান্ত খবরে৷ স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, তথা বাজারে৷
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস বিক্রিতে৷ বিদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব রটে যায়, মুরগির মাংস থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ এর জেরে এই মাংস খাওয়া বন্ধ রেখেছে অনেক মানুষ৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে জেলা শহরগুলিতে এই মাংসের ক্রেতা নেই বললেই চলে৷ দোকানে দোকানে চেনা ভিড় উধাও৷ আতঙ্ক এতটাই প্রবল যে, গত একমাসে মুরগির বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে৷ বিক্রি না হওয়ায় দামও কমেছে অর্ধেক৷ সাধারণভাবে স্থানভেদে যে মাংস প্রতি কেজি ১৫০ টাকার আশেপাশে বিক্রি হয়, তা কোনো কোনো এলাকায় ৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে৷ তবু ক্রেতা নেই৷ এর ফলে অনেক মুরগি ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন৷ প্রবল ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পোল্ট্রি শিল্প, যদিও পাঁঠার মাংসের বিক্রিতে এর প্রভাব পড়েনি৷ দোল উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বেড়েছে এই মাংসের দাম৷
অর্ধেক সিদ্ধ মাছ বা মাংস খেলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে: শিবকিঙ্কর দাস
মাছের বাজারও এই গুজব থেকে রেহাই পায়নি৷ তবে সৌভাগ্যের বিষয় হলো, এক্ষেত্রে নিশানা শুধুমাত্র তেলাপিয়া মাছে৷ মাংসের মতোই এই মাছের সঙ্গে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের যোগ আবিষ্কার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হয়েছে৷ এই মাছেও নাকি করোনাভাইরাসের বীজ রয়েছে৷ এর ফলে তেলাপিয়া মাছ ব্রাত্য হয়ে উঠেছে৷ যদিও অন্য কোনো মাছের ক্ষেত্রে এই অপপ্রচার না থাকায় মৎস্যপ্রিয় বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে ছেদ পড়েনি৷
পোল্ট্রি শিল্প সঙ্কটের মুখে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, নির্ভয়ে মুরগির মাংস খান৷ এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ যদিও এই প্রচারের সুফল এখনও দেখা যাচ্ছে না৷ সরকারের মতো একই সুরে প্রাণিবিজ্ঞানীরাও বলছেন, মাংস বা মাছ থেকে এই রোগের শিকার হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷ মৎস্য বিশেষজ্ঞ শিবকিঙ্কর দাসের বক্তব্য, করোনাভাইরাসপ্রথম চিহ্নিত হয়েছিল একটি মাছের বাজার থেকে৷ সেখানে গিয়েছিল এমন মানুষদের মধ্যে প্রথম এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ যে সব রোগ প্রাণী থেকে মানুষের দেহে আসে, সেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার অনুকূল পরিবেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলিতে রয়েছে৷ এখানে একইসঙ্গে জীবন্ত ও মৃত মাছ এবং পশু-পাখির মাংস বিক্রি হয়৷ ভারত, বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে এটা দেখা যায়৷ মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে বলে তেলাপিয়াকে নিয়ে গুজবও ছড়িয়েছে৷' অধ্যাপক দাসের পরামর্শ, ‘নির্ভয়ে তেলাপিয়াসহ অন্যান্য মাছ-মাংস খান৷ শুধু রান্নার প্রক্রিয়াটি যেন সঠিক হয়৷ রান্নার আগে ঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ বা মাংস খেলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে৷’’
প্রোটিনের অভাবে শুধু করোনা ভাইরাস নয়, যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে: ডা.সিদ্ধার্থ জোয়ারদার
মুরগির মাংস নিয়ে অভয় দিচ্ছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও৷ তিনি আবার বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ অধ্যাপক জোয়ারদারের বক্তব্য, ‘‘শরীরের দরকার প্রাণিজ প্রোটিন৷ সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায় মুরগির মাংস ও ডিম থেকে৷ মাংস না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হবে৷ তাতে করোনাভাইরাস শুধু নয়, মানবদেহে অন্য যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তাই পর্যাপ্ত প্রোটিন খেতে হবে৷'' এ ধরনের পরামর্শের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে৷ কিন্তু, তাতে মুরগির মাংসে বাঙালির রুচি ফেরানো যাচ্ছে না৷ ক্রমশ বাড়ছে শাকাহারের প্রবণতা৷
করোনায় কাবু সরকার প্রধানরা
বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তিই করোনার কাছে হেরে গেছেন৷ এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে৷ সবশেষ এই দলে যোগ দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
ছবি: Olivier Matthys/AP Photo/picture alliance
সোফি গ্রেগরি ট্রুডো
গত মার্চে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো৷ এরপর ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো নিজেও৷ তবে তিনি বা তিন সন্তানের কেউ করোনা সংক্রমিত হননি৷
ছবি: Reuters/P. Doyle
প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট
মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি৷ মার্চে তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/D. Van Tine
বরিস জনসন
শুরুতে করোনাকে পাত্তা না দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ প্রধান বিশ্ব নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এপ্রিলের শুরুতে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়৷
ছবি: Photoshot/picture-alliance
মিখাইল মিশোস্টেন
এপ্রিলের শেষে করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশোস্টেন৷ ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে৷ তার অবর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আন্দ্রেই বেলোসোভ৷
ছবি: Reuters/Sputnik/E. Shtukina
নুনো গোমেজ নাবিয়াম
এপ্রিলেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন গিনি-বিসাউ এর প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমেজ নাবিয়াম৷ তার মন্ত্রীসভার তিন সদস্যেরও কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল সেসময়৷
ছবি: DW/B. Darame
হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ
জুনে নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ৷ পরবর্তীতে করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়৷ করোনার টিকায় বিশ্বের সবার সমান অধিকার নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: AFP/O. Sierra
নিকোল পাশেনিয়ান
পুরো পরিবারসহ জুনে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশেনিয়ান৷ তবে আক্রান্তের খবর প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন বলে ফেসবুকে ঘোষণা দেন তিনি ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Druzhinin
জেইর বলসোনারো
শুরুর দিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো করোনা সংকটকে ‘উদ্ভট কল্পনা’ এবং সাধারণ ফ্লু হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ পরবর্তীতে দেশটি মারাত্মকভাবে করোনা আক্রান্ত হয়৷ জুলাইতে এসে বলসোনারো নিজেই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন৷
ছবি: Youtube/TV BrasilGov
আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো
করোনা প্রতিরোধে যেসব দেশের সরকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার একটি বেলারুশ৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো করোনা মহামারিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন৷ করোনা প্রতিরোধে ভদকা পানেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি৷ জুলাইর শেষ দিকে নিজে করোনা আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেন লুকাশেঙ্কো৷ জানান, কোভিড পজিটিভ হলেও তার তেমন কোন লক্ষণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/V. Listsyn
আলেখান্দো গিয়ামাত্তে
সেপ্টেম্বরে গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেখান্দো গিয়ামাত্তের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়৷ এরপর গোটা মন্ত্রীসভার সদস্যদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন তিনি৷ যার মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রীরও করোনা ধরা পড়ে৷
ছবি: Johan Ordonez/AFP
ডনাল্ড ট্রাম্প
দুই অক্টোবর নিজের ও ফাস্ট লেডি মেলানিয়ার করোনা পজেটিভের খবর দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে৷ শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের হুমকিকে খাটো করে দেখানোর জন্য সমালোচিত হয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Carlos Barria/Reuters
এমানুয়েল মাক্রোঁ
১৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ তার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ খবর নিশ্চিত করা হয়৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, মাক্রোঁ সাত দিনের আইসোলেশনে রয়েছেন৷ তার বেশ কিছু বিদেশ সফর ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে৷ লেবানন সফরও রয়েছে বাতিল হয়ে যাওয়া সফরের তালিকায়৷