করোনা ভাইরাসকে বিশ্বের এক নম্বর শত্রু বলে দাবি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ দিনে চীনে ভাইরাসের প্রভাবে মৃত্যু ছাড়াল ১১০০।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সব চেয়ে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হোক করোনা ভাইরাসকে। বিবৃতি প্রকাশ করে জানালেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান । দাবি করলেন, ''গুরুত্ব না দিলে এই ভাইরাসের প্রভাব সব চেয়ে বড় জঙ্গি হামলার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।'' এ দিকে চীনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বুধবার পর্যন্ত সে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১১১৩ জনের। শুধু হুবেইতেই মৃত্যু হয়েছে আরও ৯৪ জনের।
একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ যে মহামারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি মহামারি ঘটেছে৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক মহামারিগুলি জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Imago/W. Quanchao
প্লেগ
একুশ শতকেও ফিরে এসেছে প্লেগ রোগ৷ ২০১৭ সালে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে প্লেগে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪১৭জন৷ প্রাণ হারান ২০৯জন৷ শুধু তাই নয়, মাদাগাস্কারে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও জারি হয় বিশেষ সতর্কতা৷ মোট নয়টি দেশে প্লেগ মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
২০১৫ সালে ব্রাজিলে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ছড়ায় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাস৷ সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এই সংক্রমণ৷ ব্রাজিল ছাড়া আরো ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি৷ মারা যান ১৩৭ জন৷
ছবি: Reuters/J.-C. Ulate
ইবোলা
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনিতে নতুন করে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস৷ এর আগে ১৯৭৬ সালে এই সংক্রমণ লক্ষ্য করা হলেও সেইবার তা একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত ছিল৷ কিন্তু একুশ শতকে এই সংক্রমণ আটকানো যায়নি৷ এই তিনটি দেশ ছাড়াও তিনটি মহাদেশের আরো ছয়টি দেশে পৌঁছে যায় ইবোলা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে৷ এই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম দুই মাস তা ধরা না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Wamenya
মেনিনজাইটিস
২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেনিনজাইটিস রোগে মারা যান ১৩৭জন৷ এর কারণ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অপর্যাপ্ত টিকার কথা৷ শুধু তাই নয়, পরিচিত সংক্রমণ কয়েক দশক পরপরই নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে, যা উন্নত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ধরা খুব কঠিন৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
চিকুনগুনিয়া
যে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ডেঙ্গ ছড়ায়, সেই একই মশার কামড়ে হতে পারে চিকুনগুনিয়া৷ মূলত শহরাঞ্চলে দেখা যাওয়া এই সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে৷ কিন্তু ২০০৭ সালে নতুন করে গাবনে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে৷ এরপর থেকে, আফ্রিকার পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে ধরা পড়ে৷ শুধু ২০১৬ সালেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন সাড়ে তিন লাখ মানুষ৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই রোগে প্রাণ হারান ১৩৭জন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মের্স)
২০১৩ সালের জুলাই মাসে পারব আমিরাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মের্স৷ তারপর থেকে সেই দেশে মোট ১২জন মারা গেলেও তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি৷ এখন পর্যন্ত, দুই হাজার ৫০৬টি কেস ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬২টিজন, জানাচ্ছে হু৷ মের্স ঠেকাতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি হু এর অন্যতম পরামর্শ হচ্ছে উটের দুধ বা মূত্র পান না করা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Kittiwongsakul
কলেরা, ইয়েলো ফিভার
হু জানাচ্ছে, বছরে অন্তত ৪০টি কলেরার ঘটনা ধরা পড়ছে গত দশ বছরে৷ কলেরা বা ইয়েলো ফিভারের মতো পুরোনো রোগ ঘুরেফিরে আসছে কারণ আক্রান্ত দেশগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০০৯ সালে একুশ শতকের প্রথম ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (এইচ১এন১) মহামারী ধরা পড়ে৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কলেরার কারণে মারা গেছেন ৩০৮জন, ইয়েলো ফিভারে ৫৭জন ও ইনফ্লুয়েনজায় ৫১জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
সার্স
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম৷ ২০০৩ সালে চীনে এই ভাইরাস দেখা যায়৷ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস৷ মোট ২৬টি দেশে ছড়ানো এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার জন৷ মূলত চীনে ছড়ানো এই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে চীনে যাওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে হু৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
করোনা ভাইরাস যে ক্রমশ ভয়াবহ চেহারা নেবে তার আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার সংগঠনের ডিরেক্টর জেনারেল বলেন, ''সময় হয়েছে এই ভাইরাসকে মানব সমাজের সব চেয়ে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার। এখনও যদি সমস্ত দেশ এই ভাইরাসকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়, তা হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।'' এ দিনের বক্তব্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন গেব্রেয়েসাস। তাঁর বক্তব্য, ''চীন অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাই এত দিন ধরে এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই চালাতে পারছে। লড়াই চালিয়েও মৃত্যু মিছিল আটকানো যাচ্ছে না। বিশ্বের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল দেশগুলিতে যদি কোনও ভাবে এই ভাইরাস পৌঁছে যায়, তা হলে ভয়াবহ সংকট হবে। মৃত্যুর হার কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ফলে এখনই এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হওয়া দরকার এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।''
এ দিকে চীনের অবস্থা এতটুকুও বদলায়নি। মঙ্গলবার সে দেশে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা হাজার পেরিয়েছিল। বুধবার তা আরও একশ বেড়ে গিয়েছে। হুবেইতেই আরও ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গোটা দেশে থেকে নতুন করে আরও হাজার দু'য়েক নতুন আক্রান্তের খবর মিলেছে। তবে চীনের সরকারি সংবাদসংস্থার দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
জাপানের উপকূলে দুই সপ্তাহ ধরে আটকে রাখা হয়েছে একটি প্রমোদতরি। যার ভিতরে বেশ কিছু যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মিলেছিল। বুধবার সেই প্রমোদতরির আরও ৩৯ জনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। সব মিলিয়ে শুধুমাত্র ওই জাহাজেই করোনায় আক্রান্ত হলেন ১৭৪ জন। সূত্র জানাচ্ছে, ওই জাহাজে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৭০০ জন রয়েছেন। যার মধ্যে কর্মী এবং পর্যটক মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন ভারতীয়। সোমবার তাঁদের অনেকে একটি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। যাতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের উদ্ধারের জন্য হাত জোড় করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তাঁরা আবেদন জানাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, যে ভাবে করোনা আক্রান্তদের নিয়ে জাহাজটি উপকূলে আটকে রাখা হয়েছে তাতে দ্রুত সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরেরও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে।
করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষার উপায়
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এ থেকে নিজেকে রক্ষার কিছু উপায়ের কথা থাকছে ছবিঘরে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের ভিত্তিতে পরামর্শগুলো দেয়া হলো৷
ছবি: Getty Images/X. Chu
কিছু না থাকার চেয়ে ভালো
ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এমন মাস্ক কার্যকর বলে প্রমাণিত না হলেও এগুলো অন্তত কিছু জীবাণু মুখ কিংবা নাকে যাওয়া ঠেকাতে পারে৷ এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মাস্ক পরা থাকলে মানুষের হাত যখন-তখন মুখ বা নাকে যায় না৷ আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে এমন মাস্ক অন্যদের আক্রমণ থেকে বাঁচাবে৷
ছবি: Getty Images/Stringer
হাত ধোয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে কিন্তু মাস্ক পরার কথা নেই৷ তাদের এক নম্বর পরামর্শটি হচ্ছে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া৷ সবচেয়ে ভালো হয় অ্যালকোহলসমৃদ্ধ তরল ব্যবহার করা, যেমনটা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
সাবান, পানি হলেও চলবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুলেও চলবে৷ তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন পুরো হাত ভালোভাবে ধোয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
সঠিকভাবে হাঁচি-কাশি দেয়া
ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করুন৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় ঠিক এভাবে মুখ আর নাক ঢাকতে হবে৷ তবে টিস্যুও ব্যবহার করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ব্যবহারের পর টিস্যুটি দূরে ফেলে দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে৷ তেমনিভাবে শার্ট আর সোয়েটারটিও ধুয়ে ফেলতে হবে৷
ছবি: Fotolia/Brenda Carson
দূরে থাকুন!
এই পরামর্শটি সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে৷ সেটি হচ্ছে, যার জ্বর ও কাশি আছে তার কাছ থেকে দূরে থাকুন৷ আপনার যদি অসুস্থ মানুষের সেবা করতে হয় তাহলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন৷
ছবি: picture alliance/empics
জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে যান, ঘুরতে নয়!
জ্বর, কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷ যেখানে জনসমাগম বেশি সেসব জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
অর্ধসিদ্ধ নয়!
মাংস খুব ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধসিদ্ধ হলে চলবে না৷ কাচা মাংস, দুধ কিংবা প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে নড়াচড়া করতে হবে যেন সেগুলো রান্না হয়নি এমন খাবারের সংস্পর্শে আসতে না পারে৷