করোনার ভাইরাস কোথা থেকে এলো, তা জানতে আবার বিজ্ঞানীদের দল গঠন করলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনকে যাবতীয় তথ্য দেয়ার অনুরোধ।
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাস কীভাবে এলো তা নিয়ে এতদিন ধরে কম আলোচনা হয়নি। নানা ধরনের তত্ত্ব বাজারে এসেছে। কেউ বলেছেন চীনের উহানে কাঁচা মাংসের বাজার থেকে, কেউ বলেছেন বাদুর থেকে, আবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকে অভিযোগ করেছেন, চীনের গবেষণাগার থেকে এই ভাইরাসেরউৎপত্তি। চীন এই দাবি বারবার অস্বীকার করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে বিজ্ঞানীদের একটি দল গঠন করেছিল। তারা চীনে গেছিল। কিন্তু তারাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে হলো। তারা চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সম্ভবত বাদুর থেকেই এই ভাইরাস এসেছে। তবে এনিয়ে আরো গবেষণা দরকার। অ্যামেরিকাও বিশেষজ্ঞদের দল গঠন করেছিল একই লক্ষ্য নিয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আবার ২৬ জন বিজ্ঞানীর একটি দল গঠন করেছে, যারা করোনা ভাইরাস কীভাবে, কোথা থেকে এলো, তা জানার চেষ্টা করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার উৎপত্তি জানার এটাই শেষ সুযোগ। তারা চীনকে প্রথম থেকে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য আবেদন জানিয়েছে।
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress/Z. Maulana
6 ছবি1 | 6
শেষ সুযোগ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মারিয়া কারখভ বলেছেন, আরো ডজন তিনেক সমীক্ষা চালাতে হতে পারে। উহানে যারা প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাটাও খুব জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জার্নালে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে করোনার প্রথম ঘটনা নজরে আসে। মারিয়া বলেছেন, ''সেই সময় রক্ত পরীক্ষার স্যাম্পেল, প্রথম দিকের রোগীদের সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখাটাও জরুরি। তার মতে, এটাই আমাদের করোনার উৎস খোঁজার ক্ষেত্রে সব চেয়ে ভালো সুযোগ এবহং সম্ভবত শেষ সুযোগ।''
করোনার কারণে চুমু, হাত মেলানো বন্ধ!
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে৷ এর বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ সম্ভাষণে পরিবর্তন আনতে তাদের নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Captital Pictures/P. Loftus
চীন
হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে নিজের দুই হাত একসঙ্গে জড়ো করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া চীনে হ্যালো বলার যে ঐতিহ্যবাহী উপায় ‘গং শৌ’- এক হাতের তালুতে অন্য হাতের মুঠা দিয়ে আঘাত করা (ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে)- সেটি নিয়মিত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Captital Pictures/P. Loftus
ফ্রান্স
ফরাসিরা সাধারণত গালে চুমু খেয়ে সম্ভাষণ জানান৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের যুগে সেটি এড়িয়ে চলতে সংবাদপত্রে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে৷ এর পরিবর্তে মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে সম্ভাষণ জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ ফিলিপ লিশটফুস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ব্রাজিল
ক্যাফেনসমৃদ্ধ পানীয় ‘মাটে’ সাধারণত মেটাল স্ট্র (ছবি) দিয়ে পান করা হয়৷ ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাগরিকদের এই স্ট্র শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়েছে৷ এছাড়া সম্ভাষণ হিসেবে চুমু না খাওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Felipe Dana
জার্মানি
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়েছিলেন৷ কিন্তু সেহোফার তাঁর হাত না বাড়িয়ে ম্যার্কেলের সঙ্গে শুধু হাসি বিনিময় করেছেন৷ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ম্যার্কেলও তাঁর হাত শূন্যে তুলে আসনে বসে পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Hosbas
স্পেন
সামনেই ইস্টার৷ সেই সময় ভার্জিন মেরির ভাস্কর্যে চুমু খাওয়া স্পেনের একটি এতিহ্য৷ তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সেটি নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফার্নান্দো সিমোন৷
ছবি: Imago/Agencia EFE
রোমানিয়া
বসন্তের শুরুতে মার্জিসর উৎসবে মেতে ওঠেন রোমানিয়ার নাগরিকরা৷ এই সময় সাধারণত ছেলেরা মেয়েদের ফুল ও তাবিজ দিয়ে থাকেন, সঙ্গে একটি চুমু৷ কিন্তু এবার সরকারের পক্ষ থেকে শুধু ফুল আর তাবিজই দিতে বলা হয়েছিল, চুমু নয়!
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
সম্প্রতি দেশটিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে৷ এতে দুই বন্ধুকে মাস্ক পরে পরস্পরের পায়ে পা লাগিয়ে সম্ভাষণ জানাতে দেখা যাচ্ছে৷ লেবাননের আরেক ভিডিওতেও সংগীত শিল্পী রাঘেব আলামাকে কমেডিয়ান মিশেল আবুর সঙ্গে একইভাবে সম্ভাষণ করতে দেখা গেছে৷ সেই সঙ্গে তাঁরা মুখে চুমুর শব্দ করেছেন৷
ছবি: AFP/A. Kenare
নিউজিল্যান্ড
ওয়েলিংটন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সম্প্রতি নতুন শিক্ষার্থীদের সম্ভাষণের সময় মাওরি নিয়ম (নাকের সঙ্গে নাক ঘষা) পরিহার করতে স্টাফদের পরামর্শ দিয়েছে৷ এর পরিবর্তে মাওরি গান গাইতে বলা হয়েছে৷ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এমন পদক্ষেপ নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/L. M. Williams/
অস্ট্রেলিয়া
নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্র্যাড হ্যাজার্ড হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে হাতের পেছনে মৃদু আঘাত করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ সেই সঙ্গে চুমু খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি৷
ছবি: Stuart Franklin/Getty Images
সংযুক্ত আরব আমিরাত
কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের নাগরিকদের ‘নাকে নাক’ লাগিয়ে সম্ভাষণ না করার পরামর্শ দিয়েছে৷ এছাড়া হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে ‘হাত নাড়িয়ে’ সম্ভাষণ করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ali Haider
10 ছবি1 | 10
চীনের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘে চীনের দূত চেন শু বলেছেন, এর আগে দুই বার চীনে দল পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একটি যৌথ রিপোর্টও দেয়া হয়েছে। আর কোনো দলের চীনে যাওয়ার দরকার নেই। বরং অন্য দেশে দল পাঠাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তার মতে, কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যেন দল গঠন করা না হয়। বিজ্ঞানের স্বার্থে, বিজ্ঞানের জন্য যেন দল গঠন করা হয়।